ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দ মোঃ এনাম উল্লাহ

মানবতাবিরোধী অপরাধ

প্রকাশিত: ২২:১৫, ৩০ জুলাই ২০২০

মানবতাবিরোধী অপরাধ

প্রতারণা একটি আইন বিরুদ্ধ কাজ। তারপরও দেশে বিদেশে প্রতারণা চলছে। মানুষ প্রতারকদের অমানবিক প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে । দেশ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত, জাতীয়- আন্তর্জাতিকভাবে অসম্মানিত। সব কর্ম বা অপকর্মেরই একটা সীমা থাকা দরকার। ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রীয় জীবনে এমন কিছু সমস্যা, দুর্যোগ মুহূর্ত আসে যখন প্রতিটি মানুষের ঐক্যবদ্ধ সহানুভূতি, মানবিক আচরণ আর নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়ে। তখন যদি কেউ বিবেককে কফিন বন্দী করে স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখন ব্যক্তি বা জাতীয় জীবনে দুর্ভোগের মাত্রাটা চরমে পৌঁছে যায়। আর এটাও অমোঘ সত্য যে ওইসব স্বার্থবাদী, লুটেরা বা প্রতারকরা চিহ্নিত হওয়ার পর শুধু শাস্তিই পায় না পতিত হয় ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে। বিশ্ব আজ করোনাভাইরাসের সংক্রমণে এক কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এক অদৃশ্য অনুজীব বিশ্বজুড়ে যে তা-ব চালাচ্ছে তাতে সংক্রমণ, মৃত্যু আর আর্থিক ক্ষতির বোঝা সামলাতে যেখানে উন্নত ও ধনী রাষ্ট্রগুলো হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের মতো অনুন্নত ও গরিব দেশের অবস্থা কোন্ পর্যায়ে যাচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তার মাঝে আবার সাম্প্রতিক সামদ্রিক ঝড় আম্পানের আঘাত এবং দেশজুড়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি সরকার ও জনগণকে ঠেলে দিয়েছে এক কঠিন সঙ্কটে। ঠিক এই রকম একটি পরিস্থিতিতে যখন আমাদের মানবিক দায়িত্ববোধ, সততা আর দেশপ্রেম নিয়ে আক্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর কথা তখন ত্রাণ চোর আর করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার নামে সাহেদ, সাবরিনা-আরিফদের জঘন্য প্রতারণা জাতি হিসেবে আমাদের মেরুদ-ে আঘাত করার শামিল। এসব প্রতারণার কারণে আজ চারদিকে সরকারী বা বেসরকারী সাহায্য-সহযোগিতা যেমন মুখ থুবড়ে পড়েছে তেমনি জনগণও প্রতারণার ভয়ে করোনা টেস্টের আগ্রহ হারিয়ে নিজ পরিবার ও সমাজকে সংক্রমণের অধিক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। দেশ সরকার এখন প্রতারকদের দমনে ব্যস্ত কিন্তু জনগণের আস্থার সঙ্কট কিভাবে উৎরাবেন তা বোধগম্য নয়। সব সময় প্রতারকরা সমাজের বা রাষ্ট্রের প্রভাবশালীদের আনুকল্যে বা ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠে এবং টিকে থাকে। তাই সমস্যা সমাধানে আমাদের সমাজ ভাবনা কোন কার্যকরী সুফল বয়ে না আনলেও একজন নাগরিক হিসেবে বলার অধিকারবোধ থেকে বলছি- সরকার বা সমাজের ভেতরের যাদের আনুকল্যে, মদদে এবং সহযোগিতায় রাসেদ, সাবরিনা, আরিফদের জন্ম হয় তাদের সমূলে চিহ্নিত করুন। ওদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিন। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর কয়েক লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা। আমরা যদি একাত্তরের দালাল-প্রতারকদের চিহ্নিত করতে পারি, আজীবন ঘৃণা ছুড়তে পারি, বিশেষ ট্রাইব্যুনালে অপরাধের বিচার করতে পারি তাহলে বিশ্বব্যাপী বর্তমান নজিরবিহীন দুর্যোগ ও সঙ্কটের এই সময়ে যারা দেশ-জাতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের প্রতারণা এবং স্বার্থ হাসিলের অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে তাদের এই কর্মকা-কে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। কিশোরগঞ্জ থেকে
×