ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ড. এ কে আব্দুল মোমেন

বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি ॥ বাংলাদেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি

প্রকাশিত: ২২:০৯, ৩০ জুলাই ২০২০

বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি ॥ বাংলাদেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি

(গতকালের পর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘের ‘ফ্রেন্ডস অব মিডিয়েশন’, ‘ফ্রেন্ডস অব ইনঅ্যালিনেবল রাইটস অব প্যালেস্টাইন’, ‘ফ্রেন্ডস অব নো ফুড ওয়েস্ট, নো ফুড লস’ ইত্যাদি ভূমিকায় মানবতার মর্যাদা রক্ষা এবং জাতিসংঘ সদনের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বস্তুতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘে একটি অত্যন্ত সম্মানজনক সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশকেই চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। কেবল সর্বোচ্চ সৈন্য প্রেরণকারী দেশ হিসেবেই নয়, সক্ষমতার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাকারী দেশ হিসেবেও বাংলাদেশের সুনাম আজ জাতিসংঘে ব্যাপক। জাতিসংঘের ‘হি অ্যান্ড শী’ চ্যাম্পিয়ন হিসেবেও বাংলাদেশের নাম চলে আসে সবার আগে। জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শিক্ষাই সর্বাগ্র’ শীর্ষক প্রকল্পে এবং মহাসচিবের স্বাস্থ্যরক্ষা সংক্রান্ত উদ্যোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে গণ্য করা হয়। মহাসচিবের নেতৃত্বে শান্তিরক্ষী নিয়োগ সংক্রান্ত সিনিয়র পরামর্শক কমিটির সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীদের নীল হেলমেট প্রদানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত আঞ্চলিক রিভিউ কমিটির ঢাকা কনফারেন্সের আয়োজন করে বাংলাদেশ ২০১৪ সালে এবং সদস্য রাষ্ট্রসমূহের শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ দান করে। প্রতি ১০ শান্তিরক্ষীর মধ্যে একজন বাংলাদেশী শন্তিরক্ষী। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ নারী শান্তিরক্ষীদের জন্য নীল হেলমেট, বর্ম ও তলোয়ার চালানো এবং পুলিশের একটি ইউনিট বসানোর পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার ক্ষেত্রে জাতিসংঘে অত্যন্ত সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অপূরণীয় ক্ষতি ও চ্যালেঞ্জকে বিশ্ববাসীর সামনে যথার্থভাবে তুলে ধরতে তিনি সদা সচেষ্ট থেকেছেন। তিনি একজন নেতা যিনি এ বিষয়টিকে বিশ্ববাসীর সামনে বারংবার তুলে ধরেছেন যে, পরিবেশ দূষণকারী না হয়েও স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রসমূহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সবচেয়ে বড় হুমকির মধ্যে রয়েছে। কেবল বাগাড়ম্বর বা উচ্চবাক্য না করে এ বিষয়টি তিনি কর্মপরিকল্পনার মধ্যে গ্রহণ করেছেন এবং বিষয়টি নিয়ে কিভাবে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোনো যায়, তা নিজে তদারক ও কাজ করে চলেছেন। সম্পদের স্বল্পতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা সংক্রান্ত দুটি ফান্ড গঠন করেছে। তাই সঙ্গত কারণেই জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচী তাকে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। কেননা, পরিবেশ সুরক্ষার জন্য তিনি বিশ্বের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর এবং পরিবেশ নীতিমালা গঠনের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন। ‘জলবায়ু ঝুঁকি ফোরাম (সিভিএফ)’ এবং ‘জলবায়ু ঝুঁকি প্রবণতা তদারকি (সিভিএম)’ গঠন করেছেন তিনিই। তাঁর প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়েই ‘জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিষয়ক দায়িত্ব বিষয়ক রাষ্ট্রদূত ফোরাম’ (অসনধংংধফড়ৎং রিঃয জবংঢ়ড়হংরনরষরু ঃড় ঈষরসধঃব ঈযধহমব- অজঈ) এবং ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বন্ধ’ু (ঋৎরবহফং ড়ভ পষরসধঃব পযধহমব- ঋঈঈ) গঠন করা হয়েছে, যারা জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধ ঘোষণার পরই আমরা দেখতে পাই যে, অন্যান্য বিশ^ নেতৃবৃন্দ এই জটিল ইস্যুতে এগিয়ে আসছেন। যুদ্ধবিগ্রহ, ভয়াল বন্যা, অনাবৃষ্টি, ক্ষরা, নদীভাঙ্গন ইত্যাদি কারণে সাম্প্রতিককালে দেশে দেশে যে হারে মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বা নিজ দেশে কাজ হারিয়ে দেশান্তরী হয়ে পড়ছে জীবিকার তাগিদে, কিংবা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় খুঁজছে বিভিন্ন দেশে, তখন সেই সব কঠিন সমস্যার কারণ খুঁজে আর কোন মানুষ যেন শরণার্থী না হয়, বাস্তুচ্যুত না হয় তার ব্যবস্থা করার জন্য জোরালো দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। সম্পদশালী দেশগুলো সম্পদের অপব্যবহারের মাধ্যমে আজ পৃথিবীর পরিবেশের এই দশা করেছে। যদিও তাদের অবিমৃষ্যকারিতার ফল পেতে হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে, যারা হয়ত কোনভাবেই এই ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা জলবায়ু’র কারণে উদ্বাস্তু হওয়ার জন্য দায়ী নয়। অথচ তাদেরই সবচেয়ে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ মনে করে, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের দায় এবং দায়িত্ব উভয়ই উন্নত বিশ্বকে নিতে হবে। হয় তাদের এসব নানা প্রক্রিয়ায় করা পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে। অথবা, তাদের এমন কাজ করতে হবে যাতে যুদ্ধবিগ্রহ না বাধে বা মানুষ নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য না হয়। শেখ হাসিনা কথা নয়, কাজে বিশ^াসী। লক্ষ্য অর্জনে তিনি পিছপা নন এক কদমও। তাঁর অক্লান্ত প্রয়াসের ফলে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে। বাংলাদেশে সরকারপ্রধান একজন নারী। জাতীয় সংসদের স্পীকার এবং সংসদের বিরোধীদলীয় নেতাওÑ নারী-নারীর ক্ষমতায়নের এ এক অনবদ্য সংযোগ। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ সেই গুটিকয়েক রাষ্ট্রের মধ্যে অন্যতম, যেখানে বছরের শুরুতে দেশব্যাপী শিশুদের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন শ’ মিলিয়ন বই বিতরণ করা হয় বিনামূল্যে। বাংলাদেশ সেই রাষ্ট্র যেখানে এনজিওরা উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সরকারের সঙ্গে সমান তালে অংশগ্রহণ করে। তাই বাংলাদেশ আজ তার উদ্ভাবনী সুশাসন প্রক্রিয়া এবং যুক্তির নিরিখে চলার জন্য বিশ^ দরবারে সম্মানিত। সামগ্রিক এই প্রক্রিয়ায়, সন্দেহ বা বিস্ময়ের কোন অবকাশই নেই যে, সেই বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনা, আজ জাতিসংঘ তথা বিশ^ পরিম-লে শান্তি ও ন্যায্যতার এক মূর্ত প্রতীক হিসেবে নিজের দেশ ও জনগণকে তুলে ধরেছেন সবার ওপরে। জয়তু বিশ^নেতা শেখ হাসিনা। জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান ॥ জনগণের ক্ষমতায়ন মডেল : অস্থিরতা, সহিংসতা, পরমত অসহিঞ্চুতা, বৈষম্য এবং ব্যাপক জন-অসন্তোষের ক্ষেত্রে এই মডেল বিশে^ শান্তিপ্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কালচার অব পিস : বিগত সময়ে সরকারে থাকাকালীন সময়ে বাংলাদেশ কর্তৃক জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতির ধারণা প্রচলন করা হয়। জাতিসংঘের ভেতরে ও বাইরে এই ধারণা ব্যাপক সমর্থন লাভ করে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, যা সমগ্র জাতিসংঘ ব্যবস্থার মাঝে অনুরণিত হয়। শান্তিরক্ষা কার্যক্রম (পিস কিপিং) : শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা সর্বজনবিদিত ও স্বীকৃত। জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশি^ক পরিম-লে শান্তিপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। তাঁর গতিশীল নেতৃত্বে বিশে^ আজ সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে সমাদৃত বাংলাদেশ। শান্তি বিনির্মাণ (পিস বিল্ডিং) : তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ শান্তি বিনির্মাণের বিষয়টি বিশ^ব্যাপী গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছে। স্বল্পদিন হলো এ সংক্রান্ত কমিশন গঠিত হয়েছে, যা ইউএন পিস বিল্ডিং কমিশন নামে পরিচিত। বাংলাদেশ এর গুরুত্বপূর্ণ মিটিংসমূহে সভাপতিত্ব করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈশি^ক গ্রহণযোগ্যতা কারণে এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রমের আলোচনায় বাংলাদেশকে অন্তভর্ূুক্ত করা হয়ে থাকে। বহুমাত্রিক নেতৃত্ব : নানামুখী জাতীয় ও বৈশি^ক ইস্যুতে চ্যালেঞ্জ নিতে পিছপা হননা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর অবিচল নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘের বিভিন্ন কমিটি এবং অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থায় সভাপতি এবং সদস্যপদে নির্বাচিত হয়েছে। বিগত ছয় বছরে বাংলাদেশে কোন একটি নির্বাচনেও পরাজিত হয়নি। সকল দেশ ও তাদের নেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ও তার নেতা শেখ হাসিনা। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মডেল বাংলাদেশ : জাতিসংঘ মহাসচিবের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশ এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কেবল স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যেই নয়, অনেকগুলো উন্নত দেশের চেয়েও বাংলাদেশের এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সাফল্য ব্যাপক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে এর সফল বাস্তবায়ন তদারক ও মূল্যায়ন করে থাকেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের সুরক্ষা ও নেতৃত্ব দান : বর্তমানে বাংলাদেশে ৪৮টি স্বল্পোন্নত দেশের নেতা ও মুখপাত্র। তাই জাতিসংঘ তথা আন্তর্জাতিক ফোরামে এসব দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের