ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সম্প্রসারণমুখী মুদ্রানীতি

প্রকাশিত: ২০:৩২, ৫ আগস্ট ২০২০

সম্প্রসারণমুখী মুদ্রানীতি

একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির নেপথ্যে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে মুদ্রানীতি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যেই ঘোষণা করা হয় মুদ্রানীতি। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলতি বছর সারাবিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারীর কবলে পড়েছে। তবে বাংলাদেশের এই বৈশ্বিক সঙ্কটটি ছাড়াও রয়েছে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যার মতো নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাই মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় এসবই বিবেচনায় রাখা সমীচীন। আমেরিকায় বছরে আটবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার আগে থেকেই এটার প্রতি সবার মনোযোগ থাকে। ঘোষণার পর দেশের শেয়ারবাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসে। বিশ্বব্যাপী সাড়া পড়ে যায়। কিন্তু আমেরিকায় বাজেট কিভাবে হলো, কখন হলো এসব নিয়ে বেশি আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় না। বাংলাদেশে শুধু বাজেট হলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যায়। কারণ, বাজেটে করের বিষয় থাকে। অবশ্য মুদ্রানীতি তার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ, এখানে সুদের হার, বেসরকারী খাত কী পরিমাণ ঋণ পাবে তার ঘোষণা থাকে। উন্নত দেশে মুদ্রানীতির সঙ্গে শেয়ারবাজারের ভাল সম্পর্ক আছে। তবে বাংলাদেশে তেমনটা নেই। বাংলাদেশের শেয়ারবাজার দুর্বল হওয়ায় মুদ্রানীতি শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করতে পারছে না। আবার দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার মধ্যে বড় অঙ্কের খেলাপী ঋণ আছে। খেলাপী ঋণ অনেকটা কৃষ্ণগহ্বরের মতো। এটা অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। মুদ্রানীতির সব লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব না হলেও যদি কাছাকাছি অর্জন হয় সেটাও অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ধরে নেয়া হয়। অর্থনীতিবিদরা বারবার বলে আসছেন মুদ্রানীতি আরও ভালভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারী ব্যাংকগুলোর অদক্ষতা কমানো জরুরী। উদার মুদ্রানীতি পেতে হলে কিছু শর্ত পূরণের প্রয়োজন পড়ে। উচ্চতর প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের জন্য অভ্যন্তরীণ ঋণ জোগানের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা প্রয়োজন বলে মনে করা হলেও অর্থনীতির প্রকৃত খাতে বিরাজমান ভৌত অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা নিরসন না করে অপরিমিত তারল্যস্ফীতি প্রবৃদ্ধিবান্ধব হতে পারে না। মুদ্রানীতির উদ্দেশ্য যদি হয় অর্থ সরবরাহ, তবে তা নিয়ন্ত্রণে যে হাতিয়ারগুলো রয়েছে তার মধ্যে গুণগত হাতিয়ার, যেমন- নৈতিকভাবে প্রভাবিত করা, রেশনিং, প্রচার ইত্যাদি কতটুকু কার্যকর সেটি নিয়ে তেমন কোন আলোচনা প্রায় দেখা যায় না। অথচ গুণগত দিক বিবেচনায় এগুলো প্রয়োজন এবং খেলাপী ঋণের ছোবল থেকে ব্যাংকগুলোকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ জরুরী। অর্থের জোগান বাড়াতে রেপো (পুনঃ ক্রয় চুক্তি) ও রিভার্স রেপোর সুদহার আরও এক দফা কমিয়ে ‘সম্প্রসারণমুখী’ নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা সময়োচিত পদক্ষেপ। এজন্য প্রায় ১৭ বছর পর কমানো হলো ব্যাংকের সুদহার। মহামারীর ধাক্কায় অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হচ্ছে তা থেকে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে নতুন মুদ্রানীতিতে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারী খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, আর সরকারী খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে চলমান মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা ও সরকার নির্ধারিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে আর্থিক খাতের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ করা। সে হিসাবে নতুন মুদ্রানীতির ভঙ্গিকে স্পষ্টতই সম্প্রসারণমূলক ও সঙ্কুলানমুখী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
×