ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী ও চাঁপাইয়ে ভারতীয় গরু ॥ হতাশ দেশী খামারিরা

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ২৮ জুলাই ২০২০

রাজশাহী ও চাঁপাইয়ে ভারতীয় গরু ॥ হতাশ দেশী খামারিরা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ খামারিদের পালন করা দেশী গরুর পাশাপাশি রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুর হাট সয়লাব ভারতীয় গরুতেও। ফলে কোরবানির হাটেও গরুর দাম পাচ্ছেন না খামারি ও ব্যবসায়ীরা। করোনা এবং বন্যা এ সঙ্কট আরও বাড়িয়েছে। জানা গেছে, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত পথে এখনও আসছে ভারতীয় গরু। এসব গরুর একটি বড় অংশ উঠছে সিটিহাটে। কোরবানি টার্গেট করে আগে থেকে আনা ভারতীয় গরুও হাটে তুলছেন লোকজন। ফলে দাম নেই দেশী গরুর। রাজশাহী প্রাণিসম্পদ দফতরের দেয়া তথ্য মতে, জেলায় গরু-মহিষ রয়েছে প্রায় এক লাখ। ছাগল রয়েছে দুই লাখ ২৮ হাজার। অন্যান্য পশু রয়েছে আরও ৪২ হাজার। সব মিলিয়ে কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে মোট ৩ লাখ ৭০ হাজার। কোরবানি শেষেও উদ্বৃত্ত থাকবে এক লাখ গবাদিপশু। এ পরিস্থিতিতে ভারত থেকে গরু আমদানির প্রয়োজন নেই। তবু বানের পানির সঙ্গে ভেসে আসছে ভারতীয় গরু। এতে হতাশ স্থানীয় খামারিরা। তারা বলছেন, এবার বন্যার কারণে চাষীরা গবাদিপশু কম দামেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। খামারিরা বলছেন, এমনিতেই দেশী পশুর দাম কম। এর উপরে চেপে বসেছে ভারতীয় গরু। বাধ্য হয়ে কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে দেশী গরু। এতে খামারি ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, কিছু ক্যাটল (গরু) করিডোর দিয়ে বৈধভাবে গরু আসছে। অবৈধভাবে গরু আসার একেবারেই সুযোগ নেই। বন্যা পরিস্থিতির কারণে পদ্মার একটি বড় অংশ নজরদারিতে হিমশিম খাচ্ছে বিজিবি। এরই সুযোগ নিতে পারেন চোরাকারবারিরা। তবে অবৈধ গরু চোরাচালান ঠেকাতে গ্রামবাসীদের নিয়ে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে বিজিবি। এদিকে, অন্যান্য বছরের মতো এবার বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনায় আগ্রহী ব্যাপারীদের দেখা নেই। এ ছাড়া ক্রেতার অভাবে হাটে নিয়েও গরু বিক্রি করা যাচ্ছে না। প্রতি বছর কোরবানির হাট শুরুর মাস দেড়েক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার গরুর ব্যাপারীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনা শুরু করেন। জেলার তানোরের খামারি আবদুস সালাম বলেন, অন্য বছর গরুর ব্যাপারীরা এত দিনে ঢাকার কোরবানির হাটকে সামনে রেখে গরু পালনকারীদের কাছ থেকে গরু কেনা শুরু করে দেন। কিন্তু এবার বেশিরভাগ ব্যাপারী ভয়ে গরু কিনছেন না। হাটে নিয়ে গেলেও ক্রেতারা মন মতো দাম বলছেন না। তাই বিক্রি হয়নি। তাই ঠিক করেছেন কোরবানির পরে এগুলো বিক্রি করবেন। পটুয়াখালীতে গরুর হাট জমজমাট স্টাফ রিপোর্টার গলাচিপা থেকে জানান, পটুয়াখালীর দক্ষিণের গলাচিপা, রাঙ্গাবালী ও দশমিনার গরুর হাটগুলো কোরবানি সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে জমজমাট হয়ে উঠেছে। লোকে লোকারণ্য হয়ে পরেছে প্রতিটি গরুর হাট। কোথাও কোথাও সপ্তাহে একদিনের পরিবর্তে দু-থেকে তিনদিনও বসছে গরুর হাট। প্রত্যন্ত পল্লী ছাড়াও দেশের নানা প্রান্ত থেকে বড় বড় খামারিরাও হাটগুলোতে গরু নিয়ে আসছে। কিন্তু এসব হাটের কোথাও মানা হচ্ছে না ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি। বেশির ভাগ ক্রেতাবিক্রেতা মানছে না সামাজিক দূরত্ব। এমনকি হাটগুলোতে অবাধে আসছে শিশু এবং বয়স্করাও। সরেজমিন কয়েকটি হাট ঘুরে এসব দৃশ্য দেখা গেছে। পটুয়াখালীর দক্ষিণের গরুর হাটগুলো প্রধানত সপ্তাহে একদিন বসে এবং তা দুপুরের পরে শুরু হয়ে সন্ধ্যাতেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কোরবানি সামনে রেখে চিরচেনা এ দৃশ্য পাল্টে গেছে। এখন সকাল থেকেই সাপ্তাহিক হাটগুলোতে গরু আসতে শুরু করে। যা গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। নলুয়াবাগী, গলাচিপা, পক্ষিয়া, উলানিয়া, রণগোপালদী, আলীপুরা, দশমিনা সদর, বাহেরচর ও আমতলী উপজেলার গাজীপুর বন্দরের মতো বড় গরুরহাটগুলোর কোন কোনটিতে এখন সপ্তাহে দু’-তিনদিনও বসছে। এসব বড় হাটে যেমন আসছে বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা, তেমনি আসছে বাণিজ্যিকভিত্তিতে লালন পালন