ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চার বছরে শত কোটি টাকার মালিক আবছার মেম্বার

প্রকাশিত: ১২:২১, ২৭ জুলাই ২০২০

চার বছরে শত কোটি টাকার মালিক আবছার মেম্বার

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক ইয়াবা পাচার চক্রে জড়িত উখিয়ার এক ডজন প্রভাবশালিকে নজরদারি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নজরদারির মধ্যে উখিয়ার জনপ্রতিনিধি ছাড়া সরকার দলীয় কিছু প্রভাবশালী নেতাও রয়েছেন। ইতোমধ্যে নজরদারির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সম্পদের তথ্যও সংগ্রহ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দেশে ইয়াবা কারবারে সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে পড়েছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। দিন দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক ইয়াবা ব্যবসা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য মতে, উখিয়া বিভিন্ন ক্যাম্পে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের ইয়াবা ব্যবসায় অর্থায়নসহ পৃষ্টপোষকতা করছে উখিয়ার ডজন খানেক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তি। সম্প্রতি বন্দুকযুদ্ধে নিহত ইউপি সদস্য বখতিয়ার নিহত হওয়ার আগে পুলিশের কাছে ওই প্রভাবশালীদের তথ্য দিয়ে গেছে। এছাড়া র‌্যাব সদস্যরাও উখিয়ার বালুখালীর আবছার মেম্বারকে ইয়াবা সহ আটকের পর একই তথ্য পেয়েছে। ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত ওই দুই মেম্বার সাবেক বিতর্কিত এক এমপির আস্থাভাজন ছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বখতিয়ার মেম্বার দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের মাদক ব্যবসায় অর্থের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছিল। রোহিঙ্গা আবু তাহেরের ইয়াবা ব্যাবসায় বখতিয়ার ও আবছার মেম্বার কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। কুতুপালং বালুখালী ক্যাম্প কেন্দ্রিক রোহিঙ্গাদের সকল বড় বড় মাদক চালানের সঙ্গে জড়িত ছিল তারা। ইউপি সদস্য নুরুল আবছার চৌধুরী ইয়াবা কারবারে অর্থের যোগান দিত বলে জানিয়েছে র‌্যাব। তিনি বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইয়াবা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করত। এছাড়াও ইয়াবা ব্যাবসায় উখিয়ার আরও দুই ইউপি সদস্যের ইয়াবা ব্যবসায় অর্থায়নের তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হলদিয়াপালং এর মরিচ্যা এলাকার এক সাবেক চেয়ারম্যান গত দুই বছরে বিপুল অর্থ সম্পদ অর্জনের তথ্যও সংগ্রহ করছে প্রশাসন। সূত্র মতে, উখিয়ার রাজাপালংয়ের এক প্রভাবশালী নেতা ও ইউপি সদস্য কঠোর নজরদারিতে আছে। জেলা পুশিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, বখতিয়ার মেম্বারের কাছে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি অনেক নতুন নতুন ইয়াবার পৃষ্টপোষকের তথ্য দিয়েছে। তাদের সকলকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কক্সবাজার র‌্যাব ১৫ অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম উদ্দিন জানিয়েছেন, উখিয়ার অনেক প্রভাবশালীকে নজরদারি করা হচ্ছে। তারা সাম্প্রতিক সময়ে বিপুল পরিমান টাকার মালিক হয়েছেন। তারা মূলত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক ইয়াবার মূল পৃষ্টপোষক। বাংলাদেশ থেকে ইয়াবাকে পুরোপুরি দমনে এসব প্রভাবশালির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, নিহত বখতিয়ার মেম্বারের সহযোগি ইয়াবা ডন আবছার মেম্বার ইয়াবা বাণিজ্য ছাড়াও রোহিঙ্গা কিলারদের সঙ্গে সখ্য রেখে বালুখালী ক্যাম্প অভ্যন্তরে বহু অপকর্ম করেছেন। দীর্ঘদিন বেপরোয়াভাবে ইয়াবা কারবার চালিয়ে আসলেও শেষ পর্যস্ত দশহাজার পিস ইয়াবা নিয়ে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে জেলে গেছে উখিয়ার বালুখালীর নুরুল আবছার মেম্বার। সম্প্রতি নিজ বাড়ির সামনে ইয়াবা লেনদেনের সময় ১০ হাজার পিস ইয়াবার চালানসহ আবছার মেম্বার ও তার পার্টনার নুরুল আলম চৌধুরীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব সদস্যরা। নুরুল আবছার চৌধুরীর স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে র‌্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মাদকদ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেট টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সংগ্রহ করে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে আসছে তারা। তাদের একটি বিশাল সিন্ডিকেটও রয়েছে। ২০১৬ সালের ১৮ জুন পালংখালী ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করার জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেয়া হলফনামায় নুরুল আবছার উল্লেখ করেন, নগদ টাকা হিসেবে তার রয়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকা। আর ব্যাংকে জমা রয়েছে ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। হলফনামায় যে অর্থ উল্লেখ করেছিলেন সেটি মাত্র চার বছরে বহুগুণ ছাড়িয়ে গেছে। অথচ দৃশ্যমান কোন ব্যবসা উল্লেখ ছিল না হলফনামায়। ইয়াবা কারবারে বনে গেছেন শত কোটি টাকা ও সম্পদের মালিক। আয়ের খাত হিসেবে ২ কানি কৃষি জমি ও কৃষি খাত থেকে তার আয় মাত্র ৩০ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে তার আয় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দেখানো হলেও কিন্তু সেটি কি ব্যবসা উল্লেখ করা হয়নি। বাড়ি, গাড়ি সহ অন্য কোন কিছুই উল্লেখ করা হয়নি হলফনামায়। ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মাত্র ৪ বছরে অনেকবেশি পরিবর্তন এসেছে আবছারের অর্থ-সম্পদে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে ইয়াবার বদৌলতে অর্থ-সম্পদের জোয়ার শুরু হয় তার। হলফনামায় বাড়ি উল্লেখ না থাকলেও বর্তমানে দুটি তিন তলা বিশিষ্ট ভবন, ১টি টিনশেডের বিশাল কলোনী, বালুখালী পানবাজারে বিশাল মুদির দোকান ছাড়াও ১টি নোয়া (নোহা), ১টি ডাম্পার ও ১টি ট্রাকসহ বেশকিছু গাড়ির মালিক তিনি। ইয়াবা বহনের অন্যতম বাহন হিসেবে তার বড় ট্রাকটি চলাচল করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে। তার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া নুরুল আলম চৌধুরীর সহোদর নুরুল আমিনও এর আগে ইয়াবার চালানসহ ধরা পড়ে কক্সবাজার জেলে আছে।
×