ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাযুদ্ধের মীরজাফর

প্রকাশিত: ২২:১৩, ৩০ জুলাই ২০২০

করোনাযুদ্ধের মীরজাফর

মার্চ মাসে যখন প্রথমবার দেশে করোনা সংক্রমণের খবর পেলাম তখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লাম। বুঝতে পারলাম সব দেশের বিজ্ঞানীরা যখন পরাস্ত হয়েছে, তখন আমাদের দেশকে আরও বিপদের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। টিভি, সংবাদপত্র, অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে জানতে পারলাম করোনা প্রতিরোধের নানা উপায়। সঙ্গে জানতে পারলাম হ্যান্ডওয়াশ, স্যাভলন, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের গুরুত্ব। কিন্তু এসব জিনিস সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রথমেই হোঁচট খেলাম। সার্জারির দোকান, ফার্মেসির দোকান কোনখানেই খুঁজে পেলাম না এসব জিনিস। মজুদদারদের এহেন আচরণে মনে হল করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা শুরুতেই হেরে গেলাম। অবশেষে সাধারণ সাবানের ভাইরাস ধ্বংস করার ক্ষমতা আমাকে আশ্বস্ত করল। এরপর যখন শুনলাম পুরনো মাস্ক আর গ্লাভস ধুয়ে আবার বিক্রি হচ্ছে তখন বুঝলাম করোনা আমাদের ফাঁকা মাঠেই গোল দেবে। সাধারণ পলিথিন দিয়ে তৈরি কৃত্রিম পিপিই দিয়ে প্রতারণার ব্যবসাটাও দারুণ চলছিল। যা হোক শত প্রতিবন্ধকতার মাঝে হাত ধোয়া, মাস্ক পরা ইত্যাদি পালন করে আর চিকিৎসক-নিরাপত্তাবাহিনী সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে আমাদের করোনার বিরুদ্ধে লড়াইটা ভালভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে খবর পাওয়া গেল, আমাদের কিছু লোক করোনার হাতকে শক্তিশালী করেছে! যখন সবাই করোনাকে পরাস্ত করার চেষ্টায় ব্যস্ত তখন রিজেন্ট হাসপাতাল, জেকেজি হেলথকেয়ার এর মত প্রতিষ্ঠানগুলো করোনার পরীক্ষার নাম করে ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়েছে!। এসব ‘ভুয়া করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট’ পাওয়া করোনা পজেটিভ ব্যক্তিরা যখন যত্রতত্র ঘুরে বেড়িয়ে করোনা বিলি করেন, তখন মাঠের যুদ্ধে আমরা পিছিয়ে পড়ে যাই বটে। জানি না গোটা বাংলাদেশে আরও এমন হাসপাতালের সংখ্যা কত! ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে ‘পাস না করেই চাকরি পাওয়া’, ‘মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেই মুক্তিযোদ্ধা বনে যাওয়া’- ছিল সাধারণ ঘটনা। এখন আমরা দেখলাম ভুয়া করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দিয়ে বিদেশে গমন করে ধরা পড়ার ঘটনা। হয়ত ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশের লোকজন আমাদের তামাশা করে বলবে, ‘যার যেই সার্টিফিকেট দরকার সে বাংলাদেশে চলে যাও।’ বাংলাদেশে অনেক সুযোগসন্ধানী অসৎ ব্যবসায়ী, প্রতারক দেখা যায়। অনলাইনে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আয়, বিদেশে কর্মী পাঠানোর নামে টাকা আয়, চাকরি দেয়ার নাম করে টাকা আদায়, আকর্ষণীয় সুদের নামে কিস্তি আদায় ইত্যাদি প্রতারণার ব্যবসা অনেককাল ধরে চলে আসছে। কিন্তু করোনার সময়ে করোনা টেস্টের নামে যে প্রতারণার ব্যবসা চলছে, তা দেশের জন্য করোনাভাইরাসের চেয়েও ক্ষতিকর। করোনার বিরুদ্ধে কঠিন এক যুদ্ধে আছি আমরা। আমাদের মাঝের মীর জাফরগুলোকে এখনই চিহ্নিত করতে হবে সরকারকে। এখনই এসব জাল সনদ বিলি করা হাসপাতালগুলোকে শনাক্ত করে বন্ধ করে দেয়া দরকার। না হলে পলাশী যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের যেমন পরাজয় ঘটেছিল, তেমনি করোনার বিরুদ্ধে আজকের এই যুদ্ধে আমাদের সব প্রতিরোধ জলে ভেসে যাবে। জয়পুরপাড়া, বগুড়া থেকে
×