ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর

১৭ কিমি সড়কের ১৫ পয়েন্টে বেহাল

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ২৮ জুলাই ২০২০

১৭ কিমি সড়কের ১৫ পয়েন্টে বেহাল

রাজন ভট্টাচার্য ॥ বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়কের ১৫ পয়েন্টে এখন বেহাল দশা। এর মধ্যে বোর্ড বাজারের পর থেকে ছয়দানা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কে এক লেনে চলছে যানবাহন। ফলে দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েছে অনেক বেশি। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজের কারণেই রাস্তাজুড়ে মহাদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় দুই লেনের সড়কের এক লেন ডুবে গেছে। ড্রেন উপচে পানি উঠেছে সড়কে। ভেঙ্গেচুড়ে খান খান হয়েছে সড়ক। সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় গর্তের। অনেক স্থানে কাঁদা আর পানিতে সয়লাব পুরো সড়ক। অথচ অন্তত ৪০টি রুটের যানবাহন চলে এই সড়ক দিয়ে। ঢাকা থেকে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিআরটি কাজ শুরুর পর থেকে এই সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। অথচ ঈদ আসন্ন হলেও সড়কটি মেরামতের কোন উদ্যোগ নেই। কাজ শেষে সড়ক সংস্কারের কোন রকম উদ্যোগ না নিয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে আছেন প্রকল্পের লোকজন। যদিও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঈদ সামনে রেখে ইতোমধ্যে দেশের সড়ক চলাচলের উপযোগী করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিরূপ আবহাওয়ায় ঈদযাত্রা শুরু হলে এই সড়কে চলাচলে দুর্ভোগ চরমে উঠতে পারে। স্বাভাবিক যাত্রায় বেশি যানবাহনের চাপ বাড়লে দুর্ভোগ অনিবার্য। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কারের তাগিদ সব পক্ষের। গাজীপুর মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সড়কের বর্তমান হালের কথা মাথায় রেখেই ঈদে যানজট রোধে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাফিক, আনসার ও পুলিশ মোতায়েন রাখা হবে। করোনার কারণে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন কম চললেও এই সড়কটির বিভিন্ন স্থানে নানামুখী সমস্যায় যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ হচ্ছে। যানবাহন চালক ও যাত্রীদের ভাষায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়ক এখন মহাদুর্ভোগ আর আতঙ্কের নাম। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১১২ কিলোমিটার। এর মধ্যে মহাখালী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত মাত্র ৩০ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করতে সময় লাগছে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। বিমান বন্দর থেকেই শুরু বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটারের বেশি সড়ক অতিক্রম করতে সময় লাগে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় ঘণ্টা! অথচ রাস্তা ভাল থাকলে মহাখালী থেকে ময়মনসিংহ যেতে সময় লাগে মাত্র দুই ঘণ্টা। গত বছরের মতো এবারের ঈদ-উল-আজহায় এই সড়কে ভোগান্তির নতুন মাত্রা যোগ করেছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প ও বছরের পর বছর সড়কের দু’পাশে ড্রেন সংস্কার কাজ শেষ না হওয়া ও সড়কে বৃষ্টির পানি জমে থাকা। ভাঙ্গাচোরা সড়ক, বাজার, রাস্তার ওপর মাটি রাখা, অবৈধ পার্কিংসহ ইচ্ছেমতো যাত্রী ওঠানামা করানো, অনুমোদনহীন যানবাহন চলাচলের দৌরাত্ম্য সঙ্কট বাড়িয়ে তুলছে। সমস্যার ১৫ পয়েন্ট ॥ স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত বৃহত্তর ময়মনসিংহের সব ধরনের পরিবহন টঙ্গী-জয়দেবপুর হয়ে যাতায়াত করে। এছাড়াও টাঙ্গাইল, উত্তরাঞ্চল, সিলেট অঞ্চলেরও কিছু যানবাহন এই রুটের অংশবিশেষ ব্যবহার করে। সমস্যার শুরু মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকেই। টঙ্গী সেতু পার হওয়ার পর যানজটের মহা ভোগান্তিতে পড়তে হয় পরিবহনগুলোকে। এর আগে বিমানবন্দর সড়ক পার হওয়া মাত্রই রাস্তা ভাঙ্গাচোড়া সড়ক স্বাগত জানায়। আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত অন্তত চারটি স্থানে সড়কের বেহাল দশা চলছে মাসের পর মাস। এরপর টঙ্গী বাজার পার হলেই স্টেশন রোড, চেরাগ আলী মার্কেট, বাটা গেট, কলেজ গেট, গাজীপুরা বাসস্ট্যান্ড, বোর্ড বাজার, ছয়দানা, ভোগড়া বাইপাস, বাসন সড়ক সর্বশেষ জয়দেবপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত দুর্ভোগ যেন প্রতিদিনের সঙ্গী। বলতে গেলে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত সড়কজুড়েই কম বেশী দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এর মধ্যে ১৫টি স্থানে সমস্যা তুলনামূলক বেশি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এসব পয়েন্টে কোথাও কোথাও বৃষ্টির পানি জমে আছে। পানিতে সড়কের এক লেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাত্র এক লেন দিয়ে যানবাহন চলছে। ফলে যানজট বেড়েছে। এছাড়া ড্রেন নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় মাটি তুলে রাখা হচ্ছে রাস্তার ওপর। এ কারণে কোথাও কোথাও এক লেন সড়ক বন্ধ হয়ে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। বিআরটি কাজে ভারি যন্ত্রপাতি ও গাড়ি ব্যবহারে সড়ক ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে। কোথাও জমানো মাটির স্তূপ বৃষ্টির পানিতে গলে পুরো সড়ক কাঁদা আর পানিতে সয়লাব হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্ট গর্তে পানি জমে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বৃষ্টির কারণে সড়কের দু’পাশে পানি জমেছে। যা সামনের দিনগুলোতে দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাছাড়া ঈদের কারণে পশুবাহী ট্রাক আসছে রাতদিন। এতে সড়কের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। বিআরটি প্রকল্পের কারণে সড়কে ডিভাইডার ভেঙ্গে ফেলে বাঁশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু যানবাহনগুলোকে নিয়ম ভেঙ্গে বাঁশ খুলে গাড়ি ইউটার্ন করতে দেখা যায়। এতেও যানজট বাড়ছে। কিন্তু টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি একেবারে নেই বলে অভিযোগ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের। জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে হাইওয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য আমরা পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করব। সড়কের পাশে কোন অবৈধ পার্কিং রাখতে দেব না। যেখানে সেখানে বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করতে দেয়া হবে না। দূরপাল্লার যানবাহন যেন সহজেই চলাচল করতে পারে সেজন্য সড়কের সকল বাধা অবসান করা হবে। আবহাওয়া ভাল থাকে তাহলে এই মহাসড়কে কোন যানজট হবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। জানতে চাইলে এনা পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আতিকুল আলম বলেন, এই সড়কটিতে সমস্যা অনেক পুরনো। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের ওপর নজরদারি একেবারেই কম। তিনি বলেন, ঈদ সামনে রেখে এখনও সেই অর্থে যাত্রী চাপ তৈরি হয়নি। কম যাত্রী নিয়ে প্রতিটি বাস আসা যাওয়া করছে। যাত্রী চাপ বাড়লে যানবাহনও বাড়বে সড়কে। তখন দুর্ভোগ আরও স্পষ্ট হবে। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, টঙ্গী ব্রিজ থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কজুড়ে বছরের পর বছর নানা সঙ্কট চলছে। এসব সঙ্কট মাথায় নিয়েই আমাদের যানবাহন চালিয়ে যেতে হচ্ছে। টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রাস্তা যেমন খারাপ তেমনি আছে অনুমোদনহীন যানবাহন চলাচলের দৌরাত্ম্য। নানা উদ্যোগের পরও এসব যানবাহন কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। দেড় কিলো সড়ক বন্ধ থাকে সারাবছরই ॥ এ যেন মামা বাড়ির আবদার। গাড়ি ব্যক্তি মালিকানা। অথচ পার্কিং করা হচ্ছে না নিরাপদ স্থানে। একটি ব্যস্ততম সড়কের পাশে রাখা হচ্ছে বছরের পর বছর। এতে যানজটে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে লাখো যাত্রীকে। টঙ্গী মিল গেট থেকে চেরাগআলী পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের চিত্র এটি। রাস্তার দু’পাশে হাজারো পণ্যবাহী ট্রাক রাখা হয়। কিন্তু কেউ কিছু বলে না। যেন দেখার নেই কেউ।
×