ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষীণকায় কারণ এবং করণীয়

প্রকাশিত: ০১:০৫, ২৮ জুলাই ২০২০

ক্ষীণকায় কারণ এবং করণীয়

আন্ডারওয়েট বিষয়টি ওজনআধিক্যের মতো সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না থাকলেও এই শারীরিক অবস্থাটি কিন্তু কোন অংশেই কম গুরুত্ব বহন করে না। বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের কাম্য ওজনের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম এবং বি.এম.আই ১৮.৫ এর নিচে থাকলে আন্ডারওয়েট বা ক্ষীণকায় ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৮.৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৯.৭ শতাংশ মহিলা বর্তমানে এই ক্ষীণকায়ত্ব সমস্যায় আক্রান্ত। অনুন্নত দেশগুলোতে দারিদ্র্যতার কারণে খাদ্যাভাব মূল কারণ হলেও উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর পেছনের কারণগুলো কিন্তু একেবারেই ভিন্ন। জিনগত গঠন, উচ্চ বিপাক হার, বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস, হাইপার-থাইরয়েডিজম, ক্যান্সার, এইডস, যক্ষ্মা, কৃমির সংক্রমন, পরিপাকজনিত অসুখ (ঘন ঘন এবং দীর্ঘমেয়াদী বমি এবং ডায়রিয়া), ম্যালবসরপসন সিনড্রম, দীর্ঘমেয়াদী এবং উচ্চ জ্বর, বার্ধক্যজনিত মাংসপেশীর ক্ষয় এসব শারীরিক অবস্থায় হজম শক্তি এবং শোষণ ক্ষমতা কমে যায় যার ফলে পর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ করা সত্ত্বেও ওজন হ্রাস পেতে থাকে। যে সব ব্যক্তি অতি সক্রিয়, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করে, নার্ভাস প্রকৃতির এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করে না তাদেরও ক্ষীণকায় হতে দেখা যায়। একাকীত্ব, উদ্দীপনার অভাব, ভারবাসার অভাব এবং অর্থনৈতিক সমস্যার কারণেও অনেকের ওজন হ্রাস পেতে দেখা যায়। এ্যানো রক্সসিয়া নার্ভোসার মতো মানসিক অসুস্থতার কারণে ব্যক্তি খাবার গ্রহণ করতে চায় না, খাবার দেখলে ভয় পায় ফলে ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হয় এবং ওজন হ্রাস পায়। আন্ডারওয়েট ব্যক্তির কাজে উৎসাহ কম থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, ঠা-ার প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, হাড়ের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায় এবং অষ্টিওপোরসিসের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে, মাংসপেশী ক্ষয়ের কারণে দুর্বলতা বৃদ্ধি পায়, ভারী কাজ করতে পারে না এবং উৎপাদনশীলতা কমে যায় ফলে সৃজনশীলহীন নাগরিকে পরিণত হয়। ক্ষীণকায় মেয়েদের মধ্যে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা যায়, গর্ভকালীন জটিলতা বৃদ্ধি, স্বল্প ওজনের (২.৫ কেজির নিচে) শিশুর জন্ম এবং তা থেকে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এসব ক্ষেত্রে ওজন বৃদ্ধি করা অনেকটাই কঠিন হয়ে ওঠে। সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং নিয়মিত পরিমিত পরিমাণ ব্যায়ামের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত ওজন লাভ করা সম্ভব হয়। ক্ষীণকায় ব্যক্তিকে কাক্সিক্ষত ওজন প্রাপ্তির জন্য তার বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী দৈনিক ক্যালরি চাহিদার ৫০০-১০০০ কিলো ক্যালরি অধিক গ্রহণ করতে হয়। শর্করা, আমিষ এবং বিশেষত চর্বি জাতীয় খাবারগুলোকে (বাটার, পনির, ভোজ্য তেল, আইসক্রিম, ঘি, মারজারিন) খাদ্য তালিকায় প্রাধান্য দিতে হবে। তবে শুরুতেই ফ্যাট জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে দেয়া উচিত নয় এতে ডায়রিয়া এবং বমি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, আস্তে আস্তে পরিমাণ বাড়াতে হয়। দৈনিক খাদ্য চাহিদাকে ৭-৮ বারে ভাগ করে ছোট ছোট পরিবেশন গ্রহণ করতে হবে। এতে বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে, সহজে হজম হবে এবং সুন্দরভাবে ওজন বৃদ্ধি পাবে। খাদ্য তালিকায় দৈনিক উচ্চ ক্যালরি যুক্ত চিনি, ডিম, ননী যুক্ত দুধ, কলা, কিসমিস, আলু, গাজর, বিভিন্ন ধরনের ডাল, চীনা বাদাম, তৈলাক্ত মাছ, চর্বিযুক্ত মাংস রাখতে হবে। অধিক ঘনত্ব ও ক্যালরি বহুল পুডিং, কেক, ফিরনী, পনির, মিল্কসেক, মিষ্টি, কাস্টার্ড তালিকায় রাখা যেতে পারে। খেজুর আঙ্গুর, সবেদা, আমের মতো উচ্চ ক্যালরি যুক্ত ফল তালিকায় রাখতে হবে। ৬-৮ গ্লাস পানি অত্যাবশ্যক যা শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। প্রতিদিন অন্তত ২০-৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম (হাটা, স্কিপিং) পুষ্টির শোষণ এবং ক্ষুধা তৈরিতে সহায়তা করবে। অধিক আঁশযুক্ত খাবার শোক, লাল আটা, লাল চাল) এবং সালাদ জাতীয় খাদ্য তালিকা থেকে বাদ রাখাই ভাল, এগুলো পেটকে অনেকক্ষণ পর্যন্ত ভরা রাখে এবং ক্ষুধা নষ্ট করে দেয়। প্রাপ্ত বয়স্কদের অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। সর্বোপরি দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে এবং বর্ধিত ওজনকে ধরে রাখতে হবে। সাদিয়া সারতাজ এমফিল পুষ্টিবিদ, ডায়েট ফর হেলদি লাইফ
×