ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বোচ্চ ত্যাগের দিন ॥ পবিত্র ঈদ-উল আজহা কাল

প্রকাশিত: ২২:৩১, ৩১ জুলাই ২০২০

সর্বোচ্চ ত্যাগের দিন ॥ পবিত্র ঈদ-উল আজহা কাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ত্যাগের মহিমা নিয়ে বছর ঘুরে আবার এসেছে ঈদ-উল আজহা। আগামীকাল শনিবার দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঘরে ঘরে পালিত হবে ঈদের উৎসব। সারাদেশ টানা পাঁচমাস ধরে করোনায় আক্রান্ত। এর মধ্যেই চলছে স্মরণকালের দীর্ঘস্থায়ী বন্যা। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী। বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট। করোনা ও বন্যার ধকল সহ্য করেও সর্বোচ্চ ত্যাগের প্রস্তুতি নিয়েছে বাঙালী মুসলমানরা। গবাদিপশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহ্র প্রতি অপার আনুগত্য এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বহির্প্রকাশ ঘটাবেন এদিনে। শনিবার সকালে ঈদের নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর নামে পশু কোরবানিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। তবে ঈদ-উল-ফিতরের মতো ঈদ-উল-আজহার উৎসবও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হাটে পশু কেনা-বেচা চলছে। এবারও ঈদের নামাজ মসজিদে আদায় করার জন্য আগেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ফলে করোনার কারণে ঈদ-উল-আজহায়ও ঈদগাহে হচ্ছে না কোন জামাত। মসজিদেই আদায় করতে হবে। নামাজ শেষে কোলাকুলির দৃশ্যও এই ঈদে চোখে পড়বে না। সামাজিক দূরত্ব মেনে এক কাতার অন্তর তিনফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। এছাড়া রাজধানীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কোরবানি করার জন্য ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশন থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মাইকিংয়ের মাধ্যমে এ বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। গত মার্চ মাসের ৮ তারিখ থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এর পর এই ভাইরাস দেশে মহামারী আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই তিন হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। মারাত্মক এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে প্রথমদিকে সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও জীবিকার প্রয়োজনে তা শিথিল করা হয়েছে। করোনার প্রভাবে দেশের অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত ঠিক তখনি দেশে বন্যা হানা দিয়েছে। টানা ৩৫ দিন ধরে দেশের লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী। প্রতিদিনই ডুবছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যার্ত এলাকায় জীবন-জীবিকা সচল করার জন্য সরকারের ত্রাণ তৎপরতা চলছে। ঠিক এমনি এক কঠিন পরিস্থিতিতে খুশির বারতা নিয়ে এসেছে ঈদ-উল-আজহা। হাজারো কষ্টের মধ্যে থেকেও ঈদের দিন আনন্দের বহির্প্রকাশ থাকবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঘরে ঘরে। এদিকে ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয নেত্রী রওশন এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা দেশবাসীকে পবিত্র ঈদ-উল-আজহার শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। কোরবানির মহান ত্যাগে বলীয়ান হয়ে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বছর ঘুরে আবার পবিত্র ঈদ-উল-আজহা আমাদের মাঝে এসেছে। পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে আপনাকে এবং আপনার পরিবারের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। করোনাভাইরাস মহামারীর সব অন্ধকার কাটিয়ে ঈদ-উল-আজহা সবার মাঝে আনন্দ বয়ে আনবে। ত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। করোনাভাইরাসের বিস্তার বন্ধে স্বাস্থ্য নির্দেশিকাগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য সকলকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘ভাল থাকুন এবং সুরক্ষিত থাকুন, ঈদ মোবারক!’ একটি অডিও বার্তায় দেশবাসীকে তিনি ঈদ-উল-আজহার শুভেচ্ছা জানান। মোবাইল ব্যবহারকারীদের কাছে তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বার্তাটি পৌঁছানো হয়। রাত পোহালেই পালিত হবে ঈদ-উল-আজহা। ত্যাগ স্বীকারের অনন্য মহিমার দিন ঈদ-উল-আজহা। বিশ্বের মুসলমানদের অন্যতম প্রধান পবিত্র ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানও এটি। দিনটিকে ঘিরে ইতোমধ্যে সারাদেশে শুরু হয়েছে আনন্দ ও উৎসবের বন্যা। অনেকেই এখন সাধ্যমতো কোরবানির কেনাকাটায় ব্যস্ত। