ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোরবানির হাটে ক্রেতা থাকলেও বিক্রি কম

প্রকাশিত: ২২:৪০, ৩১ জুলাই ২০২০

কোরবানির হাটে ক্রেতা থাকলেও বিক্রি কম

রহিম শেখ ॥ রাত পোহালেই পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে অন্যবারের তুলনায় গত কয়েকদিনে হাটে ক্রেতা কম এলেও বৃহস্পতিবার থেকে পশু বেচা-কেনা বেড়েছে। হাটে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু থাকলেও ক্রেতারা বলছেন, ব্যাপারীরা দাম ছাড়ছেন না। দাম বেশি চেয়ে বসে থাকছেন। অন্যদিকে ব্যাপারীরা বলছেন, বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। বড় গরুর ক্রেতা কম আসছে। তবে শেষ দিকে ভাল ব্যবসার আশায় দিন গুনছেন ব্যবসায়ীরা। তবে হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেক ব্যবসায়ী। তারা বলছেন, পশুর হাটেও মহামারী করোনার প্রভাব পড়েছে। রাজধানীর আফতাবনগর, কমলাপুর, লালবাগ, মোহাম্মদপুর ও গাবতলীর পশুর হাট ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। এদিকে রাজধানীর কোরবানির হাটগুলো চালু হওয়ার পর অনলাইন হাটে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব)। কোরবানি উপলক্ষে রাজধানীর হাজারীবাগের লেদার টেকনোলজি কলেজের মাঠে স্থাপিত গবাদি পশুর অস্থায়ী হাটে রাজবাড়ী থেকে গত মঙ্গলবার আটটি গরু নিয়ে এসেছিলেন ডাবলু মোল্লা। এ পর্যন্ত তিনটি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন তিনি। এ তিনটি গরু বিক্রি করেছেন বৃহস্পতিবারই। হতাশাঝরা কণ্ঠে তিনি বলছিলেন, গত কয়েকদিন ধরেই ক্রেতার উপস্থিতি খুব কম। মহামারী করোনার কারণে যে অবস্থা, ঈদের আগের দিনও মানুষজন হাটে আসবে কিনা আমার সন্দেহ। এই গরুগুলো যদি বিক্রি না করতে পারি, তাহলে আমি জানি না এগুলো দিয়ে কী করব। গত এক-দেড় বছর ধরে নিজের সব পুঁজি দিয়ে এই গরুগুলো আমি লালন-পালন করেছি। কিন্তু এখন যদি একটা ভাল দাম না পাই তবে আমাকে লোকসান গুনতে হবে। ঈদের আর মাত্র দুদিন বাকি থাকায় ডাবলু মিয়ার মতো গরু নিয়ে ঢাকায় আসা এমন শত শত ব্যবসায়ীর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তাদের শঙ্কা বর্তমান পরিস্থিতিতে এত কষ্ট করে ঢাকায় নিয়ে আসা সব গরু বিক্রি নাও হতে পারে। কয়েক ছোট ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, এই ঈদে বিক্রি না হলে আরও একবছর এই প্রাণীগুলোকে লালন-পালন করতে হবে যা তাদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরই আশা, শেষ মুহূর্তে বেচা-কেনা ভাল হবে। কুষ্টিয়া থেকে আরেক ব্যবসায়ী মোঃ রাসেল হাজারীবাগের এই কলেজ মাঠেই এসেছিলেন ১৮টি গরু নিয়ে। তবে এই ব্যবসায়ী অনেকটা আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, ঝুঁকি হলো আমাদের ব্যবসার একটা অংশ। এবার ক্রেতারা বাজারে একেবারে কম আসায় আমরা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সবকিছুরই একটা সমাধান আছে। এখানে বিক্রি না হলে আমি এলাকায় নিয়ে কসাইদের কাছে বিক্রি করে দেবো। যাত্রাবাড়ী থেকে কমলাপুর হাটে আসা আজগার আলী নামে এক ক্রেতা জানান, হাটে অনেক গরু এসেছে। গত বছর যে গরু ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকায়। আরেক ক্রেতা বায়েজিদ আলম বলেন, ‘ঈদের এক দিন আগে গরু কিনব। একটু সময় নিয়ে কোরবানির পশু দেখেশুনে কিনতে চাই। আপাতত দামদর যাচাই করছি। ব্যাপারীরা দাম ছাড়তে চাইছেন না। তবে পছন্দ হলে গরু কিনে ফেলব।’ এবার গাবতলীর হাটে বড় গরুর সংখ্যা বেশি। হাটটিতে গরু-ছাগলের পাশাপাশি উট ও দুম্বা তোলা হয়েছে। দুবাই থেকে আনা দুম্বাগুলোর দাম চাওয়া হচ্ছে ১ লাখ থেকে আড়াই লাখ পর্যন্ত। তবে একজন বিক্রেতা জানালেন, ৭০ হাজার টাকায় একটি দুম্বা বিক্রি হয়েছে। বড় বড় গরু দেখতে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি ভেঙ্গে ভিড় করছে। হাটের প্রতিটি গেটে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও নিয়ম মানছে না তারা। ফলে মহামারী করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন অনেকে। গাবতলী হাটে কথা হয় রাজধানীর মিরপুর পল্লবী এলাকার বাসিন্দা মোঃ সারোয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, গরুর দাম একটু বেশি। হাটে দুই ঘণ্টা ঘুরে একটা গরু আর একটা ছাগল কিনেছি। গরুর দাম নিয়েছে হাসিলসহ এক লাখ ২৩ হাজার টাকা আর ছাগলের দাম নিয়েছে ১৪ হাজার টাকা। মনে হচ্ছে এবার ঈদের আগের রাতে দাম কমে যাবে। পোস্তগোলা থেকে গাবতলী হাটে এসেছেন ব্যবসায়ী মোঃ আলম। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় হাটে এসেছি। তিন ঘণ্টা ঘুরে গরু কিনলাম। আমি গরু কিনেছি এক লাখ ৩৬ হাজার টাকা দিয়ে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাটে গরুর দামও বেেেড়ছে বলে জানালেন মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে আসা মোঃ জামাল হোসেন নামের এক ক্রেতারা। তিনি বলেন, আমি হাট ঘুরে দেখলাম পর্যাপ্ত গরু আছে। ব্যাপারীরা দাম চেয়ে বসে থাকছেন। দাম ছাড়ছেন না। তিন ঘণ্টা বাজার ঘুরে গরু কিনেছি। আমার গরুর দাম হাসিলসহ পড়েছে ৮২ হাজার টাকা। মেহেরপুর থেকে গাবতলী হাটে এসেছেন মোঃ আমিনুল ব্যাপারী। তিনি বলেন, আমি এবার হাটে দশটি গরু নিয়ে এসেছি। আমার সব গরু ছিল গৃহস্থের। বুধবার রাত থেকে সকালের মধ্যে আমার ৪টি গরু বিক্রি করে ফেলেছি। এখনও বিক্রি বাকি আরও ৬টি। জানালেন, গতবারও হাটে গরু এনেছিলাম, কিন্তু লাভ করতে পারিনি। এবার যে দাম পেয়েছি কোনমতে অল্প লাভে বিক্রি করে দিয়েছি ৪টি গরু। মানিকগঞ্জের ব্যাপারী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাটে ক্রেতা বাড়লেও বিক্রি খুব বেশি বাড়ছে না। বেশিরভাগ ক্রেতাই ছোট আর মাঝারি গরু খুঁজছেন। ছোট গরুর চাহিদা খুব বেশি। আমি পাঁচটি বড় গরু মানিকগঞ্জ থেকে এনেছি। গরুগুলোর দাম খুব কম ক্রেতা জানতে চাচ্ছেন। গাবতলী পশুর হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, আগের তুলনায় বৃহস্পতিবার থেকে বেচা-কেনা বেড়েছে। তবে আমাদের আশা অনুযায়ী বেচা-কেনা হচ্ছে না। ঈদের আগের রাতে কী হবে আগে থেকে কিছু বলা যাচ্ছে না। করোনাভাইরাস আর বৃষ্টির কারণে শেষ দিন বেচা-কেনা কম হতে পারে বলে জানালেন তিনি। শাহজাহানপুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, সাদা একটি গরুর পাশে ভিড়। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ঝিনাইদহ থেকে নিয়ে আসা গরুটির নাম রাখা হয়েছে ‘সাদাপাহাড়’। ব্যাপারী আজিজ মিয়া জানালেন, তিনি দাম হাঁকছেন ১০ লাখ টাকা। গরুটি কিনলে ক্রেতা পাবেন অন্য একটি ছোট গরু ফ্রি। আজিজের দাবি, সাদাপাহাড়ের দাম উঠেছে ৬ লাখ টাকা। কমলাপুর ও শনির আখড়া হাটে গিয়ে দেখা গেছে প্রচুর গরু। কিন্তু ক্রেতা কম। গত কয়েকদিন আগের বৃষ্টির পানিতে হাটের মাখামাখি অবস্থা। হাজারীবাগ হাটে গার্মেন্ট ব্যবসায়ী মুজাফফর হোসেন বলেন, ‘গরুর দাম বেশি চাইছেন ব্যাপারীরা। অযাচিত দাম চাইলে কিনব কেমন করে?’ দাম নিয়ে ক্রেতাদের এমন ‘আপত্তি’র সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে আসা ব্যাপারী জহির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি ১২টা গরু আনছি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬টি গরু বিক্রি করেছি। বাকিগুলোর সাইজ একটু বড় হওয়ায় দু-একজন দাম জিজ্ঞাসা করছেন। সামান্য লাভ পেলেই বিক্রি করে দেব।’ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথের দুই পাশে কমরূপুরে পশুর হাট বসানো হয়েছে। এ ছাড়া এলাকার বিভিন্ন অলিগলি ও সড়কপথে পশুর হাট বসেছে। বাসাবাড়ির সামনের সড়কে গরু রাখা হয়েছে। এতে যেমন চলাচলের দুর্ভোগ, তেমন করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কমলাপুর, মেরাদিয়া বাজার, কচুক্ষেত বাজার ও দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন এলাকায়। এসব এলাকার অস্থায়ী পশুর হাটের কোন সীমানা নেই। ঝিনাইদহের খামারি হাকিম মিয়া জানান, মঙ্গলবার ১২টি গরু নিয়ে তিনি কমলাপুরের হাটে এসেছেন। এখন পর্যন্ত ৪টি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। হাকিম মিয়ার মতো অনেকেই রাজধানীর বিভিন্ন হাটে কোরবানির পশু নিয়ে এসেছেন। তবে ক্রেতা সঙ্কটে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। বাবু সরকার নামে একজন বিক্রেতা জানান, তিনি যে দামে বিক্রির আশায় হাটে গরু এনেছেন, সে দামের ধারেকাছে কেউ বলেনইনি। বাজেট কম বলে জানাচ্ছেন ক্রেতারা। গোপীবাগ রেললাইনের পাশে ১৫টি গরু নিয়ে অবস্থান করছেন ফরিদপুরের ব্যাপারী ফারুক মিয়া। তিনি বলেন, ‘ভাই, আমরা জানতাম হাট শুরু হবে ঈদের পাঁচ দিন আগে। তাই সাত দিন হাতে নিয়ে রবিবার কমলাপুর হাটে আসি। কিন্তু হাটের ভিতরে কোন জায়গা নেই। তাই হাট ব্যবস্থাপনার লোকেরা রেললাইনের পাশে জায়গা দিয়েছেন। ১৫টি গরুর জন্য ১৫ হাজার টাকা ভাড়া নিয়েছেন। আমরা তো ইচ্ছা করে এখানে বসি নাই।’ কয়েক ক্রেতা বলছেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় গরু লালন-পালনে সমস্যার কারণে ঈদের একদিন আগে তারা গরু কিনবেন। এখন তারা বিভিন্ন হাটে গিয়ে দর যাচাই করছেন। সময় এলে কাক্সিক্ষত হাট থেকে গরু কিনবেন। কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, আশানুরূপ ক্রেতা নেই। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না ব্যবসায়ীরা। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। বড়দের সঙ্গে শিশুরাও হাটে আসছে। সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে সড়ক, রেলপথ ও বাসাবাড়ির সামনে গরুর হাট বসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণে পশুর হাট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এদিকে সারাদেশ থেকে ব্যাপারীরা ট্রাকে পশু নিয়ে হাটে এসে যত্রতত্র বসছেন। এভাবে হাটে অবাধে বেচাকেনা ও ঘুরে বেড়ানোর কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে পারে। সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ২৮ জুলাই থেকে চাঁদরাত পর্যন্ত অস্থায়ী পশুর হাট কার্যকর থাকবে। কিন্তু ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে ১৭টি পশুর হাট ২০ জুলাই বসানো শুরু হয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যার কারণে অনেক ব্যাপারী আগেভাগেই পশু নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছেন। তাই ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর অনেক ব্যাপারী দেরিতে আসায় মূল হাটে জায়গা না পেয়ে আশপাশে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। পশুর হাটে মেডিক্যাল-মনিটরিং টিম ॥ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন কোরবানির পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিমের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মেডিক্যাল টিমসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি তদারকির জন্য গতকাল কার্যক্রম শুরু করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গঠিত মনিটরিং টিম। এ কার্যক্রমের জন্য ইতোমধ্যে আটটি মনিটরিং টিম গঠন করেছে মন্ত্রণালয়। প্রতিটি টিমে মন্ত্রণালয়ের একজন করে উপসচিবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এদিকে কোরবানির পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিক্যাল সেবা কার্যক্রম পরিচালনায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন হাটগুলোয় গতকাল সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের গঠিত ১৮টি ভেটেরিনারি ও একটি বিশেষজ্ঞ ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম। শুক্রবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভেটেরিনারি মেডিক্যাল সেবা দেবে এ টিম। এ ছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উদ্যোগে সারাদেশে কোরবানির পশুর হাটেও কাজ শুরু করছে ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম। কোরবানির পশুর হাটে রোগাক্রান্ত ও কোরবানির অনুপযোগী গবাদি পশু বিক্রি বন্ধসহ সুস্থ-সবল পশু বিক্রি নিশ্চিত এবং গবাদি পশুর তৎক্ষণাৎ চিকিৎসাসেবা দিতে ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিমগুলো কাজ করবে। হাটে চাঁদাবাজি, মস্তানি বরদাশ্ত করা হবে না বললেন উত্তরের মেয়র ॥ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজসংলগ্ন মস্তুল ডুমনী কোরবানির পশুর হাট পরিদর্শন করেছেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার মস্তুল ডুমনী বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গায় স্থাপিত অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট ঘুরে দেখেন এবং গবাদি পশু ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। পরিদর্শন শেষে ব্রিফিংয়ে মেয়র বলেন, এ বছর মহামারীর মধ্যেই পশু কোরবানি দিতে হচ্ছে। মহামারী মোকাবেলা করেই পশু কোরবানি দিতে হবে। এটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। আমরা দেখতে পাচ্ছি, বারবার বলার পরও দু-একজন শিশুদের নিয়ে হাটে এসেছেন। উনারা যদি নিজেদের সুরক্ষার বিষয়টি না বোঝেন, তাহলে বোঝানো কঠিন। তিনি বলেন, আমাদের মনিটরিং কমিটি বিভিন্ন হাট নিয়মিত পরিদর্শন করছে। প্রতিটি হাটে ম্যাজিস্ট্রেট আছেন। