ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিকে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০১:১০, ২৮ জুলাই ২০২০

প্রাথমিকে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার কারণে শিক্ষায় সৃষ্ট সঙ্কট সামাল দিতে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত ও শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে সরকার। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন সোমবার এক অনুষ্ঠানে এ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেছেন, মহামারীর প্রকোপ কমলে আগামী সেপ্টেম্বরে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সম্ভব হয়, তাহলে এ বছরের মধ্যেই প্রাথমিকের শিক্ষাবর্ষ শেষ করা হবে। আর সেপ্টেম্বরে স্কুল না খুললে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ শিক্ষাবর্ষ দীর্ঘায়িত হতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখনই খুলুক, এবার প্রাথমিকের সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। সোমবার শিক্ষা বিটের সাংবাদিকদের একটি অংশের সংগঠন ইরাব আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। সেমিনারে আরও ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ আকরাম আল হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ ফসিউল্লাহ, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, ইরাবের সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইরাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোঃ জসিম। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যালয় খোলার পর কতটুক সিলেবাসের ওপর পরীক্ষা নেয়া হবে সেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিকে (নেপ) সংশোধিত সিলেবাস তৈরি করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয় সেপ্টেম্বরে যদি খোলে, কিংবা না খুললে কীভাবে পরীক্ষা নেয়া যায় সে বিষয়ে সংশোধিত সিলেবাস প্রণয়নে আমরা কাজ হাতে নিয়েছি। যদি খোলা হয়, তাহলে এক ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে, না হলে আরেক ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। জাকির হোসেন বলেন, স্কুল খোলার পর কতটি ক্লাস নেয়ার সুযোগ থাকবে, তার ওপর ভিত্তি করে সংশোধিত সিলেবাস তৈরি করা হবে। শিক্ষার্থী পরের শ্রেণীতে ওঠার জন্য যোগ্য কিনা, তা যাচাই করতে পরের ক্লাসের জন্য সম্পর্কযুক্ত বিষয় চিহ্নিত করে এই সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করতে বলা হয়েছে। যেসব চ্যাপ্টারে বেশি গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কেজ রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সিলেবাস তৈরির নির্দেশনা আমরা দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের শ্রেণীভিত্তিক মৌলিক সক্ষমতা অর্জনের বিষয় চিহ্নিত করে নতুন করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শিক্ষাবর্ষ শেষ করতে জোর দিচ্ছি। প্রাথমিক সমাপনীসহ ক্লাসভিত্তিক পরীক্ষা নিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বন্ধের কোন পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই। বরং এ পরীক্ষা আরও যুগোপযোগী করতে একটি বোর্ড গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে। সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন জানান, আগামী দুই/এক সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিকের ক্লাস রেডিওর মাধ্যমে প্রচার শুরু করা হবে। রেডিওর মাধ্যমে পাঠদান শুরু করতে পারলে আমরা ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে যাব। এছাড়া শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে পাঁচ মিনিট ফোনে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে। আমরা এখন পরীক্ষা নিয়ে ভাবছি না, আমরা এখন মূল্যায়ন করব। শিক্ষার্থী পরের ক্লাসের জন্য প্রস্তুত কিনা, আমরা তা মূল্যায়ন করব, এজন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করা হবে। মহাপরিচালক মোঃ ফসিউল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে ‘রিকভারি প্ল্যান’ করছেন তারা। স্কুল খোলার পর কতটুকু সময় পাওয়া যাবে, তার আলোকে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। ৪৫ শতাংশ পরিবারে টিভি আছে বলে আমাদের জরিপে এসেছে। অন্যের বাড়ি গিয়ে কিছু শিক্ষার্থী টিভির ক্লাস দেখছে। তবে অনুষ্ঠানে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলছেন, এই মহামারীর মধ্যে শিক্ষায় বৈষম্য বাড়ছে, টিভির ক্লাসের আকর্ষণ হারিয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেটের ওপর করের বোঝা কেন আরোপ করা হলো? কোন্ অদৃশ্য কারণে এটা প্রত্যাহার করা হলো না? অবিলম্বে এটা প্রত্যাহারের দাবি করছি, নইলে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ রাখা সম্ভব নয়। অনলাইন ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ কীভাবে গড়ব? অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে রাশেদ রাব্বী নামে একজন অভিভাবক বলেন, তার দুই সন্তান ঢাকার একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে। সংসদ টিভির ক্লাস তাদের খুব কম কাজে আসছে। কারণ এই টিভির শব্দ ও ছবি নিম্নমানের। রংপুর ক্যাডেট কলেজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রওশন আরা বলেন, স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী পরিবারের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজে যুক্ত হয়েছে। টিভির মাধ্যমে তৃণমূল পর্যন্ত শিক্ষা পৌঁছানো কষ্টসাধ্য। ঝালকাঠির কীর্তিপাশা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিমুল সুলতানা হ্যাপী বলেন, স্থানীয় কেবল অপারটেরদের মাধ্যমে টিভির ক্লাস প্রচার করা হলে তা অনেক বেশি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাবে।
×