ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাঁচঠাকুরী এখন শুধুই স্মৃতি

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ২৯ জুলাই ২০২০

পাঁচঠাকুরী এখন শুধুই স্মৃতি

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ ॥ গাছগাছালীর ছায়াঘেরা পাঁচঠাকুরী, যমুনাপাড়ের একটি জনপদ। ক’দিন আগেও যেখানে ছিল জীবনের কোলাহল, পাখির কিচিরমিচির শব্দ। মাত্র চারদিনের ব্যবধানে যমুনার তা-বে এ সবই যেন এখন শুধুই স্মৃতি। ’৯০ দশকের সাড়া জাগানো ‘বেদের মেয়ে জোৎ¯œœা’ সিনেমার খ্যাতনামা নির্মাতা তোজাম্মেল হক বকুলের গ্রামের বাড়ি এই পাঁচ ঠাকুরী এখন যমুনার অতলগর্ভে তলিয়ে গেছে। মানুষের কান্নার রোল পড়েছে। ঈদের আগে তাদের জীবনে নেমে এসেছে এক মহাদুর্যোগ। দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। দিনভর আকাশ থেকে অঝোরে বৃষ্টি পড়েছে। জমিন থেকে ধেয়ে এসেছে যমুনার পানি। কাঁদা মাটিতেই হাঁস মুরগি, গরু ছাগলের সঙ্গে বসতভিটা হারানো মানুষ একাকার হয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে বসবাস করছে। পাঁচঠাকুরী গ্রামের ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত মানুষ এখন দিশেহারা। যমুনার তা-বে ঘরবাড়ি বসতভিটা হারিয়ে নিকটস্থ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সোমবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের যমুনার ভাঙ্গনকবলিত পাঁচঠাকুরী এলাকা ঘুরে এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে। ছোনগাছা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত ওয়ার্ড মেম্বর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জহুরুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকালে প্রথমে প্রায় ৩০ বিঘা আবাদি জমিসহ বেলালের বাড়ি যমুনার প্রবল ঘূর্ণিপাকে দেবে যায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে এলাকার হারুন তালুকদারের বাড়িসহ একই সারির ১৯টি বাড়ি চোখের সামনে যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৬০ বাড়ি যমুনার ঘূর্ণিপাকে তলিয়ে যায়। এসব বাড়ি থেকে মানুষ শুধু তাদের জীবন নিয়ে বের হয়ে এসেছে। বাড়িঘর আসবাবপত্র, ধান-চাল, গরু-ছাগল হাঁস-মুরগি তৈজসপত্র, কাপড় চোপড় কোন কিছুই বের করা সম্ভব হয়নি। জীবনের সকল সঞ্চয় এক নিমিষেই যমুনার অতল গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন এখনও থামেনি। ভাঙ্গন আতঙ্কে এলাকার আরও প্রায় তিন শ’ পরিবার বাড়িঘর সরিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। পাঁচঠাকুরিতে ভাঙ্গন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বিভাগ বালির বস্তা ফেলাসহ প্রতিরক্ষামূলক কাজ শুরু করেছে। এ বছর বর্ষার শুরুতেই যমুনাপাড়ে পাঁচঠাকুরী এলাকায় নির্মিত শিমলা-২ সলিড স্পারের মাটির স্যাংক প্রবল ¯্র্েরাতে ভেঙ্গে ল-ভ- হয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বিভাগ প্রথম দফা বন্যার শুরুতে মাটির তৈরি স্যাংক মেরামত করলেও তা শক্তিশালী কাঠামোর মতো মজবুত করতে পারেনি বন্যার পানির ¯্র্েরাতের টানে। তারপরও নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল এ এলাকাকে। ঘন ঘন ব্যাথমেটিক সার্ভে করে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছিল ঠিকাদার নিয়োগ করে। কিন্তু পানির ঘূর্ণিপাক এবং গভীরতা ক্রমেই বাড়তে থাকে। বলা হচ্ছিল প্রায় দুই শ’ ফুট গভীরতার সৃষ্টি হয়েছে এই এলাকায়। যে কোন সময় ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল পানি উন্নয়ন বিভাগ। কিন্তু জনগণই বা কি করবে। কোথায় যাবে পৈত্রিক ভিটামাটি ছেড়ে। আল্লাহর ওপর ভরসা করেই জীবন চলছিল তাদের। শুক্রবার আকস্মিক নেমে আসে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। পৈত্রিক ভিটায় নির্মিত শখের বাড়িঘর আসবাবপত্র, ধান-চাল, গরু-ছাগল হাঁস-মুরগি তৈজসপত্র, কাপড় চোপড় সব ফেলে জীবন বাঁচিয়েছে মানুষ। কোন কিছুই বের করা সম্ভব হয়নি। জীবনের সকল সঞ্চয় এক নিমিষেই যমুনার অতল গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন এখনও থামেনি।
×