ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টি ও করোনায় দিশেহারা পানচাষী

প্রকাশিত: ২১:৩১, ২৯ জুলাই ২০২০

বৃষ্টি ও করোনায় দিশেহারা পানচাষী

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ টানা বৃষ্টিতে রাজশাহীর পানের বরজগুলো এখন অনেকটায় পানির নিচে। এ কারণে গাছের গোড়া পচে পানপাতা ঝরে পড়ছে। করোনাকালে বাজারে পানের কাক্সিক্ষত দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। এ অবস্থায় দিশেহারা তারা। চাষিরা বলছেন, এবার পান চাষে প্রত্যেককেই লোকসানের হিসাব করতে হবে। অথচ এবার পানের উৎপাদন ভাল ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বেচাকেনা সীমিত হওয়ায় প্রথমেই তারা লোকসানের মুখে পড়েন। এখন টানা বৃষ্টিতে তাদের পুরো পানবরজই নষ্ট হতে বসেছে। কিন্তু বরজ থেকে পানি বের করে দেয়ার পরামর্শ ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছে না কৃষি বিভাগ। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চার হাজার ৩১১ হেক্টর জমিতে পান বরজ রয়েছে। এসব পান বরজ জেলার বাগমারা, মোহনপুর ও দুর্গাপুর উপজেলায়। এবার পান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৮ হাজার ৯৭৬ মেট্রিক টন। গড়ে ৪০ টাকা বিড়া ধরে একটন পানের দাম দাঁড়ায় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। রাজশাহীতে বছরে গড়ে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার পান বেচাকেনা হয়। পান চাষের সঙ্গে জড়িত ৬৯ হাজার ২২৮ কৃষক। পানচাষিরা জানিয়েছেন, পান চাষের জন্য বৃষ্টিপাত ভাল। কিন্তু অতিবৃষ্টি পানের জন্য খুব ক্ষতির কারণ। টানা বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে করোনার কারণেই পানের দাম কমে গেছে। বর্ষা মৌসুমে ৩২ বিড়া (৬৪টি পানে ১ বিড়া) পান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। অথচ গত বছর বর্ষা মৌসুমে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এবার কম দামে পান বিক্রি হলেও চাষিদের বরজটি অন্তত থাকছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে সেই বরজই নষ্টের উপক্রম। জেলার মোহনপুর উপজেলার আমরাইল গ্রামের চাষি মিলন জানান, এক বিঘা জমিতে একটি পানবরজে বছরে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়। বাজার ভাল হলে খরচসহ চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার পান বিক্রি করা যায়। কিন্তু এবার করোনার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে অনেকের বরজই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানচাষি আব্দুস সালাম জানান, এক বিড়া পান গতবছর এই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। সেই পান এখন বিক্রি হচ্ছে বিড়াপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর ছোট যে পান ৫০ টাকা বিড়া দরে বিক্রি হয়েছে, সে পান বিক্রি হচ্ছে বিড়াপ্রতি দুই টাকা দরে। পান বিক্রি করে শ্রমিকের খরচটাই উঠছে না। আরেক পানচাষি আহসান হাবিব বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে অনেক পানের বরজ হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে। এতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাছ আর পচে যাচ্ছে পাতা। পান ভেঙ্গে বাজারে তুললেও নামমাত্র দামে বিক্রি হচ্ছে। করোনাকালে দোকানপাটে পান বিক্রি কমে আসায় কমে গেছে চাহিদা। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামসুল হক জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ছোট ছোট ভাসমান দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। বড় অনেক দোকানও বন্ধ রয়েছে। এসব কারণে পানের দাম এখন কম। এছাড়া রাজশাহীর পান মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানেও যেত। এখন তো বিমান চলাচলও বন্ধ, তাই যেতে পারছে না। করোনাকালীন দুর্যোগের কারণে অনেকেই দোকানপাটে গিয়ে পান খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। এসব কারণে পানচাষিদের ওপর প্রভাব পড়েছে। তিনি জানান, গত সাত দিনে রাজশাহীতে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এতে পানবরজে পানি জমেছে। ইতোমধ্যে ২০ হেক্টর জমির পান নষ্ট হয়েছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, গেল বছর জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৩০০ মিলিমিটার।
×