ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গোপালগঞ্জে নদ-নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা

প্রকাশিত: ১৮:২৬, ২ আগস্ট ২০২০

গোপালগঞ্জে নদ-নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা

অনলাইন রিপোর্টার ॥ গোপালগঞ্জে মধুমতি নদী ও কুমার নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে দুর্গত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। অনেকে পরিবার ও গবাদি পশুসহ স্থানীয় স্কুল ও সড়কের পাশের উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, মধুমতি নদী বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ও মধুমতি বিলরুট চ্যানেলের পানি ২০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ রবিবার (২ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিন পানিবন্দি এসব গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার মধুমতি নদী ও কুমার নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর উপজেলার উলপুর, নিজড়া, হরিদাসপুর, কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা, হাতিয়াড়া, পুইশুর, মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে দুই সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি এলাকার অন্তত ৪শ পরিবার প্লাবিত এলাকার স্কুল ও পাকা সড়কের পাশে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। প্লাবিত এলাকার কাঁচা ও আধা পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুরাবস্থার মধ্যে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। ইতোমধ্যে শত শত মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। ওই সব ঘের মালিকেরা নেট দিয়ে মাছ রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা ইউনিয়নের ইতি বিশ্বাস (৪০), নীলমতি বিশ্বাস (৪২), চারুলতা বিশ্বাস বলেন, আমাদের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। ঘরের মধ্যে টং বানিয়ে বসবাস করছি। কিন্তু রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে সমস্যায় দিনাতিপাত করছি। কাশিয়ানী উপজেলার প্লাবিত এলাকার কেসিসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া দুখীরাম (৬৫), স্বরসতি রায় (৪৫), গৌরী রায় (৪৩), পাচি রায় (৬৮) জানান, তাদের বাড়ির মধ্যে পানি ঢুকে পড়ায় স্থানীয় স্কুলে গবাদি পশু ও পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কাশিয়ানী উপজেলার হাতিয়াড়া ইউনিয়নের রাহুথর ইউনিয়নের মাছের ঘের মালিক বাবুল রায় জানিয়েছেন, তার ঘেরসহ অসংখ্য মাছের ঘেরের পাড় পানিতে ডুবে গেছে। সবাই নেট দিয়ে ঘেরের মাছ রক্ষার চেষ্টা করছেন। কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রণব সরকার এবং গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নিজড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান সরদার ও উলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বাবুল জানিয়েছেন, প্রতিদিনই পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দুর্গত মানুষের মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। গোপালগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক চন্দ্র সরকার জানান, বন্যা কবলিত তিন উপজেলায় ১০ হাজার করে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই সব উপজেলায় একশ করে প্লাস্টিকের পানির ক্যান দেওয়া হয়েছে। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে দুর্গতদের সাহায্যের জন্য ৩শ মেট্রিক টন চাল এবং শিশু, গো-খাদ্য ও শুকনা খাবারের জন্য ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুর্গতদের ত্রাণ দেওয়া শুরু হয়েছে। বিশুদ্ধ নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে প্লাস্টিকের পানির ক্যান ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগকে মেডিকেল টিম গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যায় ওই টিম কাজ করবে।
×