ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিদ্ধান্ত গ্রহণে তরুণ নেতৃত্ব

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ৩১ জুলাই ২০২০

সিদ্ধান্ত গ্রহণে তরুণ নেতৃত্ব

করোনাভাইরাস মহামারী পরবর্তী বৈশ্বিক সমস্যা ও অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় সৃজনশীল চিন্তাভাবনা নিয়ে তরুণ নেতৃত্বকে সামনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার প্রধানমন্ত্রী দুদিনব্যাপী ‘ঢাকা-ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ২০২০’-এর ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান। পাশাপাশি ‘সমতা ও সমৃদ্ধি : একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী ‘রেসিনেন্ট যুব নেতৃত্ব শীর্ষ সম্মেলন’-এরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা ওআইসির মহাসচিব এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বক্তব্য রাখেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে বছরব্যাপী নানা উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে একে কেন্দ্র করে। বর্তমান বাস্তবতা এই যে, করোনা বা কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বের অন্তত ১১৪টি দেশে হামলা চালিয়ে বহু মানুষকে আক্রান্ত করাসহ বহু মানুষের মূল্যবান জীবন কেড়ে নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোন প্রতিষেধক না থাকায় মানুষকে অসহায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। করোনা মহামারীর ভয়াবহ সংক্রমণ এড়াতে বিশ্বের প্রায় সব দেশে ঘোষণা করতে হয়েছে দীর্ঘ প্রায় দু’তিন মাসব্যাপী লকডাউন। এ সময় আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটনসহ সব শিল্পকারখানা ছিল বন্ধ। ফলে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। বিশ্বব্যাংক, আইএফএম, এডিবি বিশ্ব মহামন্দার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে অনেক আগেই। এই সমূহ ক্ষয়ক্ষতি সামলানো যথেষ্ট কঠিন ও দুঃসাধ্য হবে বিশ্বের জন্য। দেশে দেশে বিপুল অঙ্কের অর্থ প্রণোদনা দেয়া সত্ত্বেও এটা নিশ্চিত যে, করোনা পরবর্তী বিশ্ব আর আগের অবস্থায় ফিরবে না অথবা থাকবে না। এই বিপদ ও সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রী সৃজনশীল উদ্ভাবনী শক্তি তথা নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তরুণ নেতৃত্বের প্রতি। যা অত্যন্ত সময়োপযোগী। তাহলে বর্তমানে প্রায় বিধ্বস্ত ও ভঙ্গুর অর্থনীতিকে পূর্বাবস্থায় উন্নীত করা সম্ভব হতে পারে। তবে এর জন্য বৈশ্বিক পারস্পরিক সাহায্য, সহযোগিতাও অপরিহার্য; পাশাপাশি করোনা মোকাবেলায়ও তরুণদের সম্পৃক্ত হওয়া আবশ্যক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১০ লাখ এবং নারী ৮ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার। সেক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর অনুপাতে ভারসাম্য বিরাজ করছে। তবে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ বললেও বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক বেশি। তবে মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশই তরুণ ও কর্মক্ষম থাকার বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আরও যা আশার কথা তা হলো, দিনে দিনে বাড়ছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা। ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা পৌঁছাবে ৭০ শতাংশে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার এহেন অগ্রগতির খবর প্রকাশিত হয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) প্রতিবেদনে। এতে জনসংখ্যার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগানোর মতো উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভিন্নধর্মী কাজ, কারিগরি দক্ষতা, সৃজনশীল জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা বাংলাদেশে গড়ে তুলতে হবে। পরিকল্পিত কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের সুবাদে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইতোমধ্যে ৩৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিদ্যুত উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বাংলাদেশ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে যাচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্পে দেশের সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া। আয়ও অসামান্য। এ খাতে কয়েক লাখ নারীর কর্মসৃজন হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বিশ্বে। প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কর্মসূচীসহ নারী ও শিশু মৃত্যুর হার প্রতিরোধেও বাংলাদেশের সাফল্য প্রশংসনীয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যে ৮ শতাংশ অতিক্রম করে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। নিম্নমধ্য আয়ের দেশ থেকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে ধাবমান বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য দশ শতাংশ অতিক্রম করা। সেটা অতিক্রম করতে হলে ইউএনডিপি উল্লিখিত ৬৬ শতাংশ কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে অবশ্যই। অদক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তরিত করতে হবে দক্ষ জনশক্তিতে। জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের ওপর। জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক সৃজনশীল শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে।
×