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই রাজধানী ঢাকায় অন্যান্যবারের ন্যায় এবারও বসেছে কোরবানির একাধিক পশুর হাট। তবে গতবারের মতো এবার পশুহাটের কেনাবেচায় আনন্দ নেই। পরিবারের সবাই দলবেঁধে ছুটতে পারছে না কোরবানির পশু কিনতে। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী পশুর হাটে একসঙ্গে দুজনের বেশি প্রবেশ করা যাবে না। ফলে এবার হাটে কেনাবেচা থাকলেও ভিড় অনেক কম। এর বাইরে এবার অলনাইনে জমে উঠেছে কেনাবেচনা। অনেকে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে অনলাইনেই কেনাবেচার ওপর নির্ভর করছেন। ১ কোটি ১৯ লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত ॥ কোরবানির জন্য এবার দেশে এক কোটি ১৯ লাখ গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাবে দেশে ১ কোটি ১৯ লাখ পশু রয়েছে। এর মধ্যে কোরবানির জন্য প্রয়োজন হবে ১ কোটি ১০ লাখের মতো। গতবার ১ কোটি ৬ লাখ পশু কোরবানি হয়েছিল। ফলে দেশের পশুই মেটাবে কোরবানির চাহিদা। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে, কোরবানিযোগ্য পশুর যোগান চাহিদার চেয়ে বেশি রয়েছে। তারা জানায়, এবার করোনার কারণে কোরবানির পশুর উৎপাদন কমলেও বড় আকারে কমেনি। কোরবানি উপলক্ষে অনেকে সিজনাল খামারি হয়ে যান। কিন্তু ৪/৫ মাস ধরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চলমান থাকায় তারা সেটা করতে পারেননি। সংখ্যায় কমলেও এক কোটি ১৯ লাখ পশু এবার কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত। এবারও কোন সঙ্কট হবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু বিক্রি করতে পারলেই হলো। তারা জানায়, সাধারণত আগের বছরের জবেহ হওয়া পশুর সংখ্যার সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ যোগ করে চলতি বছরের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এবার সবারই আয়-রোজগার কমেছে, চাহিদা আরও কমবে। তাই এবার এক কোটি ১৯ লাখ কোরবানির পশু পর্যাপ্ত উল্লেখ করেন প্রতিষ্ঠানটি কর্মকর্তারা। তারা জানান, করোনাকালেও নিজ উৎপাদনে কোরবানির চাহিদা মেটানো হচ্ছে। ঈদের নামাজের বিধিনিষেধ ॥ গত ঈদ-উল-ফিতরের ন্যায় এবারও ঈদ-উল-আজহার নামাজ মসজিদে বসেই আদায় করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আগেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত ১৪ জুলাই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে ঈদ-উল-আজহার নামাজ আদায়ে ভাইরাস সংক্রমণ রোধে মসজিদে জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করতে হবে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে মুসল্লিদের জীবন ঝুঁকি বিবেচনা করে এ বছর ঈদ-উল- আজহার জামাত ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে নিকটস্থ মসজিদে আদায় করতে হবে। প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত আদায় করা যাবে। ঈদের নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের পূর্বে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন। প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে অজু করে মসজিদে আসতে হবে। অজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিত করতে মসজিদে অজুর স্থানে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবানপানি রাখতে হবে। ঈদের নামাজের জামাতে আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না। ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে এবং এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে। শিশু, বৃদ্ধ, যে কোন ধরনের অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদেও সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ করবেন না। সর্বসাধারণের সুরক্ষার নিমিত্ত স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধকল্পে মসজিদে জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করতে হবে। পশু কোরবানির ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। বায়তুল মোকাররমে ৬টি ঈদের জামাত ॥ প্রতিবছর ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আজহায় দেশের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, কূটনীতিকসহ দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ঈদ থেকে ঈদগায় জামাত হচ্ছে না। এর বদলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এর পর এখানে পর্যায়ক্রমে আরও ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ জামাত বেলা ১১টা ১০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন হাফেজ মুফতি মাওলানা মোঃ মিজানুর রহমান, সিনিয়র পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ। দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে, তৃতীয় জামাত সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে, চতুর্থ জামাত সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে, পঞ্চম জামাত সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে, ৬ষ্ঠ ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে বেলা ১১টা ১০ মিনিটে। কোরবানির গুরুত্ব ও মর্যাদা ॥ ইসলামের পরিভাষায় কোরবানি হলো নির্দিষ্ট পশুকে একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে তারই নামে জবেহ করা। ঈদ-উল-আজহার অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে, মনের পশু অর্থাৎ কুপ্রবৃত্তিকে পরিত্যাগ করা। জাতীয় কবির ভাষায় ‘মনের পশুরে কর জবাই, পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই...’। পবিত্র হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রতিবছর জিলহজ মাসের দশ তারিখে বিশ্ব মুসলিম ময়দানে নামাজ আদায়ের পর যার যা সাধ্য ও পছন্দ সে অনুযায়ী পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। আরবী ‘আযহা’ এবং ‘কোরবান’ উভয় শব্দের অর্থ হচ্ছে উৎসর্গ। কোরবানি শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে আত্মত্যাগ, আত্মোৎসর্গ, নিজেকে বিসর্জন, নৈকট্য লাভের চেষ্টা ও অতিশয় নিকটবর্তী হওয়া। ইসলামী বিধান অনুযায়ী জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোন একদিন কোরবানি করা যায়। গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা শ্রেণীর অন্য প্রাণী কোরবানি করা যায়। কোরবানিকৃত পশুর ৩ ভাগের ১ ভাগ গরিব-মিসকিন, একভাগ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়। আবার পুরোটাই বিলিয়ে দেয়া যায়। কোরবানির ইতিহাস অতি প্রাচীন। মহান আল্লাহ ইব্রাহীম (আঃ)কে তাঁর শেষ বয়সে প্রিয়তম পুত্র ইসমাইল (আঃ)কে কোরবানি করার নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় ছেলেকে কোরবানি দেয়া তাঁর এক কঠিন পরীক্ষা। কিন্তু তিনি তাঁর মহান রবের হুকুমে নত হলেন। নিষ্পাপ পুত্র ইসমাইলও (আঃ) নিজেকে আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। এক পর্যায়ে পিতা তাঁর পুত্রকে জবাই করতে যখন উদ্যত ঠিক তখনই মহান আল্লাহর কাছে ইমানের কঠিন পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হলেন। আল কোরানে এই মহিমান্বিত ত্যাগের ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘অতঃপর সে (ইসমাইল) যখন পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো তখন ইব্রাহীম (আঃ) তাকে বললেন, হে বৎস্য! আমি স্বপ্ন দেখেছি তোমাকে কোরবানি করছি। এখন তোমার অভিমত কী? সে বললো, হে পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তাই করুন। যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং ইব্রাহীম (আঃ) তাকে জবাই করার জন্য শায়িত করলেন তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইব্রাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সৎকর্মীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে জবাই করার জন্য দিলাম এক জন্তু।’ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর অনুপম ত্যাগের অনুসরণে বিশ্ব মুসলমানরা কোরবানি করে আসছেন। তারই নিদর্শনস্বরূপ প্রতিবছর হজ পালনকারীরা পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। প্রায় ৪ হাজার বছর আগে হযরত ইব্রাহীম (আ.) পুত্র কোরবানির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় প্রতিবছরই পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহপাকের আনুগত্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন। সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহম্মদও (সা.) এই আদর্শ অনুসরণ ও বহাল রাখতে আদিষ্ট হন। তিনিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন এবং তার উম্মতদের জন্য এই আদর্শ ও প্রথা অনুসরণের কঠোর নির্দেশ দিয়ে গেছেন। সেই থেকে প্রতিবছর ঈদ-উল-আজহায় মুসলমানরা কোরবানি করে আসছেন। কিয়ামত পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
×