ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্য বসতে-

প্রকাশিত: ২১:০৫, ২৮ জুলাই ২০২০

বাণিজ্য বসতে-

করোনা মহামারীর কারণে নিরাপদ সুরক্ষা হিসেবে দেশ একটানা ৬৬ দিন লকডাউনে থাকায় সর্বাধিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে রফতানি খাত। প্রধান রফতানি পণ্য পোশাক শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ার দশা হয় পোশাক শিল্পের। তবে সরকারের বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজসহ স্বল্পসুদে ঋণ সহায়তায় শীঘ্রই ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে পোশাক শিল্প। ইতোমধ্যে অন্তত আশি শতাংশ ক্রয়াদেশ ফিরে এসেছে দেশে। তুরস্ক, রাশিয়াসহ নতুন কয়েকটি দেশ থেকেও নতুন কার্যাদেশ আসছে। তবু বাস্তবতা এই যে, পোশাক রফতানি আর আগের অবস্থায় যেতে সময় লাগবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক আইএসএ সনদ না থাকায় দেশের দ্বিতীয় রফতানি পণ্য চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিও সমূহ হুমকির সম্মুখীন। এর জন্য অবশ্য চামড়া ব্যবসায়ী এবং পাদুকা শিল্প রফতানিকারকরাও কম দায়ী নয় কোন অংশে। সরকারের দীর্ঘদিনের উদ্যোগ ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায় চামড়া শিল্পনগরী ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তরিত হলেও ইটিপি তথা বর্জ্য দূষণমুক্তকরণ ব্যবস্থা শতভাগ ব্যবহার উপযোগী না হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে চামড়া শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়ন। যে কারণে এবার সরকারকে কোরবানির আগে কাঁচা চামড়া রফতানির কথা ভাবতে হচ্ছে। সহজ শর্তে স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণ দেয়া সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না চামড়া ও চামরাজাত পণ্যের রফতানি খাত। অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিও রীতিমতো হুমকির মুখে অথবা প্রায় বন্ধের পথে। সরকারের সর্বাত্মক সহায়তা সত্ত্বেও বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগত লোকসান গুনতে থাকায় শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ২২টি পাটকল। আগামীতে আধুনিকায়ন করে এগুলো চালুর কথা ভাবা হচ্ছে সরকারী-বেসরকারী যৌথ ব্যবস্থাপনায়। ভাইরাসজনিত সমস্যায় মান বজায় রাখতে না পারায় চিংড়ি রফতানিও সঙ্কটে নিপতিত। সে অবস্থায় অপ্রচলিত পণ্য চিহ্নিতকরণসহ এর উৎপাদন এবং রফতানি বাড়াতে না পারলে আগামীতে রফতানি আয় আরও কমে আসবে সুনিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে অপ্রচলিত অন্তত ৩৭টি পণ্যকে চিহ্নিত করে অগ্রসর হতে চায় সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। উদাহরণত বলা যায় ওষুধের কথা। দেশ ওষুধ উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। মানও ভাল। রফতানিও হচ্ছে কয়েকটি দেশে, যা আরও বাড়ানো যায়। অনুরূপ হতে পারে করোনা সুরক্ষা সামগ্রী পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস, স্যানিটাইজার, সামদ্রিক মাছ, শৈবাল, শুঁটকি ইত্যাদি। ইতোমধ্যে ভারতে বাংলাদেশের বাণিজ্য তথা রফতানি আয় বেড়েছে। ভারতের পাশাপাশি চীনের সঙ্গেও বেড়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য। ইইউ, যুক্তরাজ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির খবর তো আছেই। এমনকি জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করা না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও বাংলাদেশের বাণিজ্য বেড়েই চলেছে। তবে মোট রফতানির ৪০ শতাংশই তৈরি পোশাক। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশকে অস্ত্র ও মাদক বাদে প্রায় সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। চীনও দিয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে অপ্রচলিত পণ্যের রফতানি বাড়ানোর বিকল্প নেই। নেপাল ও ভুটানও এ ক্ষেত্রে হতে পারে বড় বাজার। পারস্পরিক প্রতিবেশী দেশগুলোর বাণিজ্য আরও সহজীকরণে স্থলবন্দর, রেলপথ, সড়কপথসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। বাণিজ্য কার্যক্রমের জন্য এক স্থানে সব সুবিধা (সিঙ্গেল উইনডো ফ্যাসিলিটিজ) দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উন্নয়নের স্বার্থে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করা একান্ত দরকার। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে বিনিয়োগ ও রফতানি বৃদ্ধির এখনই সময়।
×