নেতৃত্বও বাংলাদেশেরই। সর্বসম্মতভাবে বাংলাদেশ এই পদে নির্বাচিত হয়; বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাই বাংলাদেশকে এই পদে আসীন করেছে। এলডিসি রাষ্ট্রসমূহের স্বার্থরক্ষায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। ভিন্ন জীবনের মানুষের সমস্যাকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসা : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই জাতিসংঘের সকল রাষ্ট্রের কাছে আজ অটিজমে আক্রান্ত শিশু ও অটিজম সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমস্যাবলী একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সংক্রান্ত বাংলাদেশের প্রস্তাব পৃথিবীর সব রাষ্ট্রের অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করেছে। বিষয়টির প্রবক্তা হিসেবে বাংলাদেশের নাম আজ সব দেশ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। জলবায়ুর ঝুঁকি আক্রান্তদের সমস্যায় নেতৃত্ব : জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সক্রিয়ভাবে কাজ করে দেখিয়েছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশে^র দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ঝুঁকি কতটা। এ সমস্যার কারণ খুঁজে আর কোন মানুষ যেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শরণার্থী না হয়, বাস্তুচ্যুত না হয়Ñতার ব্যবস্থা করার জন্য জোরালো দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। সম্পদশালী দেশগুলো সম্পদের অপব্যবহারের মাধ্যমে আজ পৃথিবীর পরিবেশের এই দশা করেছে। যদিও তাদের অবিমৃষ্যকারিতার ফল পেতে হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো, যারা হয়ত কোনভাবেই এই ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ^-উঞ্চতায়ন’র কারণে উদ্বাস্তু হওয়ার জন্য দায়ী নয়। অথচ তাদেরই সবচেয়ে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। বাংলাদেশ মনে করে, এই অবস্থা হতে উত্তরণের দায় এবং দায়িত্ব উভয়ই উন্নত বিশ^কে নিতে হবে। হয় তাদের এসব নানা প্রক্রিয়ায় করা পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে। অথবা, তাদের এমন কাজ করতে হবে যাতে যুদ্ধবিগ্রহ না বাধে বা মানুষ নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য না হয়। জলবায়ু ঝুঁকি ফোরাম (সিভিএফ) এবং জলবায়ু ঝুঁকিপ্রবণতা তদারকি (সিভিএম) গঠন করেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী এর প্রতিষ্ঠা করেন জাতিসংঘের ৬৭তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে। আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ আইনী সমাধান : শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল, সেই বিষয়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত তিনি গ্রহণ করেন, তারই ফলস্বরূপ বাংলাদেশ তার সমুদ্রসীমার ওপর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্র ভারত এবং মিয়ানমারও তাদের আইনগত ন্যায্য পাওনা পেয়েছে। কোন সংঘাত বা যুদ্ধ ছাড়াই এহেন বিরোধ নিষ্পত্তির ঘটনা পৃথিবীতে বিরল। জাতিসংঘের মাধ্যমে অভিবাসীদের অধিকারের সুরক্ষা : অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষার জন্য নিরলস কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সংক্রান্ত জাতিসংঘ কমিটিতে তিনি যথার্থভাবে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেছেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ে সক্ষম হয়েছেন। অভিবাসী শ্রমিকের মানবাধিকার, কাজের পরিবেশ, বেতন ও নিরাপত্তা- এসব বিষয়ে নিশ্চিত করার জন্য সব রাষ্ট্রের প্রতি তিনি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সাউথ-সাউথ এ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কো-অপারেশনের কণ্ঠস্বর : সাউথ-সাউথ সংক্রান্ত জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ। আর সাউথ-সাউথের কণ্ঠস্বর হচ্ছেন শেখ হাসিনা। সম্প্রতি এই রাষ্ট্রসমূহের সাফল্য ব্যাপক, যার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দৃশ্যমান। জাতিসংঘ সনদের মূল লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়ন ॥ প্রথমত : সহিঞ্চুতার চর্চা এবং ভাল প্রতিবেশী হিসেবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। দ্বিতীয়ত : আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার সঙ্গে একতাবদ্ধ থাকা। তৃতীয়ত : এই নীতির প্রতি অবিচল থাকা যে, শক্তি প্রয়োগ কোনভাবে করা হবে না, একমাত্র সামষ্টিক স্বার্থ ছাড়া। চতুর্থত : বিশে^র সকল মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহকে কাজে লাগানো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সনদের এসব মূলনীতির আালোকে একটি সুন্দর, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন। তাঁর জয়যাত্রা, তাঁর সফলতা অব্যাহত থাকুক। (সমাপ্ত) লেখক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
×