ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ

ঈদের সময় জঙ্গী ধরতে সীমান্তে রেড এলার্ট, সাঁড়াশি অভিযান চলবে

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ৩১ জুলাই ২০২০

ঈদের সময় জঙ্গী ধরতে সীমান্তে রেড এলার্ট, সাঁড়াশি অভিযান চলবে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ সারাদেশে বিশেষ সতর্কতা জারির পর জঙ্গী গ্রেফতারে ঈদের সময়কে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কারণ পলাতক জঙ্গীদের অনেকেই ঈদের সময় নাড়ির টানে সীমান্ত পথে দেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। আবার দেশেই পলাতক জঙ্গীরা ঈদের সময় সীমান্ত পথে পালিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করে। এমন সুযোগটিকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঈদের সময় জঙ্গীদের গ্রেফতারে বাংলাদেশ ও ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করবে। ইতোমধ্যেই দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পলাতক জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের ছবিসহ তালিকা হাতবদল হয়েছে। জঙ্গীদের অনুপ্রবেশ ও পলায়ন ঠেকিয়ে তাদের গ্রেফতার করতে স্থল সীমান্তে বাংলাদেশ ও ভারত রেডএলার্ট জারি করেছে। দুই দেশের সীমান্তবর্তী স্থানগুলোতে মাঝে মধ্যেই সাঁড়াশি অভিযান চলছে। গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই পুলিশ সদর দফতরের তরফ থেকে সারাদেশের পুলিশের সব ইউনিটকে জঙ্গী হামলার আশঙ্কায় বিশেষভাবে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। ছদ্মবেশে জঙ্গীরা হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই কূটনৈতিক পাড়াসহ দেশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সব স্থাপনায় সিসি ক্যামেরার মনিটরিং ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। পনেরো থেকে ত্রিশ বছর বয়সী জঙ্গীরা আচমকা হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে পুলিশ সদর দফতরের বার্তায়। নেপথ্যে ইসলামিক স্টেট বা আইএস মদদ যোগাচ্ছে বলে ধারণা করছে গোয়েন্দারা। টহল ও চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশস্থ মার্কিন ও ভারতীয় এবং মিয়ানমারের দূতাবাসহ সব দূতাবাস ও চ্যান্সরি অফিসের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বিদেশী স্কুলসহ বিভিন্ন কিছুর ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোঃ কামরুল আহসান জনকণ্ঠকে জানান, ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় ঈদ গা মাঠে জঙ্গী হামলার চেষ্টাকালে গোলাগুলিতে ও গ্রেনেড হামলায় দুই পুলিশ, এক নারী ও এক জঙ্গীর ঘটনা মাথায় রেখেই এবার নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। জঙ্গী গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান চলছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, তালিকাভুক্ত জঙ্গীদের সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানতে পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। কারণ অনেক সন্ত্রাসী ও জঙ্গী নাম ঠিকানা পরিবর্তন করে ভুয়া নামে পাসপোর্ট তৈরি করে। পরবর্তীতে তারা এসব পাসপোর্টের মাধ্যমে বৈধপথে দেশ ত্যাগ করে। এসব ক্ষেত্রে তাদের শনাক্ত করা বা গ্রেফতার করা কঠিন হয়ে পড়ে। ভারতের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বাছাই অব্যাহত আছে। কোন তথ্য জানা মাত্রই তারা বিনিময় করা হচ্ছে। বিদেশে পলাতক থাকা বাংলাদেশী জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা বেনামে দেশটিতে আত্মগোপন করে আছে। অনেকের কাছেই বৈধ পাসপোর্ট রয়েছে। সেই পাসপোর্ট মোতাবেক পলাতকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন ইউনিটের কাছেই কোন অভিযোগ নেই। অথচ প্রকৃতপক্ষে এসব পলাতকদের শতভাগই বাংলাদেশের মোস্টওয়ান্টেড আসামি। দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গীরা বাংলাদেশ ও ভারতে ছদ্মনামে আত্মগোপনে করে রয়েছে। হলি আর্টিজান রেস্তুরাঁ ও বেকারিতে জঙ্গী হামলার অন্যতম পরিকল্পনা এবং অস্ত্রগোলাবারুদ সরবরাহকারী সোহেল মাহফুজ গ্রেফতার হওয়ার পর সে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার দীর্ঘ ১৫ বছর পর হাতকাঁটা মাহফুজকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশের পুলিশ। অথচ মাহফুজ ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর ভারতে আত্মগোপনে ছিল। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবির আস্তানায় বিস্ফোরণের ঘটনা না ঘটলে হয়ে তো কোন দিনই মাহফুজের নাম প্রকাশ পেত না। খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পর ভারতীয় গোয়েন্দাদের গভীর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশী জঙ্গী নসরুল্লাহর নাম। পরবর্তীতে নসরুল্লাহ সম্পর্কে বাংলাদেশী গোয়েন্দারা ব্যাপক অনুসন্ধান করার পর জানতে পারে, নসরুল্লাহ হচ্ছে বাংলাদেশের হাতকাঁটা মাহফুজ। ডান হাত না থাকার কারণে তাকে শনাক্ত করতে সহজ হয় বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দাদের। ভারতের মোস্টওয়ান্টেড আসামি নসরুল্লাহকে জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দিতে সে দেশটি ১০ লাখ রুপী পুরস্কার ঘোষণা করে। মাহফুজ জঙ্গী সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক, জঙ্গীদের অর্থায়ন, কোন কোন দেশের কি পরিমাণ জঙ্গী ভারতে রয়েছে এসব সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ডিআইজি মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, ঈদকে প্রাধান্য দিয়ে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান চলছে। বিজিবি সূত্র বলছে, ঈদে সীমান্ত পথে অনেকেই দুই দেশে যাতায়াত করেন। ব্যবসা, চিকিৎসা, বেড়ানো ও ঈদ উপলক্ষে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সুযোগটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে জঙ্গীরা। তারা ঈদের অনেক আগেই সীমান্তবর্তী স্থানগুলোতে আশ্রয় নেয়। এরপর সুযোগ বুঝে দেশে অনুপ্রবেশ বা দেশত্যাগ করার চেষ্টা করে। এজন্য বাংলাদেশ ও ভারত এবার সীমান্তবর্তী স্থানগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে।
×