ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জুভেন্টাসের জয়জয়কার...

প্রকাশিত: ০০:৫২, ২৯ জুলাই ২০২০

জুভেন্টাসের জয়জয়কার...

বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা ক্লাব জুভেন্টাস। ইতালিয়ান পরাশক্তিরা এ প্রমাণ আরও একবার রেখেছে। ইতালিয়ান সিরি এ লীগে দলটি ডালভাতের মতো শিরোপা জিতে চলেছে। ট্রফি জয় তাদের কাছে অনেকটা মুড়ি মুড়কির মতো! ২০টি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও গত নয় বছর ধরে কেউ টেক্কা দিতে পারছে না তুরিনের বুড়িদের। দলটি রীতিমতো পৈত্রিক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে ইতালিয়ান সিরি এ লীগকে। যে প্রমাণ তারা রেখেছে ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টানা নয় আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। ২৬ জুলাই সিরি এ লীগের ২০১৯-২০ মৌসুমের শিরোপা নিশ্চিত করেছে জুভেন্টাস। ঘরের মাঠ তুরিনের জুভেন্টাস স্টেডিয়ামে অতিথি স্যাম্পডোরিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে রেকর্ডগড়া ট্রফি জিতেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো-পাওলো দিবালারা। সবমিলিয়ে সিরি এ লীগে এটি ৩৬তম শিরোপা জুভেন্টাসের। লীগের এখনও দুই রাউন্ড বাকি। বর্তমানে রাউন্ড শেষে চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাসের ভা-ারে জমা ৮৩ পয়েন্ট। তারা জিতেছে ২৬ ম্যাচ, ড্র করেছে ৫টি। সমান ম্যাচে ৭৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ইন্টার মিলান। ৭৫ পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে আটলান্টা ও ল্যাজিও। এ চারদলই পেয়ে গেছে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের নতুন মৌসুমে খেলার ছাড়পত্র। এর আগে জার্মান পরাশক্তি বেয়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে টানা আট লীগ শিরোপা জয়ের রেকর্ড ভাগাভাগি করছিল জুভেন্টাস। কিন্তু এবার ট্রফি জিতে বাভারিয়ানদের টপকে এককভাবে টানা শিরোপা জয়ের রেকর্ড নিজেদের করে নিয়েছে তুরিনের বুড়িরা। ইতালি তো বটেই, ইউরোপের শীর্ষ পাঁচÑ লীগ ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ, স্প্যানিশ লা লীগা, ইতালিয়ান সিরি এ, জার্মান বুন্দেসলীগা ও ফরাসী লীগ ওয়ানে টানা এতগুলো শিরোপা জয়ের রেকর্ড আর কারও নেই। এই হিসেবে নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে জুভেন্টাস। বর্তমানে লীগগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিক দিয়েও সিরি এ সবচেয়ে এগিয়ে। এই হিসাবে তাদের টানা নয় শিরোপা জয়কে ঈর্ষণীয় সাফল্য হিসেবে দেখছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। শিরোপা নিশ্চিত করা ম্যাচে প্রাধান্য বিস্তার করে খেললেও প্রথম গোল পেতে প্রথমার্ধের শেষক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় জুভেন্টাসকে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের (৪৫+৭) শেষ মিনিটে মিরালেম পিয়ানিচের দারুণ পাসে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো গোল করে দলকে এগিয়ে নেন। বিরতির পর ৬৭ মিনিটে জুভদের দুই গোলে এগিয়ে দেন ফেডেরিকো বার্নারডেস্কি। ৭৭ মিনিট দুই হলুদ কার্ডের কারণে মর্টেন থ্রোসবি মাঠের বাইরে চলে গেলে বাকি সময়টা সাম্পডোরিয়াকে ১০ জন নিয়ে খেলতে হয়। ৮৪ মিনিটে পেনাল্টি পায় স্বাগতিকরা। কিন্তু রোনাল্ডোর স্পট কিক বারপোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। তবে পেনাল্টি থেকে সি আর সেভেন গোল না পেলেও জুভেন্টাসের শিরোপা জয়ে প্রতিবন্ধকতা হয়নি। অবশ্য এক গোল করেও ৮৬ বছরের রেকর্ড স্পর্শ করেছেন পর্তুগীজ তারকা। দুই ম্যাচ হাতে রেখে বর্তমানে লীগে রোনাল্ডোর গোল ৩১টি। গত ২০ জুন ইতালিতে ফুটবল ফেরার পর পর্তুগীজ সুপারস্টার ১০ গোল করেছেন, যা ইউরোপের যে কোন খেলোয়াড়ের জন্য সর্বোচ্চ। পাশাপাশি তিনি ইতালির বিশ^কাপজয়ী ফেলিস বোরেলের রেকর্ড স্পর্শ করেছেন। ১৯৩৩-৩৪ মৌসুমে জুভেন্টাসের হয়ে বোরেল ৩১ গোল করেছিলেন। এরপরও অবশ্য এবারের লীগে রোনাল্ডো এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্কোরার নন। ৩৪ গোল করে সি আর সেভেনকে টপকে সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়ে এগিয়ে আছেন সিরো ইমোবিলে। তাঁর দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে ভেরোনাকে ৫-১ গোলে হারিয়েছে ল্যাজিও। শিরোপাটি সমর্থক ও করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন রোনাল্ডো। ম্যাচ শেষে ইন্সটাগ্রামে উচ্ছ্বসিত সি আর সেভেন বলেন, টানা দুই বছর শিরোপা জিততে পেরে আমি দারুণ খুশী। ঐতিহাসিক এই ক্লাবটির