ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চিরঞ্জীব শেখ কামাল

প্রকাশিত: ২০:৫১, ৫ আগস্ট ২০২০

চিরঞ্জীব শেখ কামাল

একজন তরুণের জীবন কত কর্মময়, কত প্রাণবন্ত এবং কত উজ্জ্বল হতে পারে, নিজের সংক্ষিপ্ত জীবনে তা দেখিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল। ছোটবেলা থেকেই তার ছিল খেলাধুলায় প্রচণ্ড আগ্রহ। শুধু খেলাধুলা নয়, লেখাপড়া, সঙ্গীতচর্চা, অভিনয়, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা থেকে শুরু করে শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতির সব শাখাতেই তার ছিল মুনশিয়ানা ও অসামান্য সংগঠকের ভূমিকা। মেধাবী ছাত্র, ১ম ডিভিশনের ফুটবল প্লেয়ার, ক্রীড়া সংগঠক, আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা এবং সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠক শেখ কামাল ছিলেন সদালাপী, সদা হাসিখুশি, প্রাণবন্ত মানুষ। তিনি গড়ে তুলেছেন ঢাকা থিয়েটার এবং আধুনিক সঙ্গীত সংগঠন স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী। ছাত্রলীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী ও সংগঠক হিসেবে ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শেখ কামাল সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেনাবাহিনীর যে প্রথম ব্যাচটি ভারতের বেলুনিয়া থেকে কমিশন লাভ করে সে ব্যাচের একজন শেখ কামাল। ২৫ মার্চের পর তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গনি ওসমানির অউঈ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এই মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন তিনি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে সংগঠিত করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর জাতির পিতার আদর্শকে বুকে ধারণ করে দেশ গঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং সেনাবাহিনী থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার মাত্র ১ মাস ১২ দিন পর ৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামালের জন্ম। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলায় প্রচণ্ড আগ্রহ এবং নেতৃত্বের ঝোঁক ছিল শেখ কামালের। শাহীন স্কুলে থাকাকালীন তিনি ছিলেন প্রতিটি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অপরিহার্য অংশ। সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শেখ কামালের প্রতিদিনের উপস্থিতি ছিল সবার জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক। ভারতের বেলুনিয়া থেকে তিনি সেনাবাহিনীর প্রথম ব্যাচে কমিশন লাভ করেন। ২৫ মার্চের পর তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন বাংলা মাকে মুক্ত করার জন্য মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধা অকুতোভয় এই সংগঠক মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশে ফিরে সেনাবাহিনী থেকে চলে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্রীড়াঙ্গনে প্রথমে তিনি গড়ে তোলেন আবাহনী সমাজ কল্যাণ সংস্থা, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নতুনভাবে যাত্রা করে আবাহনী ক্রীড়া চক্র নামে। বিদেশী কোচ এনে শেখ কামাল উপমহাদেশের ফুটবলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন ফুটবল ও ক্রিকেটকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্রকারী খুনি চক্র এদেশকে নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছিল। বিদেশে অবস্থান করায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শ্রদ্ধেয় শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে গেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ২১ বছর পর দায়িত্ব গ্রহণ করে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের অদম্য অগ্রযাত্রায়। সকল দুর্যোগে তিনি আস্থার প্রতীক, ভরসারস্থল। সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে তিনি জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিতে শেখ কামালের অসমাপ্ত আকাক্সক্ষা পূরণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ কামাল মাত্র ২৬ বছরের জীবনে একদিকে মেধাবী ছাত্র, প্রথম শ্রেণীর ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়াসংগঠক, আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা, সঙ্গীত ও অভিনয়শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ছায়ানট এবং স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা, ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী ও সংগঠক, সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী মুক্তিযোদ্ধা, অপরদিকে তিনি ছিলেন প্রাণবন্ত, সদালাপী এবং সুকুমার মনোবৃত্তির মানুষ। জাতির পিতার সন্তান হয়েও তিনি কোনদিন অহংকারী ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন আচার আচরণে অতি সহজ সরল মাটির মানুষ। শেখ কামাল ছিলেন সবক্ষেত্রে অনন্য গুণের অধিকারী। তিনি যদি আজ বেঁচে থাকতেন তাহলে সমাজ হতো গতিশীল, জীবন হতো শৈল্পিক আর বাংলাদেশ হতো ক্রীড়া, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিকভাবে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র। একজন মানুষের মাত্র ২৬ বছরের জীবন কত কর্মময়, গতিশীল, গঠনমূলক ও প্রাণবন্ত হতে পারে, শেখ কামাল তার জলন্ত উদাহরণ। তিনি চিরঞ্জীব-চিরউজ্জ্বল হয়ে বেঁচে থাকবেন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে। লেখক : সাবেক তথ্য এবং সংস্কৃতি সচিব
×