ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মানুষের খাদ্যের যেন অভাব না হয় ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৩:০২, ২৯ জুলাই ২০২০

মানুষের খাদ্যের যেন অভাব না হয় ॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা সঙ্কটে দেশে যেন খাদ্য ঘাটতি না হয় সে জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ঠিক, করোনাভাইরাস আমাদের অনেকটা পিছিয়ে দিচ্ছে। তারপরও আমাদের কৃষির যে অগ্রগতি এটা ধরে রাখতে হবে। আমাদের মানুষের আর যাই হোক খাদ্যের অভাবটা যেন না হয়। সেটা আমাদের দেখতে হবে। বাংলাদেশ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে, আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভার বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। এছাড়া সভায় বিভিন্ন নির্দেশনাও দেন। একনেক সভায় সাতটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারের নিজস্ব ব্যয় ২ হাজার ১৩২ কোটি ৮৮ লাখ আর বৈদেশিক ঋণ ৯৪২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। একনেকের অন্য সদস্যরা রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি কনফারেন্স রুম থেকে বৈঠকে সংযুক্ত হন। একনেক সভা শেষে প্রকল্প ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। একনেক সভার সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী গত ১১ বছরে কৃষি খাতের উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ বিশদভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সারের দাম কমানো, ভালমানের বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহসহ কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দুই কোটি কৃষককে কৃষি উপকরণ সরবরাহ করার জন্য কার্ড প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, এক কোটি কৃষক ১০ টাকায় ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খুলেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর একাধিকবার সারের মূল্য কমিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি শাসনামলে প্রতি কিলোগ্রাম ডিএপি সারের মূল্য ছিল ৯০ টাকা। কিন্তু এখন কৃষকরা সেই সার পাচ্ছেন ১২ টাকায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আরও উল্লেখ করেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ দলের সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা ও কর্মী বোরো মৌসুমে ধান কাটায় কৃষককে সহায়তা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা ঠিক, করোনাভাইরাস আমাদের অনেকটা পিছিয়ে দিচ্ছে। তারপরও আমাদের কৃষির যে অগ্রগতি এটা ধরে রাখতে হবে। আমাদের মানুষের আর যাই হোক তাদের খাদ্যের অভাবটা যেন না হয়। সেটা আমাদের দেখতে হবে। তিনি বলেন, খাবারের ব্যবস্থাটা যদি আমরা ঘরে রাখতে পারি। তাহলে অন্য কোনদিকে খুব একটা সমস্যা হবে না। আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব। নগদ অর্থসহায়তা, কৃষককে সার, উন্নতমানের বীজসহ কৃষি উপকরণ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। এভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় সব করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের পাশে দাঁড়ানো এটাই আমাদের কাজ। করোনা সঙ্কটকালীন যারা কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য উৎপাদন, বিশেষ করে ধান কাটার ব্যাপারে আমাদের সংগঠনের প্রতিটি সহযোগী সংগঠন, আমাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী তারাও কিন্তু মাঠে নেমে গেছে। নিজের হাতে ধান কেটে কৃষকের ঘরে তুলে দিয়েছে। এই কাজ করতে যেয়ে আমাদের অনেকে কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অনেকে মৃত্যুবরণও করেছে। যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। বাংলাদেশ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসডিজিও আমরা অর্জন করব। বিশেষ করে এসডিজির ১৭টি মূল নির্দেশনা রয়েছে। তার মধ্যে যে কয়টা আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য, সেসব নিয়ে নাড়াচাড়া করার দরকার নেই। ঠিক যে কয়টা আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজন অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সেগুলো আমরা সংযুক্ত করে নিয়েছি। সেগুলো বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ! আমরা তা অর্জন করতে পারব। এটা ঠিক, করোনাভাইরাস আমাদের অনেকটা পিছিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো অনলাইন সংবাদ ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যেসব কথা বলেছেন, তা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, রাজশাহী ও খুলনায় দুটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে নাগরিকদের পানির সুবিধার জন্য। এখানে কিছু প্রশ্ন উঠেছিল সঙ্গত কারণেই। এখানে নাগরিকরা পানি