ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিত্যপণ্যে স্বস্তি

প্রকাশিত: ২২:০৪, ৩০ জুলাই ২০২০

নিত্যপণ্যে স্বস্তি

করোনা দুর্যোগে দেশের সামগ্রিক খাতের যে অসহায় বিপন্নতা তাতে সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় নাভিশ্বাস হওয়ার উপক্রম। স্বাস্থ্য আর জীবনের ঝুঁকির চরম দুঃসময়ে শিক্ষা খাতও পার করছে ক্রান্তিকালীন সময়। চাকরি হারানো থেকে বেতন-ভাতা বঞ্চিত কিংবা কর্তনেও এসেছে এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। মানুষ তার দৈনন্দিন জীবন ও কর্মপ্রবাহে মোকাবেলা করছে এক অনাকাক্সিক্ষত দুর্দশা। এর মধ্যে উৎসব আয়োজনের বিভিন্ন কার্যক্রমও মানুষকে সামলাতে হচ্ছে। সেই মার্চ থেকে শুরু হওয়া করোনা বিপর্যয় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বকে যে নাজেহাল অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে তাতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবিরতার কবলে। তারপরও খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার তাগিদও প্রতিদিনের লড়াকু জীবনের অভিযাত্রা। বাংলা নববর্ষ, রমজানের ঈদ-উল-ফিতরের মতো আনুষ্ঠানিক পর্বও আমাদের পার করতে হয়েছে। সামনে অপেক্ষা করছে ঈদ-উল-আজহা। প্রাসঙ্গিক উৎসব আয়োজনে যাপিত জীবনে যে নতুন মাত্রা যোগ হয়, সেটাও সময়ের এক অনিবার্য পর্যায়। সঙ্গত কারণেই উঠে আসে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের বিপণন কার্যক্রম। করোনা দুর্যোগে সরকার সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বকে মোকাবেলায় দৈনন্দিন পণ্যের অবাধ সরবরাহের যে নিশ্চয়তা প্রদান করেছে, তার সুফল জনসাধারণ পাচ্ছে। বিশেষ করে অসহায়, দুস্থ ও হতদরিদ্রের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কর্মসূচী থেকে শুরু করে ন্যায্যমূল্যে ভোগ্যপণ্য সংশ্লিষ্টদের হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। প্রতিবারই বিভিন্ন উৎসব আয়োজনকে কেন্দ্র করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর যে অনাবশ্যক চাপ পড়ে, এবার করোনা দুর্ভোগের তেমন নেতিবাচক প্রভাব বলতে গেলে অনুপস্থিত। মানুষের চাহিদাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তার কাক্সিক্ষত পণ্যকে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসা সত্যিই এক অভাবনীয় কর্মপ্রবাহ। প্রতিদিনের বাজার নিয়ন্ত্রণে যে কঠোর সিন্ডিকেট তার অশুভ ছায়া ফেলে সেখান থেকে অবশ্যই স্বস্তির আলামত মিলেছে। ঈদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় দ্রব্য তার স্বাভাবিক মূল্যমানকে এক প্রকার ধরেই রেখেছে। এখানে বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন ব্যবস্থাও সহায়ক হয়েছে। ফসল উৎপাদন, কাটার পর গোলায় তোলা সবই অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সময়মতো করার দৃশ্য উঠে এসেছে। ফলে মানুষ তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অসহনীয় দুর্ভোগ কাটাতেও সক্ষম হয়েছে। কোরবানির ঈদের সময়ের আগ থেকেই পেঁয়াজ, রসুন, আদা এবং মসলার দাম বৃদ্ধির যে প্রকোপ সাধারণ মানুষকে বিপন্ন করে এবার সেটার কোন দৃশ্যমান চিত্র পাওয়া যায়নি। আগের মতোই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল অবস্থায় জনগণকে আশ্বস্ত করেছে। কোরবানি ঈদ মানেই পশুর হাট বসা থেকে শুরু করে জবাই করে মাংস ঘরে তোলা পর্যন্ত এক আবশ্যকীয় কর্মযোগ। অবশ্য এবারে পশু খামারিরা কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছে। করোনার আপদকালীন সময়ে প্রতিবারের মতো পশুর হাট সেভাবে জমে উঠতে দেখা যাচ্ছে না। বরং ব্যবসায়ীরা আশঙ্কায় আছেন অপেক্ষাকৃত কম পশু বিক্রয়ের। দামও হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা। কম গরু, খাসি, ভেড়া বিক্রি হওয়া মানেই এবার কোরবানির সংখ্যানুপাত নিচের দিকে যাবে। সে কারণে গরু, খাসির মাংসের বাজার মূল্যের ওপর প্রভাব পড়াটাও সঙ্গত। এবার তেমন দৃশ্য এখন অবধি আসেনি। বাজারদর মূল্যায়ন করে জানা যায় গরুর মাংস আগের মতোই ৬০০ টাকা এবং খাসি সেই ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। কোরবানি কম হলে মাংসের বাজারেও তার ছায়া পড়ে। মাংস কেনার ক্রেতা বেড়ে গেলে বাজার মূল্যও অনেক সময় অস্থির হয়ে ওঠে। সেখানেও কোন ধরনের মূল্য বৃদ্ধির খবর মিলছে না। একেবারে সামনে কি হবে বলা যাচ্ছে না। তবে সব মিলিয়ে নিত্যপণ্যের বাজারদর স্থিতিশীল। অতি প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপরও মূল্য বৃদ্ধির চাপ আসেনি। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর নজরদারিই শুধু নয় অকারণে গজে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজিও দমিয়ে রাখা বর্তমান সরকারের অভাবনীয় সাফল্য। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস হওয়ার উপক্রম এখন অবধি দৃশ্যমান উঠে আসেনি। সাধারণ মানুষ এখনও স্বস্তি আর নিশ্চিন্তে তার প্রতিদিনের চাহিদা সামলাতে পারছে।
×