ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বন্ধ

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২৮ জুলাই ২০২০

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বন্ধ

বিকাশ দত্ত ॥ করেনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর ধাক্কা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও লেগেছে। উচ্চ আদালত ও নি¤œ আদালতে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সীমিত পরিসরে জরুরী মামলার বিচার চললেও (ট্রাইব্যুনালস) আইনে সে সুযোগ নেই। একইসঙ্গে এক সদস্য অসুস্থ থাকার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ট্রাইব্যুনাল বসছে না। আইন অনুযায়ী দু’জনকে দিয়ে কোন মামলার চার্জ গঠন, সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা যাচ্ছে না। ফলে বর্তমানে ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ বন্ধ রয়েছে। এর কারণে মামলায় জট বাড়ছে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, উচ্চ আদালতসহ সারাদেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৩৭ লাখ। অধস্তন আদালতগুলোতে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ৫০ কার্যদিবসে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৯টি জামিন-দরখাস্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। সে হিসেবে গড়ে প্রতিদিন জামিন আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে ২ হাজার ৭২৮টি। একই সঙ্গে ৬৭ হাজার ২২৯ জন অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন মঞ্জুর হয়েছে (শিশু আদালতসহ)। এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ময়মনসিংহের খলিলুর রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলার রায় যে কোন দিন ঘোষণা করা হবে। মামলাটি সিএভি রাখা হয়েছে। অন্যদিকে আপীল বিভাগে ৩০টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। যার মধ্যে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও আলবদর কমান্ডার নেতা এ টিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদ-ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের শুনানি নিয়মিত আদালতে অনুষ্ঠিত হবে। কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- বহালের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির জন্য অপেক্ষায় আসামি পক্ষ। পূর্র্ণাঙ্গ রায় প্রকশিত হলেই আসামি পক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করতে পারবে। পাশাপাশি বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ৩৬ মামলার মধ্যে ২০টিরও বেশি মামলা চার্জ গঠনের পর সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায় রয়েছে। করোনাজনিত পরিস্থিতি ও একজন সদস্যের বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকার কারণে পূর্ণাঙ্গভাবে বিচার কাজ শুরু হচ্ছে না। এমনকি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত কাজও ধীরগতিতে এগুচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার সাঈদ আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেছেন, একেবারে যে কাজ চলছে না, তা নয়। বিচার কাজ সীমিত আকারে চলছে। মামলার ধার্য তারিখ পরিবর্তন করা হচ্ছে। অন্য কোন আবেদন থাকলে সেটিও নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের সদস্য এক বিচারপতি অসুস্থ থাকায় তিনি ভারতে মুম্বাইয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি না আসা পর্যন্ত মামলার শুনানি হচ্ছে না। আশা করছি ঈদের পর এই স্থগিত কাজগুলো দ্রুত এগিয়ে নেয়া হবে। ‘ট্রাইব্যুনাল একটি বিশেষ আইনে চলে। এটি অন্য যে কোন আইন থেকে আলাদা। ট্রাইব্যুনালে মূলত আসামি গ্রেফতার থাকলে তার উপস্থিতিতে বিচার কাজ পরিচালনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখন করোনার এই অবস্থায় আসামি হাজির করা যাচ্ছে না। এই কারণে বিচার কাজ চলছে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্ত জনকণ্ঠকে বলেছেন, গত ১৭ মার্চ আদালত বলেছিল। সেদিন মহেশখালীর মামলাটি ছিল। আমি ট্রাইব্যুনালকে বলেছিলাম করোনা ধেয়ে আসছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বিচার কাজ চালানো ঠিক হবে না। এর পর থেকে মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ চলছে না। কোন রায় দিতে গেলে তিনজন সদস্যের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে বিচার কাজ শুরু করার মতো পরিস্থিতি হয়নি। এছাড়া সরকারের স্বাস্থ্যবিধি প্রত্যাহার না হলে আদালত বসবে বলে মনে হয় না। তিনি আরও বলেন, সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী অসুস্থ, বয়স্করা কর্মস্থলে যাবেন না। আমরা যারা ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমে সরাসরি যুক্ত রয়েছি (বিচারপতি, তদন্ত কর্মকর্তা, প্রসিকিউটর) তাদের প্রায় সবার বয়স ৬০ বছরের ওপরে। এ মুহূর্তে প্রসিকিউটরদের ঝুঁকি নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আসামি হাজির করাও সম্ভব নয়। আমরা প্রসিকিউটররা পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। খলিলুর রহমানসহ ১১ রাজাকারের রায়টি যে কোন দিন ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের খলিলুর রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলার রায় যে কোন দিন ঘোষণা করা হবে। আসামি ও প্রসিকিউশন পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ২৬ জানুয়ারি রায় ঘোষণার জন্য সিএভি (যে কোন দিন) ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের চারটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেনÑ আবুল কালাম ওরফে মোঃ সামসুজ্জামসান কামাল, মোঃ আব্দুল্লাহ, আকিল আলী ওরফে মোঃ রিয়াজ উদ্দন আজাদী, মোঃ আব্দুল লতিফ, মোঃ আব্দুর রাজ্জাক ম-ল, সিরাজুল ইসলাম। পলাতক রয়েছেন এ এফ এম ফয়জুল্লাহ, মোঃ আমিন উদ্দিন খান। মৃত্যুবরণ করেছেন নুরুল আমিন সাজাহান, মোঃ আব্দুল মালেক আকন্দী। সর্বশেষে রায় আসে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ॥ উল্লেখ্য, গত বছর ১১ ডিসেম্বর রাজশাহীর টিপু সুলতান (ওরফে টিপু রাজাকার) মামলার রায় ঘোষণার পর আর কোন রায় আসেনি ট্রাইব্যুনাল থেকে। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত দশ বছরে ৪১ মামলায় মোট ১০৫ আসামির মধ্যে ৯৫ রাজাকারকে বিভিন্ন মেয়াদে দ- প্রদান করা হয়েছে। এটিএম আজাহারুল ইসলামের রিভিউ শুনানি নিয়মিত আদালতে ॥ এদিকে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও আলবদর কমান্ডার নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদ-ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের শুনানি নিয়মিত আদালতে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ভার্চুয়াল আপীল বিভাগ ২০ জুলাই এ আদেশ প্রদান করেন। আদালত সমূহে পাহাড়সম মামলা ॥ সুপ্রীমকোর্টের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, বর্তমান দেশে মামলার সংখ্যা ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭২৮। এর আগে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ৩৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। যার সংখ্যা ছিল ৩৫ লাখ ৭ হাজার ৮৯৮। বর্তমানে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৭ লাখ। ভার্চুয়াল আদালতে জামিন নিষ্পত্তি ॥ উচ্চ আদালতসহ সারাদেশের অধস্তন আদালতে মামলার পাহাড় থাকলেও ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে জামিন আবেদনের নিষ্পত্তি সন্তোষজনক বলে জানা গেছে।
×