ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানিতে সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়নি চামড়া কেনেননি মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা চট্টগ্রামে রাস্তায় নিক্ষেপ রাজশাহীতে ফেলে দেয়া হয় নদীতে

চামড়ার বাজারে ধস ॥ প্রধান চার কারণ চিহ্নিত

প্রকাশিত: ২২:১৬, ৫ আগস্ট ২০২০

চামড়ার বাজারে ধস ॥ প্রধান চার কারণ চিহ্নিত

এম শাহজাহান ॥ সারাদেশে কোরবানির চামড়া বেচাকেনায় ধস নেমেছে। সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর না হওয়ায় পানির দরে বিক্রি হয়েছে কোরবানির চামড়া। নির্ধারিত দাম না পেয়ে রাজশাহীতে পদ্মা নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে ছাগল ও গরুর চামড়া। সঠিক দাম নিশ্চিত না হওয়ায় বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে ১৫ হাজার পিস চামড়া ডাম্পিং করা হয়েছে। চরম নৈরাজ্যের মুখে পড়েছে কোরবানিকেন্দ্রিক চামড়া বাণিজ্য। চামড়ার বাজারে এমন নৈরাজ্যের পেছনে প্রধান চারটি কারণ চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হচ্ছে, চামড়া থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মুখ ফিরিয়ে নেয়া, করোনার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম হ্রাস, ট্যানারি মালিকদের অর্থ সঙ্কটের অজুহাত এবং সমন্বয়হীনতা। এ ছাড়া কোরবানির দুইদিন আগে কাঁচা চামড়া রফতানির ঘোষণা দেয়া হলেও ওই সময়ের মধ্যে চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিতে পারেনি কেউ। ট্যানারি মালিক ও আড়তদার ব্যবসায়ীদের বাইরে কারও কাছে চামড়া বেচার সুযোগ পায়নি কেউ। এতে করে কোরবানির চামড়ার দাম আরও কমে যায়। জানা গেছে, গতবারের বিরূপ অভিজ্ঞতায় এবার করোনা মহামারীর মধ্যে চাহিদা কম থাকবে এমন আশঙ্কা ছিল মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। আর এ কারণে কোরবানির দিন পাড়া মহল্লায় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দেখা যায়নি। পোস্তার আড়তদার ও সাভারের ট্যানারি মালিকরা দাবি করেছেন, সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। অন্যদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, লবণযুক্ত চামড়া নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় প্রতিটি ভালমানের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে আকারভেদে মাত্র ১৫০-৬০০ টাকায়। ঢাকার বাইরে ৫০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে প্রতিপিস চামড়া। এছাড়া ছাগলের চামড়া ২-১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ সরকার নির্ধারিত মূল্য কার্যকর হলে প্রতিপিস গরুর চামড়া ১২০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি হওয়া উচিত ছিল। এদিকে, কোরবানির দিন ঢাকায় ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দেখা যায়নি। সাধারণত তিনহাত ঘুরে আড়ত ও ট্যানারি মালিকরা চামড়া পেয়ে থাকেন। কোরবানিদাতার কাছ থেকে সরাসরি নির্দিষ্ট দাম দিয়ে চামড়া কিনেন মৌসুমি ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। এবার ঢাকায় সারাদিন শেষে বিকেলেও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দেখা যায়নি। মাদ্রাসা ও মসজিদের ছাত্ররা কিছু চামড়া নিজ দায়িত্বে সংগ্রহ করেছে। এছাড়া অনেকে মসজিদ বা মাদ্রাসায় গিয়ে চামড়া দিয়ে এসেছে। তবে মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী পানির দামে ২০০-৩০০ টাকায় এসব চামড়া কিনে নিয়েছে। জানা গেছে, কোরবানির ঈদের পরদিন রবিবার পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনেছেন পাইকাররা। গতবারের বিরূপ অভিজ্ঞতায় এবার মহামারীর মধ্যে চাহিদা কম থাকবে ধরে নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এর পাশাপাশি ট্যানারি মালিকদের কাছে আড়তদারদের কয়েক শ’ কোটি টাকা পাওনা বকেয়া পড়ে থাকা এবং মহামারীকালে বিশ্ব বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া চামড়ার দরপতনে ভূমিকা রেখেছে বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। সরকার কোরবানির পশুর চামড়ার নির্ধারিত দাম বেঁধে দিলেও বাস্তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর চেয়ে অনেক কম