খাবেন, তারা পয়সা দেবেন না - এই ধরনের প্রশ্ন উঠতে পারে সঙ্গত কারণেই। আমরা প্রায়ই আলোচনা শুনি, আমরা কেন স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করছি না? তাদের কেন আরও ক্ষমতা দিচ্ছি না? যে অর্থের প্রয়োজন হয় মানুষের কল্যাণে, সেটা স্থানীয় সরকার থেকে আসা উচিত। যে সব সম্মানিত নাগরিক ঢাকা বা চট্টগ্রামে বাস করেন, তারা যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, অন্যরাও আশা করেন এটা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের চিন্তা করতে হবে, স্থানীয় সরকারগুলো যেন ক্রমান্বয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। আজকে এই টাকা দিতে প্রধানমন্ত্রী রাজি হয়েছেন যে, আমরা রাজস্ব থেকে দেব। কিন্তু এই টাকা ধীরে ধীরে কমাব। দীর্ঘদিন দিতে পারব না। এটা আপনাদের ম্যানেজ করতে হবে। স্থানীয় সরকারকে নিজেদের স্বাবলম্বী হতে হবে। এই হলো মূল বার্তা প্রধানমন্ত্রীর। বাংলাদেশ যেমন পৃথিবীর ওপর নির্ভর করে স্বাধীন হতে পারবে না বা স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে না। স্থানীয় সরকারের জন্য একই। এই কথাগুলো আজকে বেশ বড়সড়ভাবে আলোচনা হয়েছে বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। ‘আমার বাড়ি আমার খামার (চতুর্থ সংশোধিত)’ প্রকল্পটিরও চতুর্থ সংশোধন অনুমোদনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা চিরদিনের জন্য নয়। তারা যেন স্বাবলম্বী হতে পারে। আমরা দীর্ঘদিন দিতেই থাকব, আর তারা নিতেই থাকবে, এটা সম্ভব নয়। এটা হবে না। ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে আলোচনা হয়। ক্ষুদ্র ঋণ মানুষকে পুরোপুরি অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীনতা এনে দেয় না। দিন এনে দিন খাওয়ার মতো ঋণ এনে ঋণ খায়। এক চক্রের মধ্যে ঘুরে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা হলো- এ চক্র থেকে বের করে আনতে হবে। মূল চিন্তা হলো- ঋণ নয়, সঞ্চয়। দিনে এক টাকা হলেও সঞ্চয় করো। যদি তুমি এক টাকা সঞ্চয় করো, তোমাকে আমি আরেক টাকা দেব। দুই টাকা হবে। আপনারা ছাগল পালেন, মুরগি পালেন, মাছ চাষ করেন, যাই করেন না কেন, স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করেন। এই প্রকল্পে এই বার্তা আজকে আবার দেয়া হয়েছে। সমন্বয়হীনতার বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সমন্বয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই কথা বলেন। আজকে আবার বলেছেন, আমাদের মাঝে মাঝে দেখা যায় সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। সমন্বয় জোরদার করার জন্য আমাদের সকলের ওপর তার তাগিদ আছে। আবারও তাগিদ এখানে আসছে। সমন্বয়ে কাজের গতি বাড়ে, আর অপচয় কমে। সেচ প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রেও সচেতন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ রকম প্রকল্প পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। কিন্তু প্রয়োজনীয় হওয়ায় সাবধানে সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে পরিবেশ ঠিক থাকে। অনুমোদিত সাত প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৩৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে নতুন করে স্থাপন করা হবে পাঁচ হাজার ডিজিটাল ল্যাব। এর মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আইসিটিতে দক্ষতা বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে অত্যাধুনিক আইসিটি সুযোগ-সুবিধা সংবলিত স্কুল অব ফিউচার নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় কনটেন্ট তৈরি সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের নিজেদের সহায়তায়। আরও অনেক এলাকা বাদ রয়ে গেছে। বিশেষ করে ইন্টারনেট সেবা সারাদেশে যায়নি। আমাদের সক্ষমতা কম। এটাকে কাভার করতে হবে। এছাড়া ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘রাজশাহী মহানগরীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পুনর্বাসন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। খুলনা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৩৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তুলার গবেষণা উন্নয়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মেহেরপুর মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। একনেক সভায় ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট প্রকল্প থেকে ৪৬০ কোটি টাকা কমিয়ে ১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পে ১২৫ কোটি টাকা কমিয়ে ৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। একনেক সভায় এনইসি মিলনায়তনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শম রেজাউল করিম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মোঃ শাহাবুদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
×