করা অসংখ্য গরু। আসছে বিভিন্ন জাতের ছাগল। প্রতিটি হাটে উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। মেহেরপুরের খামারিরা লোকসানের মুখে সংবাদদাতা মেহেরপুর থেকে জানান, কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মেহেরপুরের কয়েক হাজার খামারি গরু মোটাতাজাকরণ করেছে। কিন্তু শেষ সময়ে এখনও ক্রেতা না পাওয়ায় হতাশার মধ্যে দিন পার করছে খামারিরা। এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, জেলার বাইরের গরু ব্যাপারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গরু বিক্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যেন গরু খামারিরা লোকসানের মুখে না পড়ে। মেহেরপুর সদর উপজেলার খোকশা গ্রামের গরু খামারি মোস্তাক মিলন, এক বছর ধরে গরু লালন পালন করে আসছেন তিনি। তার খামারে ২৭টি ছোট বড় গরু রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ মণ ওজনের একটি গরুর নাম রেখেছেন ব্লাক টাইগার। এক মাস আগে এই ব্লাক টাইগারের দাম হাঁকান হয়েছিল ১২ লাখ টাকা কিন্তু খামারে কোন ক্রেতা না আসায় ব্লাক টাইগারের দাম কমিয়ে রাখা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। গরু খামারি মোস্তাক মিলন বলেন, এক বছর ধরে খামারে গরু লালন পালন করা হয় কোরবানির হাট ধরার জন্য, যেন গরুগুলো বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায়, কিন্তু এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে শুধু আমিই না আমার মতো সকল খামারির একই অবস্থা। কোন খামারেই জেলার বাইরে থেকে গরুর ব্যাপারী আসছে না। ঈদের আগে এই গরুগুলো বিক্রি না হলে এই গরু নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হবে। গরু খামারি প্রদীপ খান বলেন, ব্লাক টাইগারকে হাটে তোলার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল, প্রতিদিন নিয়মিত পরিচর্যা করা হতো তাকে। কিন্তু ঈদের আর কিছুদিন বাকি এখনও কোন ক্রেতা খামারে আসেনি, দাম না থাকায় হাটে তোলা সম্ভব হয়নি। এছাড়া খাবারের চড়া দাম হওয়ায় পশু পালনে বেশ খরচ হচ্ছে। অনেকেই ঋণ নিয়ে খামারে গরু লালন পালন করেছে, কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করে আবারও নতুন করে গরু কিনে পালন করবে এমনই স্বপ্ন দেখছে খামারিরা, কিন্তু এ বছর সেই স্বপ্নও ভেঙ্গে গেছে খামারিদের। কলাপাড়ায় ফ্রিস্টাইলে চাঁদাবাজি নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া থেকে জানান, কলাপাড়ায় গবাদিপশুর হাটগুলোতে খাজনা আদায়ের নামে চলছে ফ্রিস্টাইল চাঁদাবাজি। এক লাখ টাকার গরু কিনলে খাজনার নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে দশ হাজার টাকা। প্রশাসনের কোন রকমের নিয়ন্ত্রণ নেই এসব রুখতে। ফলে কোরবানির পশু কিনতে গিয়ে মানুষ প্রচ- ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আর চরমভাবে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে সরকারের। এছাড়া করোনাকালে মানা হচ্ছে না কোন স্বাস্থ্যবিধি। কলাপাড়ায় সরকারী ইজারাপ্রাপ্ত হাট-বাজারের সংখ্যা ১৫টি। এর মধ্যে এ বছর ১৪টির ইজারা হয়েছে। এছাড়া লক্ষ্মীর হাটের সরকারীভাবে খাস কালেকশন করানো হয়। এসব হাটের বৈধ ১০টিতে গবাদিপশু বিক্রি হয়। সপ্তাহের নির্র্দিষ্ট একদিনে গবাদিপশু বিক্রি হয়ে আসছে। এছাড়া অবৈধ হাট রয়েছে দুটি। লালুয়ার মুক্তিযোদ্ধা বাজার এবং পাখিমারা বাজার। অবৈধ হাটগুলোতে গবাদিপশু বিক্রিতে চাঁদাবাজির সবটাই গিলে খায় স্থানীয় একটি চক্র। সরকারী কোষাগারে এক টাকাও আসে না। রবিবার ছিল লতাচাপলীর আলীপুরের হাট। ওই হাটের এক ক্রেতা জানান, তিনি নয় হাজার টাকায় একটি ছাগল কিনেছেন। এ জন্য তাকে ৯০০ টাকার খাজনার রশিদ ধরিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া সরকারী ভ্যাটের কথা বলে ছাগল প্রতি বাড়তি এক শ’ টাকা এবং গরু প্রতি ২০০ টাকা আদায় করা হয়। এ টাকা আদায় করা হয় বিক্রেতার কাছ থেকে। ক্রেতা শাহআলম জানান, দুটি গরু কিনেছেন এক লাখ ৪০ হাজার টাকায়। শতকরা ১০ টাকা হারে খাজনা দিতে হয়েছে। একই অভিযোগ নেছারুদ্দিনের। একই দশা সকল হাটের। রবিবার আলীপুরে কমপক্ষে ২০০ গবাদিপশু বিক্রি হয়েছে। প্রত্যেকটি থেকে ৪০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়েছে। এই একদিনে ইজারাদারের লোকজন চার/পাঁচ লাখ টাকা অতিরিক্ত হাতিয়ে নিয়েছে। সবচাইতে বেহাল নোমরহাটের। সেখানেও ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়।
×