দামেই বেচাকেনা হয়েছে। শনিবার ঈদের দিন ও রবিবার ঈদের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে দুই শ’ টাকায়ও, যা গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। এক বছর আগেও এসব চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় হাতবদল হয়েছে। এবার যত বড় চামড়াই হোক কেন কোরবানিদাতা কিংবা সংগ্রহকারী ৬০০ টাকার বেশি দাম পাননি। এ বছর সরকার প্রতিবর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকায় নির্ধারণ করে দিয়েছে। অর্থাৎ আড়তদাররা মাঝারি মানের (২২ ফুট আয়তন) একটি চামড়া ট্যানারিতে বিক্রি করবেন ৭৮০ টাকা থেকে ৯০০ টাকায়। গত বছর এসব চামড়া বিক্রি হয়েছিল এক হাজার থেকে ১২০০ টাকায়। এই বছর একই মানের চামড়াই কোরবানিদাতাদের কাছে থেকে কেনা হয়েছে গড়ে ৩০০-৪০০ টাকা দরে। দরপতনের সুযোগে দালাল, ফড়িয়া, ব্যাপারি, আড়তদার এমনকি এই খাতের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ট্যানারিগুলোর মুনাফা বাড়ার পথ উন্মুক্ত হলেও কেউ দায় নিতে রাজি নয়। দেশে চামড়ার চাহিদার বেশিরভাগ অংশই পূরণ হয় কোরবানির ঈদে জবাই হওয়া পশু থেকে। এবার ৭০ লাখ গরু জবাই হবে বলে ধারণা করা হলেও হয়েছে ৫০ লাখের মতো বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। ছাগল ২০ লাখ জবাই হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জানা গেছে, কোরবানির চামড়া তিন হাত হয়ে ট্যানারিতে পৌঁছে। কোরবানিদাতার কাছ থেকে তা কিনে নেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, যাদের ফড়িয়া বলা হয়। তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কেনেন আড়তদাররা। সেই চামড়া লবণ মাখিয়ে প্রক্রিয়াজাত করার পর বিক্রি করা হয় ট্যানারিতে, যেখানে তৈরি হয় চামড়াজাত নানা পণ্য। গত বছর ফড়িয়ারা যে দরে চামড়া কিনেছিলেন, বিক্রি করতে গিয়ে লাভ তো দূরের কথা কেনা দামও পাননি। তখন অনেকে চামড়া রাস্তায় ফেলে গিয়েছিলেন কিংবা মাটিতে পুঁতে ফেলেছিলেন। এবার করোনাভাইরাস মহামারীতে চামড়ার সরকারী দরও কমে যাওয়ায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ হারান। ফলে অনেক স্থানে কোরবানির চামড়ার ক্রেতাই পাওয়া যাচ্ছিল না। ঈদের দিনের মতো দ্বিতীয় দিন রবিবারও দেখা গেছে একই চিত্র। ঢাকার খিলগাঁও সি ব্লকের একটি বাড়িতে সকালে কোরবানি শেষ হলেও দুপুর ৩টা পর্যন্ত চামড়ার কোন ক্রেতা ছিলেন না। কোরবানির চামড়া কী করবেন- জানতে চাইলে ওই বাড়ির মালিক শেখ জামাল উদ্দিন বলেন, গত দুইদিনে কেবলমাত্র আপনিই (ক্রেতা ধারণা করে) চামড়া কিনতে আসলেন। যা দাম পাই ছেড়ে দেব। তিনি বলেন কোন ক্রেতা চোখে পড়েনি, তাহলে তো দাম পড়বেই। এবার সিন্ডিকেট করে একেবারে ধসায়া দিছে। তিনি বলেন, কোন মাদ্রাসা থেকেও কেউ নিতে আসছে না। ফকিরাপুল পরিচিত একটি মাদ্রাসা আছে। বিকেলে কেউ একজন সেখানে জমা দিয়ে আসবে। তবে আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব আলী জনকণ্ঠকে বলেন, মাঠে যত কম দামই থাকুক না কেন, পোস্তার আড়তদাররা সরকার নির্ধারিত মূল্যেই চামড়া কিনছেন। একই কথা জানালেন বাংলাদেশ ট্যানারি এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ শাহিন আহমেদ। তিনি বলেন, সাভারে গিয়ে দেখুন সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বেচাকেনা হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা চামড়া আনছেন তারা কেউ লবণযুক্ত চামড়া আনছেন না। দাম নির্ধারণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চামড়ার আড়তদার ব্যবসায়ী আফতাব আলী আরও জানান, প্রতিটি চামড়ার মধ্যে দেড় শ’ থেকে দুই শ’ টাকা চালান দিতে হয়। সেই হিসাব ধরে মাঝারি মানের চামড়াগুলো ৬০০ টাকা করে কেনা হয়েছে। এর থেকে বেশি দিয়ে কিনতে গেলে সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী আড়তের লভ্যাংশ থাকে না। এখন কেউ যদি মাঠ পর্যায়ে ৩০০-৪০০ টাকায় চামড়া কেনে, সেটা ভিন্ন হিসাব। দেখা গেছে ৩০০ টাকায় কিনে অনেকে আড়তে ৬০০ টাকা করে বিক্রি করছেন, অর্থাৎ অতি মুনাফা করছেন। আড়তদারদের পাশাপাশি কিছু ট্যানারিও প্রতিনিধি পাঠিয়ে সরাসরি চামড়া কিনেছে। রবিবার বেলা ৩টার দিকে মিরপুর রোডের ধানমণ্ডি এলাকায় দেখা যায়, সাভার-আমিনবাজারের বিভিন্ন ট্যানারির