ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁদো বাঙালী কাঁদো

প্রকাশিত: ২০:৩২, ৫ আগস্ট ২০২০

কাঁদো বাঙালী কাঁদো

আগস্ট বাঙালীর শোকের মাস, বেদনার মাস। ইতিহাসে রক্তের আখরে লেখা শোকাবহ মাস আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের এক পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড ঘটে। সেদিন ঘাতকরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে, যা বিশ্ব ইতিহাসের যে কোন বর্বর হত্যাকাণ্ডকে হার মানায়। ১৫ আগস্ট শুধু একজন বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করেনি ঘৃণ্য নরপশুরা, তারা একে একে হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে। জঘন্যতম এ হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা পাননি বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি, বেগম আরজু মণি, কর্নেল জামিলসহ ১৬ জন। ঘাতকদের নিক্ষেপিত গোলায় মোহাম্মদপুরে মারা যান কয়েকজন নারী-পুরুষও। এসব হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ ও চেতনাকে মুছে ফেলার চেষ্টা শুরু হয়। যে ডাকে জেগেছিল সাড়ে সাত কোটি প্রাণ রণাঙ্গনে, সেই কণ্ঠকে স্তব্ধ করাই শুধু নয়, জাতির বিকাশকে ব্যাহত করার ঘৃণ্য চেষ্টাকেও অবলোকন করেছে বিশ্ববাসী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি তারা। যে কোন মানদণ্ডের বিচারে বঙ্গবন্ধু ছিলেন এক অনন্য নেতা। ছিলেন সহজ-সরল, সাদামাটা অথচ দৃঢ়চেতা এক মানুষ। গোপালগঞ্জের নিভৃত পল্লীতে জš§গ্রহণ করেও তিনি একটি পিছিয়ে পড়া জাতিকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করেছেন। দিয়েছেন স্বাধীনতা। বিশ্ব ইতিহাসে যার দৃষ্টান্ত বিরল। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা। তিনি অবহেলিত বাঙালী জাতিকে একটি অভীষ্ট লক্ষ্যে স্থির করতে পেরেছিলেন- দূরদৃষ্টি, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং তাঁর পবিত্র জীবনদর্শন দিয়ে। যে জীবনদর্শনে মিশে আছে সততা, নির্লোভ, মানুষের প্রতি গভীর মমতা, আত্মত্যাগ এবং দুর্মর সাহস। যা তিনি অর্জন করেছিলেন হাজার বছরের চিরায়ত বাঙালীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি থেকে। একটি দেশ, একটি জাতি, একটি পতাকা- এই স্বপ্ন বুকে নিয়ে মুক্তির আন্দোলনে তিনি অকুতোভয়চিত্তে দিয়েছেন সর্বোত্তম নেতৃত্ব। তাঁর নামেই পরিচালিত হয়েছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। তিনি স্বীকৃত হয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী হিসেবে। মানুষের অশেষ শ্রদ্ধায় হয়েছেন জাতির পিতা। এ কথা সত্য যে, একটা সময় ছিল যখন বঙ্গবন্ধুর নামও প্রায় নিষিদ্ধ ছিল। শিশু-কিশোরদের দীর্ঘদিন জানতে দেয়া হয়নি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। শুধু বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করাই নয়, নানাভাবে তাঁর সম্পর্কে অপপ্রচারও করা হয়েছে। তাঁর অবদানকে নানাভাবে খাটো করা, এমনকি অস্বীকারও করা হয়েছে। কিন্তু তাদের সে অপচেষ্টা সময়ের বিবর্তনে নস্যাৎ হয়ে গেছে। বাংলার মাটিতে তাঁর হত্যার বিচারও সম্পন্ন হয়েছে। ঘাতকদের দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। পিতৃহত্যার কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেয়েছে জাতি। টানা তৃতীয়বারের মতো বঙ্গবন্ধুর কন্যা এখন রাষ্ট্রক্ষমতায়। দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বদলেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে এখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিরাজ করছে। ১৫ আগস্টের সাজাপ্রাপ্ত খুনীদের কেউ কেউ এখনও পলাতক। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করার চেষ্টা আরও জোরদার করা দরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০-২০২১ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছে সরকার। জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে সরকার, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও দেশবাসী বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে। তবে করোনা মহামারীর কারণে প্রধানত তা ভার্চুয়াল মাধ্যম, টেলিভিশন ও গণমাধ্যমে পালিত হচ্ছে। শোকাবহ আগস্ট স্মরণে মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এই শোকের মাসের শুরুতেই জানাই জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
×