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি। আপনারাও এগিয়ে আসুন। তাহলেই মহামারী চ্যালেঞ্জকে আমরা মোকাবেলা করতে পারব। হাটে কোন চাঁদাবাজি, মস্তানি বরদাশ্ত করা হবে না। তিনি আরও বলেন, ডিএনসিসির ডিজিটাল গরুর হাট আছে, সেখান থেকেও পশু কিনতে পারেন। আমি অনুরোধ করব ডিজিটাল হাট থেকে পশু কোরবানি দিন। অনলাইনে পশু কোরবানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বছিলায় পশুকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হালাল উপায়ে কোরবানি দিয়ে মাংস প্রস্তুত করে বাসায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ২৫৬টি স্থানে কোরবানি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপনারা মেহেরবানি করে পশু কোরবানি দেয়ার পরে বর্জ্য নির্দিষ্ট ব্যাগে রেখে দিন। ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তা সংগ্রহ করবেন। অনলাইন হাটে ভিড় ॥ রাজধানীর কোরবানির হাটগুলো চালু হওয়ার পর অনলাইন হাটে মানুষের আগ্রহ না কমে বরং বেড়েছে বলে দাবি করেছে ই-ক্যাব। ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল জনকণ্ঠকে বলেন, প্রচলিত হাটের সঙ্গে অনলাইন মার্কেট প্লেসগুলোতে দামের পার্থক্য দেখে প্রচুর ক্রেতা এখন ডিজিটালি গরু কিনছেন। গত দুই দিনে অনলাইন মার্কেট প্লেসগুলো থেকে হাজারের বেশি গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি। তমাল বলেন, ক্রেতাদের অনলাইন হাট থেকে পশু কেনার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে গত ২ দিন ধরে। বিশেষ করে রাজধানীর গরু হাটগুলো চালু হওয়ার পর। যখনি ক্রেতারা হাটে গিয়ে এবং অনলাইন ভিজিট করে গরুর দামের পার্থক্য দেখছে তখনি প্রচুর ক্রেতা সমাগম ও বিক্রি বেড়ে গেছে অনলাইনে। করোনাভাইরাস মহামারীকালে কোরবানির পশু কেনাবেচায় গত ১১ জুলাই থেকে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ডিজিটাল হাট’র যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ক্রেতাদের ধারণা পাল্টে গেছে দাবি করে তমাল বলেন, ‘অনেকের ধারণা ছিল, ঢাকার গরুর হাটগুলো শুরু হলে অনলাইনে বেচাকেনা কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সাধারণ হাটের চেয়ে ই-কমার্স শপগুলোতে দাম কম। তাই হাট চালু হওয়ার পর ই-কমার্স শপগুলোর বেচাকেনা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম এ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহ ইমরান বলেন, আমাদের বেশিরভাগ গরুই ডিজিটাল স্কেলে ওজন মাপা। যেসব গরু বাইরে থেকে আসবে তাদের গরুগুলো ঈদের আগের দিন ওজন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। সুতরাং এখানে কোন প্রতারণার সুযোগ নেই। গতবারের তুলনায় এবার অনলাইনে কয়েকগুণ বেশি গরু বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ছোট আকারের গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে। বড় গরুর বিক্রি নেই বললেই চলে। ডিএনসিসির ডিজিটাল হাটের সঙ্গে যেসব অনলাইনশপ যুক্ত হয়েছে যেগুলো হলো- দারাজ, ইভ্যালি, আজকেরডিল, গরুহাট, কোরবানি হাট, দেশিগর, সবজিবাজার, গ্রামীণফ্রেন্ডস, জারিফা বাণিজ্যালয়, আহনাফ এগ্রো, বিডিসেল, ই-সদাই, রেইনফরেস্ট, যাচাই, আনন্দমেলা, ঢাকা বস, ঢাকার দোকান, ফার্ম এগ্রো, ফ্যামিলি বাজার। এছাড়া রয়েছে পরানবাজার, ভিআইডি বাজার, হাংরি নাকি, একশপ, ফুড ফর নেশন, ফ্রেসবিঙ্গার, হাম্বাফার্ম, হাম্বাহাম্বা ডট কম, নন্দনা, বিশালহাট, উডল্যান্ড, জিনিসমার্ট, শপআপ, সওদাগর, সেরাবাংলা৬৪, সবকিছু, সাদিক এগ্রো, খাঁটি, প্রিয়শপ, পারমিদা, প্রগা এগ্রো, অনলাইন মুদি, কাজী টেকনোলজিসহ ৫৫টি অনলাইন।
×