প্রতিনিধি ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় ২০ থেকে ৩০ বর্গফুট আয়তনের চামড়া কিনে নিচ্ছেন। নিজেকে ঢাকা ট্যানারির প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে শামসুল আলম নামের একজন ক্রেতা জনকণ্ঠকে বলেন, রবিবার সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা করে তারা চামড়া কিনছেন। শনিবার গড়ে ৫০০ টাকা করে চামড়া কেনা হয়েছে। এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুরে একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিনে চামড়া কেনাবেচা তদারিক করেন। ওই প্রতিনিধিদলের সদস্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা নারায়ণ সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, সাভারে নির্ধারিত দামে চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। ট্যানারিগুলো ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, ট্যানারির বাইরে চামড়ার দাম কম হওয়ার বিষয়টি তারা অবগত নয়। তবে ট্যানারি ও আড়তে নির্ধারিত দামে চামড়া বেচাকেনা হচ্ছে। জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গরুর চামড়া আকারভেদে ১৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ২ থেকে ১০ টাকায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে চামড়াশিল্পের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে। আবার দরপতন ঠৈকাতে ২৯ জুলাই কাঁচা ও ওয়েট-ব্লু চামড়া রফতানির অনুমতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। চামড়া ঠিকই কিনেছেন আড়তদার ও ট্যানারি মালিকেরা। পোস্তাতেই গতবারের তুলনায় বেশি চামড়া সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যদিও গতবারের চেয়ে এবার কোরবানি কম হওয়ার কথা জানিয়েছেন ট্যানারি মালিকেরা। বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম কোরবানি হয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি কোরবানি হয়। আমরা সরকার নির্ধারিত দামে লবণযুক্ত চামড়া কেনা শুরু করব। যারা কম দামে চামড়া কিনেছে, তারা আমাদের পরিচিত নয়। এদিকে চামড়া কিনতে ট্যানারি মালিকদের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বেশিরভাগ ব্যাংকই এখন পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। এ খাতের বিতরণকৃত ঋণের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত খেলাপী। আর এ কারণে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর অনীহা রয়েছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ আরও বলেন, চামড়া কিনতে সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন করে জনতা ব্যাংক। তবে এবার ব্যাংকটি চামড়া কিনতে কোন ঋণ দেয়নি। আমরা আশা করছি, অফিস খোলার দু-এক দিনের মধ্যে ব্যাংকটি টাকা দেবে। যেসব ট্যানারি ঋণ পাবে না, তারা চামড়া কিনতে পারবে না। চট্টগ্রামে ডাম্পিংয়ে ১৫ হাজার পিস ॥ স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, চট্টগ্রামে এবার লোকসানেও বিক্রি করা যায়নি কোরবানির পশুর চামড়া। মাঠ পর্যায় থেকে সংগ্রহ করা চামড়াগুলো বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ফেলে যেতে বাধ্য হয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। অবশেষে সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি ডাম্পিং করেছে প্রায় ১৫ হাজার পিস চামড়া। গত বছরের অভিজ্ঞতায় এবার চামড়ার ব্যবসা ভাল হবে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি ছিল আরও নাজুক। কোরবানির ঈদের পর শনিবার বিকেল থেকেই চামড়া আসতে শুরু করে সড়ক সংলগ্ন বিভিন্ন বাজারে। চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদ চৌমুহনী মোড় এলাকায় সড়কের ধারে চামড়ার স্তূপ জমে যায়। বিভিন্ন উপজেলা থেকেও চামড়া আসে নগরে। আতুরার ডিপো এলাকায় রয়েছে চামড়ার আড়ত। সহজে বিক্রির আশায় অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী ওই এলাকায় রেখেছিলেন তাদের সংগ্রহ করা চামড়া। মহাসড়কের পাশে চামড়া নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন ক্ষুদ্র কারবারিরা। কিন্তু অনেক রাত গড়িয়ে গেলেও আড়তদারদের প্রতিনিধি বা পাইকারি ক্রেতার দেখা মেলেনি। রাজশাহীতে নদীতে চামড়া ফেললেন ব্যবসায়ীরা ॥ স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহীতে এবার কোরবানির চামড়া বিক্রি হয়েছে পানির চেয়েও কম দরে। গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম ২০-২৯ শতাংশ কমিয়ে নির্ধারণ করেছিলো সরকার। সেই দামও পাওয়া যায়নি চামড়া বিক্রির সময়। ছাগলের চামড়া রাজশাহীতে ৫ থেকে ৩০ এবং গরুর চামড়া ১০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের দিন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অবশ্য একটু বেশি দামে চামড়া কিনেছিলেন। তবে তারা ধরা খেয়েছেন। আড়তে বিক্রি করতে না পেরে সেই চামড়া পদ্মা নদীতেও ফেলে দিতে দেখা গেছে। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার তারাই ঠিকমতো বাজার বুঝতে পারেননি। একদিনের জন্য চামড়া কিনতে এসে মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও বোঝেননি। ফলে তাদের লোকসান বেশি। একজন মৌসুমি ব্যবসায়ীও লাভ করতে পারবেন না। প্রথম চামড়ার হাট জমল না রাজারহাটে ॥ স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস থেকে জানান, কোরবানির ঈদের পর প্রথম চামড়ার হাট মঙ্গলবার জমল না যশোরের রাজারহাটে। সকাল থেকে ভারি বৃষ্টিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহৎ এ মোকামে যেমন ছিল চামড়ার যোগান কম, তেমনি দামে হতাশ হয়েছেন বিক্রেতারা। হতাশাজনক দামে চামড়া বিক্রি হয়েছে ঈদের পরের প্রথম হাটে যশোরে। বিক্রেতারা বলছেন, ব্যাপারিরা যে দাম নির্ধারণ করছে তাতে খরচই উঠছে না। তবে ব্যবসায়ীরা বলছে, আগামী শনিবার জমে উঠবে রাজারহাট। ছাগলের চামড়ার মুল্য নেই সিলেটে ॥ স্টাফ রিপোর্টার সিলেট অফিস থেকে জানান, সিলেট নগরীতে এবারো মূল্যবান সম্পদ কোরবানির পশুর চামড়া অনেকেই যত্রতত্র ফেলে দিয়েছেন। কেউ পানির দামে বিক্রি করেছেন । ছাগলের চামড়া কেউ টাকা দিয়ে না কেনায় তা বিনা মূল্যেই ক্রেতাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। অনেকে ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দিয়েছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ মাদ্রাসার কাজে ব্যয় করা হয়ে থাকে। এই লক্ষ্যে দীর্ঘকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন মাদ্রাসার পক্ষ থেকে চামড়া সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। পাবনায় চামড়ার বাজারে ধস ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা থেকে জানান, কোরবানির চামড়ার বাজারে এবারে ধস নেমেছে। ক্রেতার অভাবে নামমাত্র মূল্যে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে দেখা গেছে। গরুর চামড়া প্রতিটি দেড় শ’ থেকে ৪শ’ টাকা বিক্রি হয়েছে। আর ছাগলের চামড়া প্রতিটি ১৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। বগুড়ার রেকর্ড নিম্নদর ॥ স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস থেকে জানান, বগুড়ায় এবার কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নিয়ে বিস্ময় তৈরি করেছে। রেকর্ডপরিমাণ নিম্নদরে এবার কোরবানির চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। এতে মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং উপজেলা পর্যায়ের ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের হাতে নিস্ব হবার সঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোরবানির চামড়া মূল্য নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছে। দিনাজপুরের ব্যবসায়ীরা দূষছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ॥ স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে জানান, দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। বিক্রেতারা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না মাগুরায় ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুরা থেকে জানান, কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে দাম কম হওয়ায় বিক্রিত চামড়ার মূল্য পাচ্ছেন না বিক্রেতা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এখানে প্রতিটি গরুর চামড়া প্রকার ভেদে মাত্র এক শত টাকা থেকে সাড়ে ৩ শত টাকা এবং খাসির চামড়া ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে ।
×