ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

উজানে ভারি বৃষ্টি

বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২৯ জুলাই ২০২০

বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের বন্যা পরিস্থিতির জন্য আবারও অশনি সংকেত আসছে। তৃতীয় দফায় দেশের বন্যা পরিস্থিতি যখন স্থিতিশীল হয়ে আসছে, ঠিক এমন সময়ই দেশের উজানে শুরু হয়েছে ভারি বৃষ্টিপাত। সেখানে এত বেশি মাত্রায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে যে ভারতের আবহাওয়া দফতর সংশ্লিষ্ট এলাকায় রেড এলার্ট জারি করেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দু-একদিনের মধ্যে দেশের ভেতরের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যাবে। ফলে আবারও বন্যা পরিস্থিতি অবনতি ঘটতে পারে। বিশেষ করে উজানে পানি এবং দেশের ভেতরের বৃষ্টিপাতের পানি মিলিত হলেও বন্যা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। গত কয়েক দিনে দেশের বৃষ্টি পরিমাণ কমে আসায় তাপমাত্রা বেড়ে ভ্যাপ্সা গরমের তীব্রতা বেড়ে যেতে থাকে। মঙ্গলবার থেকে এ অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। দেশের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে মুষল ধারে বৃষ্টিপাত। রাজধানী ঢাকাতেও সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ফলে গরমের তীব্রতা কিছুটা হলেও কমেছে। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকায়ও শুরু হয়েছে মুষল ধারে বৃষ্টি। এদিকে ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে লাগাতার বৃষ্টিতে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে উত্তরবঙ্গে। পাহাড়ী নদীগুলো ফুঁসছে। ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। এ পরিস্থিতির মধ্যেই এবার উত্তরবঙ্গের জন্য রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। তারা জানায় আগামী তিনদিন প্রবল বৃষ্টি চলবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে। তারা জানায়, রাতভর প্রবল বৃষ্টির কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। বৃষ্টির পানিতে ভেসে গিয়েছে সেতু, রাস্তা। উজানে বিশেষ করে ভুটানেও ভয়াবহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এ কারণে নদীগুলোতে কয়েকগুণ পানি বেড়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন হিমালয়ের পাদদেশে মৌসুমি অক্ষরেখা অবস্থান করছে। তার ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। এ ছাড়াও একটি হিমালয়ের পার্বত্য এলাকা থেকে বাংলাদেশ সংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত একটি লঘুচাপও অবস্থান করছে। এর ফলে বিভিন্ন এলাকায় আগামীকালও বৃষ্টি হতে হবে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর এবং নওগাঁ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। অপরদিকে, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। তারা জানায় দেশের উত্তরাঞ্চলের ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি আবারও বাড়বে। ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদী বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই দফায় তিস্তার পানি বিপদসীমা পেরুলে এই মৌসুমে রেকর্ড ৫ বার বিপদসীমা অতিক্রম করবে। অতীতে তিস্তা নদীর পানি এক মৌসুমে একবারের বেশি বিপদসীমা অতিক্রম করতে দেখা যায়নি। তারা জানায় সমতলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীসমূহের পানি হ্রাস পাবে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে, ঢাকা জেলার আশপাশের নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে, উত্তরাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের পর্যবেক্ষণাধীন ১০১ নদী সমতল স্টেশনের মধ্যে বৃদ্ধি ৪৩, হ্রাস ৫৫,অপরিবর্তিত রয়েছে ৩, বিপদসীমার উপরে ১৮টি, বিপদসীমার উপরে স্টেশনের সংখ্যা ২৯। যেসব নদী এখনও বিপদসীমা অতিক্রম করে বয়ে চলেছে তার মধ্যে রয়েছে কুড়িগ্রামে ধরলা নদী, গাইবান্ধায় নঘাগট নদী, নুনখাওয়া ও চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদ, ফুলছড়ি, সারিয়াকান্দি, বাহাদুরাবাদ, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ, আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদী পানি, সিংড়ায় গুড় নদীর পানি, এলাসিনে ধলেশ্বরী নদীর পানি, জামালপুরে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানি, ডেমরায় বালু নদীর পানি, নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি, ঢাকার মিরপুরে তুরাগ নদের পানি, টঙ্গী খালের পানি, তারাঘাটে কালিগঞ্জ নদীর পানি, মানিকগঞ্জে ধলেশ্বরীর নদীর পানি, আত্রায়ে আত্রাই নদীর পানি, গোয়ালন্দ, ভাগ্যকূল ও মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি, মাদারীপুরে আড়িয়াল খা নদীর পানি, দিরায়ে পুরনো সুরমা নদীর পানি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর পানি এবং চাঁদপুরের মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে গত ২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশের প্রধান প্রধান এসব নদী পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে করে চলেছে। অতীতে এক সঙ্গে এত সময় ধরে এত নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে বয়ে চলার রেকর্ড খুব কমই আছে। গাইবান্ধা ॥ গাইবান্ধায় সব নদীর পানি কিছুটা কমলেও ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি এখনও বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে প্রায় এক মাস ধরে বন্যার পানি আটকে থাকায় উপদ্রুত এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
×