সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন- তাদের অনেকের মাল্টি অর্গান ফেইলিউর হচ্ছে। বিশেষ করে কিডনি, লিভার, হার্ট এবং ফুসফুসের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। আমরা সবাই মনে করি করোনাভাইরাস শুধুমাত্র ফুসফুসকে সংক্রমিত করে থাকে। কিন্তু বাস্তবে রোগীদের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে কিডনি এবং হার্ট সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ফুসফুসের সংক্রমণ অনেক সময় দ্রুত ভাল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হার্ট বা কিডনিতে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করছে। আপনার বুকে যদি চাপ দেয়া ব্যথা অনুভব হয় তাহলে অবশ্যই দ্রুত আপনার ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। তবে কোন বিষয়ে কখনই বিচলিত হবেন না। টেলিমেডিসিন সেবা নিয়ে আপনি চাইলেই অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারেন। যারা ক্রনিক কিডনি রোগে ভুগছেন, নিয়মিত ডায়ালাইসিস করছেন অথবা কিডনি সংক্রান্ত কোন জটিলতায় ভুগছেন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে। তাই কিডনি রোগীদের সাবধানে থাকতে হবে যেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পারে। করোনাভাইরাস হার্টের রোগীদের মায়োকার্ডাইটিস সৃষ্টি করতে পারে। হার্টের মাংসপেশির প্রদাহকে মায়োকার্ডাইটিস বলা হয়। শুধু হার্টের রোগী কেন বরং সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রেও এমনটি হতে পারে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে হার্ট ফেইলিউর হতে পারে। অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন হতে পারে। অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন থাকলে আপনার ব্রেনস্ট্রোক হতে পারে। তাই হার্টের রোগীদের সাবধানে থাকতে হবে। হার্টের রোগীরা সাবধানে জীবনযাপন করবেন। সবার একটি কথা মনে রাখতে হবে করোনাভাইরাস শুধুমাত্র হার্টের রক্তনালী নয় বরং শরীরের অন্যান্য স্থানের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধিয়ে ফেলতে পারে। করোনাভাইরাস চলাকালীন সময়ে আপনি যদি স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ সেবন করে থাকেন তাহলে নিয়মিত ওষুধ সেবন করবেন। স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ করোনা সংক্রমণের কারণে রক্তনালীর প্রদাহকে কমাতে সাহায্য করে এবং পাশাপাশি রক্তের খারাপ কোলস্টেরলকে কমাতে সাহায্য করে। করোনাভাইরাস যেহেতু লালাতে অবস্থান করতে পারে তাই আপনার মুখের যতœ নিতে হবে। যদি মুখের অভ্যন্তরে মাড়ি দিয়ে রক্তপাত হয় তবে সে ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে যেন রক্তের মাধ্যমে আপনার হৃদযন্ত্র আক্রমণ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ কারণে মুখের অভ্যন্তরে যেন কোন পেরিওডন্টাল পকেট না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পরিবারের টুথব্রাশগুলো একসঙ্গে রাখলে বিভিন্ন ধরনের ফাংগাল এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। আপনারা সবাই জানেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরেও অনেকের দেহে কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তাই আপনার পরিবারের টুথব্রাশগুলো এক সঙ্গে রাখলে একজনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ থাকলে সবার টুথব্রাশে সংক্রমিত হবে। অতএব সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এ্যাজমা রোগীদের আলাদাভাবে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে নেবুলাইজার ব্যবহার করতে হবে। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বাসায় এক জায়গায় বসে থাকবেন না। ছাদের উপরে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। ঘরে বসে হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। ঘাতক ব্যাধি ছাড়াও করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আপনার শরীরে প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া অনুভব, মাথা ব্যথা, অন্ত্রনালীর সমস্যা, বুকে চাপ অনুভবসহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। সাধারণ হাঁচি-কাশিতে ভয় পাবেন না। প্রয়োজনীয় এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ সেবন করলে এসব হাঁচি-কাশি এবং সর্দি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে অবস্থার উন্নতি না হলে এবং করোনার লক্ষণ আপনার মধ্যে উপস্থিত থাকলে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত হলে কখনই আতঙ্কিত হয়ে ভাববেন না যে, আপনি মরে যাবেন। ক্রমাগতভাবে ভয় পেতে থাকলে তা আপনার জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। ক্রমাগত দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকলে আপনার স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। ফলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা কঠিন হয়ে পড়বে। মনে রাখবেন বুকে চাপ অনুভব করলে, শ্বাস কষ্ট হলে অবশ্যই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা কখনই বাসায় ঠিকভাবে করা যায় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে নেয়ার আগেই রোগীকে কিছু জরুরী ওষুধ সেবন করানো প্রয়োজন হতে পারে। কারণ অনেক রোগী হাসপাতালে নিতে নিতে মারা যায়। তাই ভয় নয়, সবাইকে সচেতন হতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল : ০১৮১৭৫২১৮৯৭