ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কর্মপরিকল্পনা ঠিক হয়েছে

ঈদের পর সর্বস্তরে বিএনপির পুনর্গঠন

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ২৯ জুলাই ২০২০

ঈদের পর সর্বস্তরে বিএনপির পুনর্গঠন

শরীফুল ইসলাম ॥ আসন্ন ঈদের পর বিএনপির সর্বস্তরে কমিটি পুনর্গঠন শুরু হবে। তৃণমূল থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠন করবে দলটি। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছে। সম্প্রতি ধারাবাহিকভাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বেশ ক’টি ভার্চুয়াল বৈঠকে এ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হয়। সূত্র মতে, বিএনপির হাইকমান্ড ও দল সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে চাপ থাকলেও এতদিন দল পুনর্গঠনের বিষয়টি নিয়ে এগুতে পারেনি। দলের সিনিয়র নেতাদের মতে, নানান প্রতিবন্ধকতা থাকায় এতদিন তারা এ কাজে অগ্রসর হতে পারেনি। আর সর্বস্তরে দলের কমিটি পুনর্গঠন করতে না পারায় নেতাকর্মীরাও সাংগঠনিক কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ নেতাকর্মীও ঝিমিয়ে পড়ে। আর করোনা পরিস্থিতিতে এসে দলের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়ে। এদিকে সর্বস্তরে দলের নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও বন্যা শুরুর পর বিএনপি হাইকমান্ড সারাদেশের নেতাকর্মীর প্রতি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বার বার আহ্বান জানালেও সে আহ্বানে তেমন সাড়া মেলেনি। দলের মাত্র ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা ও কিছু তৃণমূল নেতা অসহায়দের পাশে দাঁড়ালেও সিংহভাগ নেতাকর্মীই ছিলেন নিষ্ক্রিয়। বিএনপিপন্থী প্রধান বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদের মৃত্যুর কিছুদিন আগেও সর্বস্তরে কমিটি পুনর্গঠন করে বিএনপিকে নতুন উদ্যমে এগিয়ে নেতার তাগিদ দিয়েছেন। তাঁর জীবদ্দশায় বিষয়টি আমলে না নিলেও তিনি মারা যাওয়ার পর বিএনপি হাইকমান্ডের টনক নড়ে। আর এ কারণেই ঈদের পর থেকে সর্বস্তরে দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবার দলের সর্বস্তরের কমিটি পুনর্গঠন করা হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অবশ্য এর আগেই ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয় কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে। একইভাবে বিএনপির সর্বস্তরে কমিটি করা হবে। আর এসব কমিটিতে ৩৩ভাগ নারীকে স্থান দেয়া হবে বলেও দলের সাম্প্রতিক স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নানান প্রতিবন্ধকতার কারণে সর্বস্তরে দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করা যায়নি। তবে শীঘ্রই সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সর্বস্তরে দল পুনর্গঠন করা হবে। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল তাই গণতান্ত্রিকভাবেই দল পুনর্গঠনের কাজটি করা হবে। সম্প্রতি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে করোনা পরিস্থিতির কারণে দল পুনর্গঠন কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানান। তবে ১৬ আগস্ট থেকে পুরোদমে দল পুনর্গঠন কাজ শুরু হবে বলে তিনি প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানান। বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলটির সাংগঠনিক কার্জক্রম বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এর ফলে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে আবার নতুন উদ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরুর পাশাপাশি মাঠের রাজনীতিও জোরদার করতে চায় তারা। এ জন্য নানামুখী কর্মকৌশল গ্রহণ করেছে দলীয় হাইকমান্ড। ইতোমধ্যেই সারাদেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর কাছে কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ঈদের সময় নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে কেন্দ্রীয় নেতারা দল পুনর্গঠনের প্রস্তুতির কাজে সহযোগিতা করবেন। জানা যায়, বিএনপির নির্বাহী কমিটিসহ সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অধিকাংশ কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। এ ছাড়া ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ৯টির কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। দেশে করোনা পরিস্থিতি শুরুর অনেক আগে থেকেই সাংগঠনিক কার্যক্রমের গতি থামিয়ে দেয়া হয়। আর করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর সাংগঠনিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়। এর ফলে এসব কমিটিতে থাকা নেতাকর্মীরা দলবিমুখ হয়ে পড়ায় সর্বস্তরের সাধারণ নেতাকর্মীও হতাশ হয়ে দলীয় কর্মকা- থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে। এতে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা মাথায় নিয়ে কারাগারে যাওয়ার মাত্র একদিন আগেও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সর্বস্তরে দল গুছিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কারাগারে যাওয়ার পর কারো মধ্যেই খালেদা জিয়ার নির্দেশনা বাস্তবায়নের আগ্রহ দেখা যায়নি। এর ফলে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপি না পেরেছে সর্বস্তরে দল গুছিয়ে এগিয়ে যেতে, না পেরেছে রাজপথে আন্দোলন করতে। মূলত, ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে। লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রহমানের নির্দেশে সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কার্যক্রম চললেও এ নিয়ে নানান সমস্যা দেখা দেয়ায় এক পর্যায়ে গতি থেমে যায়। এর ফলে সরাদেশের সর্বস্তরে নেতাকর্মীর মধ্যে হতাশা বিরাজ করে। এর মধ্যেই এ বছর মার্চ থেকে দেশে করোনা পরিস্থিতি শুরু হলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েই সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। তবে ঈদের পর ১৬ আগস্ট থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম আবারও শুরু করার কথা বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এদিকে স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে দেশে করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শর্তসাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পান। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পর তিনি সর্বক্ষণিক গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থান করলেও বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। আবারও মুক্তির সময় বাড়িয়ে নেয়া যায় কিনা এমন চিন্তাভাবনা থেকে তিনি এখন দলীয় রাজনীতি থেকে দূরে অবস্থান করছেন। দলের ক’জন সিনিয়র নেতা তাঁর সঙ্গে দেখা করেও সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে কোন নির্দেশনা পাননি। তাই তারাও এতদিন সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে এত সিরিয়াস ছিলেন না। তবে সম্প্রতি লন্ডন থেকে তারেক রহমান সিনিয়র নেতাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের আহ্বান জানান। এ ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও তিনি দল পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করার কথা বলেন। ঈদের আগেই সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে কেন্দ্র থেকে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে কোন্ এলাকায় সংগঠনের কি অবস্থা সে বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হবে। এর পর কেন্দ্রীয় নেতারা আসন্ন ঈদের সময় নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠনের প্রস্তুতি শুরু করবেন। সেই সঙ্গে তারা নিজ নিজ এলাকায় বিভিন্ন ইউনিটের আংগঠনিক অবস্থা কেমন সে বিষয়ে রিপোর্ট প্রদান করবেন। এর পর কেন্দ্র থেকে সমন্বয় করে ঈদের পর পুরোদমে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু হবে। ঈদের পর সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে দলীয় কার্যক্রম গতিশীল করার চেষ্টা করবে। ইতোমধ্যেই বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের এ কথা জানানো হয়েছে। আর জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও নিজ স্বার্থেই তাদের এলাকায় দল পুনর্গঠন ও কর্মসূচী পালন করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
×