ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ত্রিপুরায় ভূমিহীনদের প্রধানমন্ত্রীর নতুন ঘর উপহার

প্রকাশিত: ১৮:২৪, ৩১ জুলাই ২০২০

ত্রিপুরায় ভূমিহীনদের প্রধানমন্ত্রীর নতুন ঘর উপহার

অনলাইন রিপোর্টার ॥ পাহাড়ে বাঁশের বেড়ায় তৈরি ছোট ছোট খুপরিই ছিলো তাদের ঠিকানা। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বিচ্ছিন্ন এইসব মানুষ সেখানে বাস করতেন ভূমিধসে মৃত্যুভয় মাথায় নিয়েই। হাটহাজারীর মনায় ত্রিপুরা পাড়ার ত্রিপুরাদের এ দুরাবস্থা পাল্টে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসনের একটি উদ্যোগে। ত্রিপুরা পাড়ার ৬ পরিবার প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে পাচ্ছেন নতুন ঘর। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অর্থায়নে এবং উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মনায় ত্রিপুরা পাড়ার মোহন ত্রিপুরা,খড়িয়া ত্রিপুরা, রাধারাম ত্রিপুরা, বানী কুমার ত্রিপুরা, শচীরং ত্রিপুরা এবং রবিন ত্রিপুরার জন্য নতুন ঘর তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ঘর তৈরিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। ঘরে ১০০ বর্গফুটের দুইটি কক্ষ, একটি টয়লেট এবং রান্নার জন্য একটি কক্ষ রাখা হয়েছে। শুক্রবার (৩১ জুলাই) এসব ঘর ত্রিপুরাদের হস্তান্তর করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হাটহাজারীর মনাই ত্রিপুরা পাড়ার ত্রিপুরাদের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দিতে গত কয়েক বছরে একাধিক উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। এসব উদ্যোগের মধ্যে ত্রিপুরা পাড়ায় স্কুল তৈরি, ত্রিপুরা শিশুদের স্কুলে আনতে প্রণোদনা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ দিতে নলকূপ স্থাপন, হাটহাজারী সদরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে সড়ক তৈরি ছিলো অন্যতম। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অর্থায়নে ''বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত) শীর্ষক কর্মসূচী'' প্রকল্পের আওতায় ত্রিপুরাদের জন্য নতুন ঘর তৈরি করা হলো। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর 'গ্রাম হবে শহর' এই ভিশন বাস্তবায়নে কাজ করছি আমরা। এরই অংশ হিসেবে ত্রিপুরা পাড়ায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ত্রিপুরাদের জীবনমান উন্নয়নে তাদের জন্য ঘর তৈরিতে বরাদ্দ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় বরাবর চিঠি দিই আমরা। বরাদ্দ পাওয়ার পর কাজ শুরু করা হয়। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে ত্রিপুরাদের এসব ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। 'ত্রিপুরাপাড়ার একজন ত্রিপুরাও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবেন না। তাদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ সব মৌলক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। ত্রিপুরাদের সমাজের মূল অংশের সঙ্গে সম্পৃক্ত করাই আমাদের লক্ষ্য। ' জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, মনাই ত্রিপুরা পাড়ার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিলো। সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলো। তবে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এখন এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। গ্রাম হবে শহর। ' তার অভিপ্রায় অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। ত্রিপুরা পাড়ায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। 'ত্রিপুরা পাড়ার উন্নয়ন, বর্তমান সরকারের বিশাল উন্নয়নযজ্ঞের একটি দৃষ্টান্ত মাত্র। আমরা চট্টগ্রামের প্রতিটি গ্রামে এই উন্নয়নের ছোঁয়া দিতে চাই। প্রতিটি গ্রামে শহরের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে চাই। ' বছরের পর বছর অবহেলিত ত্রিপুরারা নতুন ঘর পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। উপজেলা প্রশাসনের প্রতিও তাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। নতুন ঘর পাওয়া মোহন ত্রিপুরা জানান, পাহাড়ে বেড়ায় তৈরি করা খুপরিই ছিলো আমাদের ঠিকানা। ইউএনও স্যারের উদ্যোগের কারণে প্রধানমন্ত্রী আমাদের নতুন ঘর দিয়েছেন, নতুন ঠিকানা দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই আমাদের। রবিন ত্রিপুরা বলেন, স্বপ্নেও ভাবিনি নিজের একটি ঠিকানা হবে। নতুন ঘর হবে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে পাকা বাড়িতে থাকবো। সব কিছু সম্ভব হয়েছে ইউএনও স্যারের জন্য। তিনিই আমাদের দুরাবস্থার কথা সরকারের নজরে এনেছেন। তার কারণেই প্রধানমন্ত্রী আমাদের বাড়ি উপহার দিয়েছেন।
×