ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা নিয়ে কাউকে ‘ছেলেখেলা’ খেলতে দেব না ॥ তাপস

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ৩১ জুলাই ২০২০

ঢাকা নিয়ে কাউকে ‘ছেলেখেলা’ খেলতে দেব না ॥ তাপস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, তিনি ঢাকার উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ‘মহা পরিকল্পনা’ হাতে নিয়েছে। তিনি জানান, ঢাকা নিয়ে আর কাউকে ‘ছেলেখেলা’ করতে দেবেন না। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা ঢাকাকে সচল সুন্দর ঢাকা হিসেবে, সর্বোপরি উন্নত ঢাকা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যে সকল সংস্থা ঢাকায় কাজ করে, তাদের অনুরোধ করব, ঢাকাকেন্দ্রিক যে কোন কার্যক্রম ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে করতে হবে। আমরা সেটা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করব। বৃহস্পতিবার নগর ভবনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, যে কোন প্রকল্প হাতে নিলে আগে ডিএসসিসির সঙ্গে সমন্বয় করে নেবেন। যত্রতত্র অন্য কোন সংস্থাকে ঢাকাকে নিয়ে ছেলেখেলা করার সুযোগ দেয়া হবে না। এদিকে নতুন অর্থবছরের জন্য ৬ হাজার ১১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, যা গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৩৬ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে দক্ষিণ সিটির সংশোধিত বাজেটের আকার ছিল ২৫৮৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বাজেট বক্তৃতায় মেয়র তাপস জানান, এবারের বাজেটে ‘বটম-আপ পলিসিকে’ গুরুত্ব দিয়ে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সংসদ সদস্যদের উন্নয়ন ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়ন ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ১৯ নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, বাজেটে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে কামরাঙ্গীরচরে একটি ‘সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট’ করার কথা। একটি শহরের চারদিকে নদীবেষ্টিত, এমন শহর পৃথিবীতে বিরল। কিন্তু বুড়িগঙ্গার সন্তান, আমাদের সকলের প্রাণের এই ঢাকা শহরের জনগণকে নাগরিক সুবিধা দেয়ার প্রচেষ্টা থাকলেও তা সবসময় প্রদান করা সম্ভব হয়নি। তাই সহজতর ও কার্যকর উপায়ে নাগরিকসেবা প্রদানের লক্ষ্যে আমরা মহাপরিকল্পনার আওতায় কামরাঙ্গীর চরে একটি সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট করতে চাই। ডেঙ্গু নিধনে সফল দক্ষিণ সিটি ॥ মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে দাবি করেন, ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ‘সফল হয়েছে’। আমি আড়াই মাস আগে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আমি এখন বলতে পারি, আমরা অনেক অংশে সফল। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। আমরা এখন পর্যন্ত ঢাকাবাসীকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া থেকে মুক্ত রাখতে পেরেছি। তারপরও মশা নিধনে নানা কর্মকাণ্ড চলছে জানিয়ে মেয়র বলেন, এই শহরে অনেক জলাশয় রয়েছে যা মশার প্রজনন ও বংশবিস্তারের ‘আঁতুড়ঘর’। এসব জলাশয় দখল-দূষণে নিশ্চল-নিথর হয়ে পড়ে আছে। ফলে জলাশয়গুলো আমাদের জন্য আশীর্বাদ হওয়ার বদলে অভিশাপে পরিণত হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ জলাশয় সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন নয়। এগুলোর মালিক সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা। নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ঝুলে আছে সেসব ‘মশক-অভয়ারণ্যে’ আমাদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন। তারপরও গত ১৪ জুন ডিএসসিসির ১০টি অঞ্চলের ১০টি জলাশয় পরিষ্কার করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘সেখানে অবমুক্ত করেছি দেশীয় তেলাপিয়া মাছ, যা পানিতে ভাসমান মশকের লার্ভা খেয়ে বংশবিস্তার রোধ করে। আর বদ্ধ জলাশয়ে পানি স্থির থাকলে মশার বিস্তার ঘটে। সেজন্য পরিষ্কার করার পর আমরা জলাশয়গুলোতে হাঁস অবমুক্ত করেছি, যাতে হাঁসের চলাফেরার ফলে পানির উপরিভাগ স্থির না থাকে। এসব জলাশয়ে মাসে অন্তত একবার জাল টানা হবে। এতে মাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হওয়ার পাশাপাশি মশক প্রজনন হ্রাস পাবে। ডিএসসিসি এলাকায় প্রায় দেড়শ’ কিলোমিটার নর্দমা উন্মুক্ত রয়েছে জানিয়ে তাপস বলেন, এসব নর্দমা মশক প্রজনন ও বংশবিস্তারের ঘাঁটি। সেসব উন্মুক্ত নর্দমা পরিষ্কার করার কার্যক্রমও আমরা শুরু করেছি। এখন থেকে এসব নর্দমা মাসে অন্তত দুবার পরিষ্কার করার নির্দেশনা দিয়েছি। ময়লার কনটেনার রাস্তায় নয় ॥ ঢাকার রাস্তায় কোন ময়লা ফেলা যাবে না জানিয়ে তাপস বলেন, রাস্তায় ময়লা ফেলার কোন সুযোগ থাকবে না, এমনকি ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় যে সব ময়লার কনটেনার ছিল, সেগুলোও রাখা হবে না। তার যুক্তি, কনটেনারে বর্জ্য রাখা হলে তার পাশে রাস্তার ওপরেও ময়লার স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা যায়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ঢেলে সাজার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ডিএসসিসির ৭৫ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪টিতে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কয়েকটি ওয়ার্ডে জায়গা নির্ধারণ করা হলেও নানা জটিলতায় তা আটকে ছিল। আশা করছি এই ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা ৩১টি ওয়ার্ডে এসটিএস নির্মাণে সফল হব। পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে এসটিএস নির্মাণ করতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে আমি ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি। তিনি জানান, রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র থেকে আবর্জনা নিয়ে যাওয়া হবে মাতুয়াইল ভাগাড়ে (ল্যান্ডফিল)। রাত ৯টা থেকে পরিচ্ছন্নকর্মীরা ঢাকা শহরের রাস্তাগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করবেন। রাস্তাগুলো পরিষ্কার করার পর প্রয়োজন অনুসারে রাস্তায় পানি ছিটানো হবে এবং সকাল ৬টার মধ্যে একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ঝকঝকে নগরী আমরা ঢাকাবাসীকে উপহার দিতে চাই।
×