ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ৩১ জুলাই ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ চরম দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। দেশে দেশে করোনাভাইরাস। গিলে খাচ্ছে সব। ভাল নেই বাংলাদেশও। সংক্রমণ মৃত্যু যথারীতি অব্যাহত। বহু মানুষ চাকরি ব্যবসা হারিয়ে জীবনের সবচেয়ে কষ্টের সময় অতিক্রম করছে। একই কারণে বিবর্ণ ঢাকা। রাজধানী শহরে কত স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আসে! টিকে থাকার লড়াই করতে হয় বটে, এভাবে একসঙ্গে এত মানুষ ভেঙ্গে পড়ে না। মহামারীর কালে তা-ই হলো। হচ্ছে। এবং এ অবস্থার মধ্যেই এসেছে ঈদ। আগামীকাল শনিবার ঈদ-উল-আজহা। তবে আগের সেই উচ্ছ্বাস আনন্দ কিছুই নেই। নেই বলতে, অনেক কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। এবারও বন্ধ থাকছে ঢাকার সব বিনোদন কেন্দ্র। চিড়িয়াখানা বা জাতীয় জাদুঘর- কোথাও যাওয়া যাবে না। সব বন্ধ। শাহবাগের শিশুপার্কে চলছে সংস্কার কাজ। শ্যামলীর শিশু বিনোদনকেন্দ্রটিতে ঝুলছে তালা। ঢাকার আশপাশের থিমপার্কগুলোও চালু হচ্ছে না। ফ্যান্টাসি কিংডম বা নন্দনপার্কের রাইডে চড়া যাবে না। তারপরও ঈদ। এবারের ঈদে অবশ্য যানবাহন চলবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাইরেও বের হতে পারবেন ঢাকাবাসী। বের হন। তবে ওই যে স্বাস্থ্যবিধি, প্লিজ মেনে চলুন। পশু কোরবানি প্রসঙ্গে আসা যাক। কোরবানির পশু কেনা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। শুক্রবার ঈদের দিনে জবাই করা হবে। এজন্য বেশ কিছু স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫ ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে পশু কোরবানির জন্য একটি করে স্থান ঠিক করে দেয়া হয়েছে। উত্তরে আরও বেশি। ৫২ ওয়ার্ডের ২৫৪টি স্থানে কোরবানির পশু জবাইয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি দিলে গোটা শহর রক্তে মাখামাখি হয় না। নোংরা হয় না। দুর্গন্ধ ছড়ায় না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ হয়। সব দিক বিবেচনায় স্থানগুলো নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ফল পাওয়া যাবে কি? সংশয় আছে। ভেবে অবাক হতে হয়, রাজধানী শহরে বসবাস করেও বহু মানুষ ন্যূনতম নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে চান না। অভ্যস্থ নন। গতবছর কোরবানির ঈদে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৫০২টি এবং উত্তরে ২৭৩টি স্থান পশু জবাইয়ের জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন লাখ লাখ টাকা খরচ করে স্থান প্রস্তুত করলেও, বেশিরভাগই ব্যবহৃত হয়নি। এর চেয়ে হতাশার আর কী হতে পারে? রাজধানীর অসচেতন অংশটি যেখানে খুশি সেখানে পশু জবাই করে। তারপর যাচ্ছেতাইভাবে নোংরা করা স্থানটিতে আড়াই মগ পানি ঢেলে দায়িত্ব শেষ করেন। এবারও কি তা-ই হবে? যদি হয় তবে বিপদও অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি হবে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, আশপাশের পরিবেশ জীবাণুমুক্ত রাখা ভীষণ জরুরী। এ অবস্থায় দুই সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ফজলে নূর তাপস নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করার জোর আহ্বান জানিয়েছেন। এ আহ্বান কি যাবে কারও কানে? ইশ, যদি এবার অন্তত যেত! এর বাইরে আর যে কথাটি মনে রাখা চাই সেটি হলো, কোরবানি শুধু পশু জবাই নয়। মানুষের মনে যে পশু, সেটি জবাই করতে হবে। তবেই কাজে আসবে কোরবানির শিক্ষা।
×