ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একচেটিয়া আধিপত্যে জেরার মুখে টেক জায়ান্টরা

প্রকাশিত: ১২:১৪, ২৯ জুলাই ২০২০

একচেটিয়া আধিপত্যে জেরার মুখে টেক জায়ান্টরা

অনলাইন ডেস্ক ॥ ধূমপানে আসক্তি তৈরি হয়। এরপরও ১৯৯৪ সালের ১৪ এপ্রিল আমেরিকার বৃহত্তম টোব্যাকো কোম্পানিগুলোর কর্তারা যখন মার্কিন কংগ্রেসে জেরার মুখোমুখি হন, তারা স্বাভাবিকভাবেই সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাদের একগুঁয়েমি এ শিল্পের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও অভিযোগ দায়েরের প্রচেষ্টায় নতুন গতি যোগ করে। চার বছর পর এক আইনি সমঝোতায় কোম্পানিগুলো ২৫ বছরে দুইশ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি পরিশোধ এবং তামাক বাজারজাতকরণ সীমিত করায় সম্মত হয়। আমেরিকার বৃহত্তম প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচকদের আশা, ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য কংগ্রেসের শুনানি সাবেক সদস্য জন লুইসের মৃত্যুর কারণে দুইদিন পিছিয়ে গেলেও এটি থেকে সিগারেট কোম্পানিগুলোর ঘটনার মতো একই ধরনের গতিশীলতা আসবে। এদিন প্রথমবারের মতো অ্যালফাবেট (গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান), অ্যামাজন, অ্যাপল ও ফেসবুকের প্রধান নির্বাহীরা একসঙ্গে ওয়াশিংটনে নীতিনির্ধারকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের বিচার বিভাগীয় কমিটির বিশ্বাসহীনতা বিষয়ক সাব-কমিটি টেকনোলজি বসদের জেরা করবেন। আইফোনে অ্যাপ বিতরণের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ বিল করা কেন একচেটিয়া অপব্যবহার নয় তা অ্যাপলের টিম কুকের কাছে জানতে চাইবেন তারা। অনলাইনে অনুসন্ধান এবং বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাজারে গুগল আধিপত্য বাড়িয়েছে কি না তা নিয়ে অ্যালফাবেটের সুন্দর পিচাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রতিদ্বন্দ্বী অফারগুলোর বিকাশে অ্যামাজন তাদের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ডেটা সংগ্রহ করেছে কি না তা নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন জেফ বেজোস। আর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিষ্ক্রিয় করতে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ হস্তগত করা হয়েছে কি না তার জবাব খুঁজতে হবে ফেসবুকের মার্ক জুকারবার্গকে। তবে প্রযুক্তি শিল্প কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে তা নিয়ে পরিস্থিতি বদলে দেয়ার মতো অবস্থা এখনও তৈরি হয়নি। এক্ষেত্রে একটি বিষয় অন্তত নিশ্চিত, করোনাভাইরাস মহামারি প্রক্রিয়াটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। যদিও প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধানরা আলাদা আলাদা না হয়ে একসঙ্গেই জবাবদিহিতার মুখোমুখি হচ্ছেন, তবে স্বশরীরে একটি কক্ষে না বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তারা। এর ফলে শুনানির প্রভাব কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ভিডিও কনফারেন্স হওয়ায় অংশগ্রহণকারীরা প্রতারণাও সুযোগ পাবেন; যেমন- পেছন থেকে কেউ হয়তো তাদের কৌশলী প্রশ্নের জবাব দিতে সাহায্য করতে পারেন। তবে এরচেয়েও বড় বিষয়, তামাকের মতো প্রযুক্তি খাতের এ সংকটের সমাধান এখনও সুনিশ্চিত নয়। ধূমপানের কারণে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়, টোব্যাকো কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করা যায়, সিগারেটও নিয়ন্ত্রণ করা যায়; কিন্তু বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে সেগুলো ভেঙে দেয়া নাকি তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা সবচেয়ে বাস্তবসম্মত উপায় হতে পারে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত সমালোচকরাও পুরোপুরি নিশ্চিত নন। সবশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ওয়াশিংটনকে খুব বেশি সক্রিয় হতে দেবে না। আগামী নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বড় কোনও পরিবর্তনের আশাও করছেন না কেউ। আবার নির্বাচনের পরেও যে বিশ্বাসহীনতার এ ইস্যু অগ্রাধিকার পাবে তা-ও নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হলে কী করবেন তা সবাই জানে। আর জো বাইডেন প্রযুক্তির বিষয়ে এখন পর্যন্ত খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে শুরুর দিকে স্বাস্থ্যখাত ঠিক করা, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের মতো বিষয়গুলোতেই বেশি ব্যস্ত থাকবেন তিনি। প্রযুক্তিখাতে বিশ্বাসহীনতার বিষয়ে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে যদি বড় কোনও খবর আসে, তবে সেটি হবে বড়জোর আইনি ব্যবস্থা সংক্রান্ত। অভ্যন্তরীণ সূত্রের খবর, আগামী সেপ্টেম্বরেই গুগলের বিরুদ্ধে একচেটিয়া ব্যবসা সংক্রান্ত অভিযোগ দায়েরের পরিকল্পনা করছে মার্কিন বিচার বিভাগ। ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে ফেডারেল বাণিজ্য কমিশন। তবে সেক্ষেত্রে তাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কী হতে পারে তা এখনও পরিষ্কার নয়। অবশ্য শুনানি থেকে চমকপ্রদ কিছু বের হয়ে আসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। বছরখানেক আগে কাজ শুরু করা কমিটির সদস্যরা এরই মধ্যে কয়েকশ’ ঘণ্টার সাক্ষাৎকার সংগ্রহ করেছেন, কোম্পানিগুলোর অন্তত ১৩ লাখ ডকুমেন্ট পরীক্ষা করেছেন তারা। এগুলোর মধ্যে কিছু তথ্য-প্রমাণ টেক জায়ান্টদের জন্য অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।- দ্য ইকোনমিস্ট
×