ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘বাড়িতে ফিটনেস ধরে রাখা খুবই কঠিন’

প্রকাশিত: ২৩:৪৪, ৩০ জুলাই ২০২০

‘বাড়িতে ফিটনেস ধরে রাখা খুবই কঠিন’

জাহিদুল আলম জয় ॥ ঘাতক করোনাভাইরাসের কালো থাবায় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন এখনও অন্ধকারে। করোনাকে পাশ কাটিয়ে বহির্বিশ্বে মাঠে খেলা ফিরলেও বাংলাদেশে এখনও সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। যে কারণে জনপ্রিয় ফুটবলেও নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। চার মাস আগেও চঞ্চলমুখর ফুটবলাঙ্গনে এখন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। অদৃশ্য এ রোগটা দেশের ফুটবলকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কঠিন সময়ে। খুব শীঘ্রই ফুটবল মাঠে ফেরার সম্ভাবনা কম। যে কারণে খেলোয়াড়েরা যে যার মতো করে ফিটনেস ধরে রাখতে প্রাণান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। বাংলাদেশ অনুর্ধ ১৯ মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক মিসরাত জাহান মৌসুমীও ফিটনেস ঠিক রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে চলেছেন। এক সাক্ষাতকারে তারকা এই মিডফিল্ডার বর্তমান পরিস্থিতিতে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। ছয় বছর পর গত ফেব্রুয়ারিতে মাঠে ফেরে মহিলা ফুটবল লীগ। কিন্তু করোনার থাবায় মার্চে বন্ধ হয়ে যায় ময়দানি লড়াই। মৌসুমী-সানজিদা-কৃষ্ণারা চলে যান নিজেদের বাড়িতে। তবে সবসময়ই তারা আছেন জাতীয় মহিলা দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন ও স্টাফদের নির্দেশনায়। নিজের প্রচেষ্টা ও কোচদের তত্ত্বাবধানে ফিটনেস ঠিক রাখতে কাজ করছেন মেয়েরা। ঘরে বসে ফিটনেস ধরে রাখা কঠিন হলেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ১৯ বছর বয়সী মৌসুমী। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) থেকে পাঠানো সাক্ষাতকারে এই মিডফিল্ডার বলেন, ‘এখনও ভাল আছি, সুস্থ আছি। আমার পরিবারও ভাল আছে। এখন বাড়িতেই পুরো সময় কাটছে। খাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি ও স্ট্রেচিং করছি। খুব একটা বেশি বাইরে যাই না; স্বাস্থ্য নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করি।’ তবে বাড়িতে ফিটনেস ধরে রাখা কঠিন বলে মন্তব্য করেন মৌসুমী, ‘বাড়িতে ফিটনেস ধরে রাখাটা খুব কঠিন। কারণ এখানে ব্যায়াম করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। কোন জিম সরঞ্জামও নেই। তবে আমাদের কোচের নির্দেশনা অনুযায়ী ডায়নামিক স্ট্রেচিং, কোর এক্সারসাইজগুলো করে নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করছি। কখনও কখনও জিমে গিয়ে ট্রেডমিলে দৌড়াই বা সাইক্লিং করি।’ মেয়েদের ফিটনেস ধরে রাখার এ প্রক্রিয়ায় শুরু থেকেই নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। কোচিং স্টাফদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মহিলা দলের জন্য একটি হোয়াটসএ্যাপ গ্রুপ আছে। আমরা সব খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফ, হেড কোচ ছোটন, সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটু, দুই মহিলা কোচ অনন্যা ম্যাডাম এবং সাইনু দিদি এ গ্রুপের সদস্য। বাফুফে অফিসিয়ালরাও সেখানে আছেন। মৌসুমী বলেন, ‘আমরা সেখানে সপ্তাহে দুই-তিনবার সবার সঙ্গে আলোচনা করি। পাশাপাশি প্রতিদিনের কাজগুলো রিপোর্ট করি।’ ফুটবলার হলেও শৈশবে মৌসুমী হতে চেয়েছিলেন সেনাবাহিনীর সৈনিক। এখন মাঠ মাতালেও তার ফুটবলার হওয়াটা কঠিনই ছিল। খেলার জন্য হুমকি-ধমকিও পেতে হয়েছে পরিবারকে। তবে রংপুরের পালিচড়ার রামজীবন গ্রামের মেয়েটিকে দমাতে পারেনি কোন বাধা। মাঝমাঠের কুশলী খেলোয়াড় মৌসুমী। ফরোয়ার্ডদের বল জোগান দেয়ায় তার আসল কাজ। কিন্তু কখনও কখনও দলের প্রয়োজনে দারুণ সব গোলও করেন। ২০১১ সালে বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবলের আবিষ্কার মৌসুমী। রংপুরের পালিচড়ার রামজীবন গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক আবদুল কাদেরের ছয় সন্তানের মধ্যে চতুর্থ মৌসুমী। বাবা মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন লেখাপড়ায় শিক্ষিত করতে। কিন্তু খেলার নেশায় কখন যে মৌসুমী ফুটবলের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন তা তিনি নিজেই জানেন না। অনেক প্রতিঘাত পেরিয়ে বর্তমানে তারকা খ্যাতি পেলেও শুরুর দিকের পথ ছিল কন্টকাকীর্ণ। ফুটবল খেলতে গিয়ে কম কথা শুনতে হয়নি মৌসুমীকে। মেয়ে হয়ে খেলতেন ছেলেদের সঙ্গে। ছেলেদের মতো জার্সি, ট্র্যাকস্যুট পরতেন বলে এলাকার লোকজন মৌসুমীর মা-বাবাকে হুমকি দিতেন। মাঝে এক বছর খেলা বন্ধও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ফুটবলটা রক্তের সঙ্গে মিশে থাকায় কোন প্রতিবন্ধকতাই দমাতে পারেনি মৌসুমীকে। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার পজিশনে খেলা এই ফুটবলার জাতীয় দল ও ক্লাব দল বসুন্ধরা কিংসে ৮ নম্বর জার্সি পরে খেলেন। সাবিনা খাতুন, মার্তা, লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে মানেন আর্দশ ফুটবলার হিসেবে।
×