ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পবিত্র হজের আর ১ দিন বাকি

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২৮ জুলাই ২০২০

পবিত্র হজের আর ১ দিন বাকি

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র জিলহজ মাসের ষষ্ঠতম দিবস আজ। বৈশি^ক মহামারীকালীন নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও মুমিনদের একটি দল পশু কোরবানির মাধ্যমে প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে আগুয়ান। কোরবানি শব্দটির সরল অর্থ হলো ত্যাগ, উৎসর্গ, নৈকট্য ইত্যাদি। শব্দটি ইসলামী পরিভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আল্লাহর আনুগত্যের নিদর্শন স্বরূপ নির্ধারিত সময়ে বিশেষ জাতের পশু উৎসর্গ করাকে ইসলাম ধর্মে কোরবানি বলা হয়। হাদিসের বর্ণনা মতে, চন্দ্র বছরের দ্বাদশ মাস জিলহজের দশম তারিখে কোরবানি করা উত্তম। তবে রাতের বেলা জবেহ করা মাকরূহ। একইভাবে ঈদের নামাজের পূর্বে কোরবানির পশু জবেহ করা আইনসিদ্ধ নয়। - (আলমগীরী)। কোরবানি দানের বাধ্যবাধকতা: জিলহজ মাসের ১০, ১১ এবং ১২ তারিখে কোন ব্যক্তি যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ব্যতীত সাড়ে সাত ভরি পরিমাণ স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা তৎসম মূল্যের অন্যান্য দ্রব্যাদির মালিক হয় তার ওপর কোরবানি দেয়া ওয়াজিব। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, কোরবানির সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদের ময়দানের ধারে কাছেও না আসে। ’ এখন চূড়ান্তভাবে পশু ক্রয়ের সময়। তাই কোরবানি পশুর আকৃতিসমূহ আমাদের জেনে রাখা ভাল । গরু, মহিষ, উট, ভেড়া, ছাগল ও দুম্বাÑ এসব জন্তু দ্বারা কোরবানি করা যায়। অন্য কোন পশু অনুমোদিত নয়। একটি ভেড়া, ছাগল ও দুম্বা দ্বারা কেবল একজনের কোরবানি চলে। গরু, মহিষ ও উট দ্বারা সাতজনের শরিক কোরবানি আইনসিদ্ধ। -(আলমগীরী)। কোরবানির জন্য গরু, মহিষ দুবছরের, উট পাঁচ বছরের এবং ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা এক বছর বয়সী হতে হবে। অবশ্য খুবই মোটা তাজা হলে এক বছরের কম বয়সী ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারাও কোরবানি দেয়া যায়। - (দুররে মানসুর)। পশুর অযোগ্যতা : ১. অন্ধত্ব, একচোখা, একÑতৃতীয়াংশ দৃষ্টিহীনতা। ২. কান কিংবা লেজ একÑতৃতীয়াংশ কাটা। ৩. কোন একটি পা অচল। ৪. গোড়া দিয়ে শিং ভেঙ্গে যাওয়া। ৫. ক্ষীণকায় এবং হাড়মজ্জাহীন হওয়া। এসব কারণে যে কোন পশু কোরবানির জন্য অযোগ্য হয়ে যায়। (শামী, আলমগীরী)। হাদিসে এসেছে তোমরা কোরবানিতে মোটা তাজা দৃষ্টিনন্দন পশু নির্বাচন কর। কেননা তা হুবহু সুন্দর অবয়বে তোমাদের পুলসিরাতের বাহন হবে।’ কোরবানির মাংস : তিনভাগ করে একভাগ নিজেদের জন্য রাখা, একভাগ দরিদ্র ও নিঃস্বদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া আর একভাগ আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বণ্টন করা উত্তম। - (ফতোওয়া শামী)। এখন কিন্তু আমরা তা করি না। আমরা ভাল ভাল গোশতগুলো প্রথমেই উঠোন থেকে ঘরে তুলে ফেলি। তারপরে ফ্রিজে রেখে দেই। আগামী ছয় মাস গোশ্ত না কেনার জন্য। টিক্কা কিংবা কাবাব বানিয়ে খাওয়ার জন্য। আর যেসব গোশ্ত হাড্ডি সংরক্ষণ অযোগ্য সেগুলোকে দরজায় কোন ভিক্ষুক আসলে তাদেরকে কিছু কিছু দিয়ে বিদায় করি। অথচ ঈদ-উল-আজহার মূল কথা ছিল প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করা এবং এ শিক্ষা ধারণ করার প্রয়োজন ছিল জীবনের সবসময়। অন্তত আগামী বছরের ঈদ-উল-আজহা পর্যন্ত। কিন্তু আমরা ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই ঈদের কয়েক ঘণ্টাও ত্যাগের দৃষ্টান্ত রাখতে পারি না, লিপ্সা আর লোক দেখানোর মানসিকতা আমাদের ঈদের মাহাত্ম্যটুকুন ধ্বংসের মাঝে নিপতিত করে। প্রতিবেশী যেসব গরিব বা কোরবানি দেননি এমন লোকজনÑ যারা লজ্জায় কারও ঘরের দরজায় যায় না, তাদের খোজ করে লিস্ট করে কোরবানির গোশ্ত পৌঁছে দেয়ার জরুরত মনে করি না। এখানেই তফাত সে যুগের ত্যাগী, আল্লাহ ও রাসূল প্রেমিক মুসলমানদের আর আজকের ভোগবাদী মুসলমানের।
×