ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘কেউ আমাদের হারাতে পারত না’

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ৫ আগস্ট ২০২০

‘কেউ আমাদের হারাতে পারত না’

সর্বশেষ ২০১৯ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ক্রিকেটের জনকদের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪৪ বছর। মাঝে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে ট্রফিটাকে ‘প্রায়’ পৈত্রিক সম্পত্তিতে পরিণত করেছে অস্ট্রেলিয়া। ২০১১’র চ্যাম্পিয়ন ভারত এখন ক্রিকেট বিশ্বের ‘অঘোষিত মোড়ল’। অথচ ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্বের আয়োজন যখন শুরু হয়েছিল তখন দাপটটা ছিল কেবলই ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ১৯৭৫ সালের প্রথম আসরের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাজিমাত করে ক্লাইভ লয়েডের দল। ১৯৭৯ সালে পরেরবারও শিরোপা ধরে রাখে ক্যারিবীয়রা। ১৯৮৩ লর্ডসে টানা তৃতীয় ফাইানালে এসে হার মানে ভারতের কাছে। ২১ জুলাই ছিল উইন্ডিজের ঐতিহাসিক প্রথম ট্রফিজয়ের ৪৫ বছর। গর্ডন গ্রিনিজ, ভিভ রিচার্ডস, রোহান কানহাই, এ্যান্ডি রবার্টসদের নিয়ে গড়া দুর্দমনীয় সেই দলটার অধিনায়ক স্যার ক্লাইভ লয়েড আজও স্মৃতিকাতর...। ‘এটা আমার এবং প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী সতীর্থদের জন্য স্মরণীয় দিন। জীবনের সেরা দিনগুলোর একটি। পুরো টুর্নামেন্টে আমরা অপরাজিত ছিলাম। লর্ডসে জেতাটা ছিল অসাধারণ। পরপর দুটি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দারুণ ব্যাপার। যারা আমাদের হাতে বিশ্বকাপ দেখতে এসেছিলেন সেই মানুষগুলোর জন্য এটা ছিল বড় উৎসব’ বলেন ৭৫ বছর বয়সী লয়েড। স্যার লয়েড আরও যোগ করেন, ‘আমরা ছিলাম বিশ্বের সেরা ক্রিকেট দল। কেউ আমাদের হারাতে পারত না। বিশ্বের সর্বত্র সমীহ করা হতো আমাদের। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে অনেক গ্রেটের জন্ম হয়েছে। আমরাও তাদের মধ্যে পড়ি। আমরা ছিলাম খেলায় সাফল্যের প্রতীক। আমাদের এই জয়গুলো ছিল সমর্থকদের জন্যই। শুধু ক্রিকেটারদেরই নয়, আমাদের সাফল্য বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের মন জিতে নিয়েছিল। লর্ডসের সেই দিনটির কথা আমার আমৃত্যু মনে থাকবে।’ ২১ জুন, ১৯৭৫, লর্ডস- টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নামে ইয়ান চ্যাপেলের অস্ট্রেলিয়া। ৬০ ওভারের ম্যাচে ৮ উইকেটে ২৯১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাতে অধিনায়ক লয়েডের একারই অবদান ১০২ রান। ৮৫ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় খেলেছিলেন এই ইনিংসটি, সময়ের বিবেচনায় রীতিমতো ঝড়ো গেঞ্চুরি। রোহন কানহাই ৫৫ রান করেছিলেন ১০৫ বলে। ব্যাটিংয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান বলতে আর ছিল শেষদিকে উইকেটকিপার ডেরিক মারের ১০ বলে ১৪। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১২ ওভারে ৪৮ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়েছিলেন বাঁহাতি পেসার গ্যারি গিলমোর। ২৯২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় দারুণ শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া। এ্যালার টার্নার ও ইয়ান চ্যাপেল ৪০ ও ৬২ রানের ইনিংসে ভাল জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন দলকে। কিন্তু এরপরই ভিভ রিচার্ডসের অসাধারণ থ্রোয়ে তিনটি রান আউট! একে একে সাজঘরে টার্নার, গ্রেগ চ্যাপেল ও তার বড় ভাই অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল। ম্যাচ হেলে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকে। ডানহাতি পেসার কিথ বয়েস নেন অস্ট্রেলিয়ার চারটি উইকেট, ৫৮.৪ ওভারে ২৭৪ রানে অলআউট হয়ে যায় অসিরা। ১৭ রানে ম্যাচ জিতে প্রথম বিশ্ব্কাপ জয়ের উৎসবে মেতে ওঠে ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সভাপতি রিকি স্কেরিট সেই বিজয়ের বর্ষপূতির দিনে শুভেচ্ছা বার্তায় বলেছেন, ‘স্যার ক্লাইভ লয়েড ও তার কিংবদন্তিতুল্য সহখেলোয়াড়দের মাধ্যমে আসা এই বিশ্বকাপ জয় প্রতিটি প্রান্তের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের এনে দিয়েছিল অসাধারণ এক গৌরব ও সম্মান। আর সে কারণেই ক্রিকেট মাঠের গৌরবময় অতীতের স্মৃতি কখনও মুছে যাওয়ার নয়।’
×