হয়ে আরও কিছু অর্জন করতে চাই। এই শিরোপা জুভেন্টাসের সমর্থকদের জন্য উৎস্বর্গ করলাম। বিশেষ করে এই মহামারীতে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের জন্য আমাদের সমবেদনা থাকবে। এটা মোটেই সহজ ছিল না। তোমাদের সাহস, প্রতিজ্ঞা, সমর্থনই আমাদের শক্তি যুগিয়েছে। এই শিরোপার জন্য আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেছি। রোনাল্ডো বলেন, আমাদের এই শিরোপাটি জুভেন্টাসের সকল সমর্থকদের জন্য। বিশেষ করে তাদের জন্য, যারা হুট করে আসা বৈশ্বিক মহামারীতে (করোনাভাইরাস) আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জুভ ডিফেন্ডার লিওনার্ডো বনুচ্চি বলেন, এটা সত্যিকার অর্থেই দারুণ একটি সাফল্য। আমরা অনেক দিন ধরেই শিরোপাটার জন্য লড়াই করেছি। সবাইকে অভিনন্দন। এমন সাফল্যের পরও প্রায়শই রোনাল্ডোর তুরিন ছাড়ার গুঞ্জন শোনা যায়। ইতালিয়ান জায়ান্টে থেকে বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার কারণেই তুরিন ছাড়তে হতে পারে সি আর সেভেনকে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই উড়ে বেড়াচ্ছেন রোনাল্ডো। পর্তুগীজ এই সুপারস্টার নিজ দেশের ক্লাব স্পোর্টিং সিপি থেকে প্রথমে আসেন ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। সেখানে ২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কাটিয়ে নাম লেখান স্প্যানিশ পরাশক্তি রিয়াল মাদ্রিদে। গালাক্টিকো তাঁবুতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত থেকেই মূলত ক্যারিয়ারের সেরা পারফরমেন্স দেখিয়েছেন সি আর সেভেন। এরপর ২০১৮ সালে অনেকটা আচমকাই নাম লেখান ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাসে। কিন্তু মাত্র এক বছরের ব্যবধানেই নাকি ইতালি ভাল লাগছে না পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকার। বিশেষ করে গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে তার দল জুভেন্টাস বিদায় নেয়ার পর নাকি রোনাল্ডো ইতালি ছেড়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের উদ্ধৃতিতে ২০১৯ সালের এপ্রিলে এমনই জানা গিয়েছিল। এক বছর পর আবারও একই গুঞ্জন চাউর হয়েছে। তার মানে, সুযোগ পেলে তুরিনের ওল্ডলেডিদের গুডবাই জানাবেন রোনাল্ডো। এবার কারণ হিসেবে জানা গেছে করোনা সঙ্কট। বৈশ্বিক এ মহামারীতে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা ইতালির। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এতে ক্লাবের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে। ক্লাবের আর্থিক ক্ষতির কথা মাথায় রেখে বেতন থেকে একটা বড় অংশ ছাড় দিয়েছেন রোনাল্ডোরা। কিন্তু এই অবস্থার মধ্যেই একটা শঙ্কা উঁকি দিচ্ছে জুভেন্টাস ভক্তদের মনে। কারণ তুরিন ছেড়ে যেতে পারেন দলের সবচেয়ে বড় তারকা। জানা গেছে, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মরিয়া জুভেন্টাস। আর এর প্রভাব পড়বে রোনাল্ডোর বিশাল অঙ্কের বেতনেও। পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী এই তারকা ফুটবলারের বার্ষিক বেতন ৩১ মিলিয়ন ইউরো। করোনার কারণে সৃষ্ট সঙ্কট কেটে গেলেও রোনাল্ডোর বিশাল অঙ্কের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হবে জুভেন্টাসকে। এজন্যই জুভেন্টাসে তার ভবিষ্যত নাকি অনিশ্চিত। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা হচ্ছে ৭০ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফিতে তার অন্য কোন ক্লাবে পাড়ি জমানো। জুভেন্টাসের সঙ্গে রোনাল্ডোর চুক্তির মেয়াদ ২০২২ সাল পর্যন্ত। এমন সম্ভাবনার কথাও বলা হচ্ছে যে, চুক্তির মেয়াদ শেষ করেই অন্য কোথাও যাবেন তিনি। কিংবা পরিস্থিতি ভাল হলেও আরও এক মৌসুম থেকে যেতে পারেন। জানা গিয়েছিল, রোনাল্ডোর জুভেন্টাস ছাড়ার গুঞ্জনে তাঁকে কেনার জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ফরাসী ক্লাব প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইন (পিএসজি) ও ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। জানা গেছে, নেইমারকে আগামী গ্রীষ্মেই বেচে দিতে পারে পিএসজি। সেক্ষেত্রে ফরাসী ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপের সঙ্গে জুটি বাঁধার জন্য রোনাল্ডোকেই পছন্দ ফরাসী চ্যাম্পিয়নদের। পর্তুগাল অধিনায়ক তার সাবেক ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকেও অফার পেয়েছেন। ইংলিশ জায়ান্টদের পুরনো সম্মান ফিরিয়ে আনতে রোনাল্ডোর চেয়ে বড় বিকল্প আর নেই। তবে এজন্য ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন্স লীগে কোয়ালিফাই করতে হবে। সেটা ইতোমধ্যে করেও ফেলেছে রেড ডেভিলসরা।
×