ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রেফতার আসামিদের স্বীকারোক্তি

চালকদের গাফিলতির জন্যই বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ২৭ জুলাই ২০২০

চালকদের গাফিলতির জন্যই বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ চালকদের গাফিলতি আর অদক্ষতার কারণে বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ ডুবে ৩৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। শুধু চালক নয়, দুর্ঘটনার জন্য দুই লঞ্চের সারেংসহ সংশ্লিষ্ট সবারই খামখেয়ালিপনাও দায়ী। দুই লঞ্চের ইঞ্জিন পুরোপুরি সচল ছিল। ইঞ্জিনে কোন প্রকার ত্রুটি ছিল না। ইতোমধ্যেই লঞ্চডুবির ঘটনায় আরও দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে এজাহারনামীয় সাত আসামির মধ্যে ছয়জনই গ্রেফতার হলো। গ্রেফতারকৃতদের পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে মিলেছে এমন তথ্য। এজাহারনামীয় একমাত্র আসামি সুকানি হৃদয় পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গত ২৯ জুন সকাল দশটার দিকে মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ড নামের একটি ছোট দু’তলা লঞ্চকে ঢাকার শ্যামপুরের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা দেয় চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা ময়ূর-২ নামের একটি বিশালাকারের তিনতলা লঞ্চ। এতে মর্নিং বার্ড লঞ্চটি তৎক্ষণাৎ ডুবে যায়। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, র্যা ব, নৌপুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ উদ্ধার অভিযানে নামে। ঘটনাস্থল থেকে ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় নৌপুলিশের তরফ থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক সোয়াদ, লঞ্চটির মাস্টার আবুল বাশার মোল্যা ও জাকির হোসেন, চালক শিপন হাওলাদার ও শাকিল হোসেন এবং সুকানি নাসির মৃধা ও মোঃ হৃদয়কে আসামি করা হয়। গত ৮ জুলাই রাতে রাজধানীর কলাবাগানের সোবহানবাগ এলাকার একটি এ্যাপার্টমেন্ট থেকে ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক সোয়াদ, ১২ জুলাই রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে ময়ূর-২ লঞ্চের মাস্টার আবুল বাশার মোল্যা, ১৫ জুলাই ঢাকার সূত্রাপুর থেকে ময়ূর-২ লঞ্চের দুই ইঞ্জিন চালক শিপন হাওলাদার ও শাকিলকে গ্রেফতার করা হয়। নৌপুলিশের সদরঘাট থানার ওসি রেজাউর করিম ভুঁইয়া জনকণ্ঠকে জানান, আগে গ্রেফতারকৃত চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য মোতাবেক সর্বশেষ ময়ূর-২ লঞ্চের আরেক মাস্টার জাকির হোসেন ও সুকানি নাসির মৃধাকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে মামলার এজাহারনামীয় একমাত্র আসামি সুকানি হৃদয় পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারকৃত ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ওসি আরও জানান, আসামিদের ভাষ্য মোতাবেক ঘটনার সময় দুই লঞ্চের সারেং, মাস্টারসহ সংশ্লিষ্টরা বেখেয়ালি ছিলেন। এছাড়া সারেং ও মাস্টারদের ভুলে এবং অদক্ষতার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে। কারণ ঘটনার সময় কোন লঞ্চের সারেংই সাইরেন বাজায়নি। দুর্ঘটনার জন্য দুই লঞ্চের সারেং, মাস্টারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই দায়ী। আর মর্নিং বার্ড ও ময়ূর দুই লঞ্চের ইঞ্জিনে ত্রুটির কথার যে প্রসঙ্গ উঠেছে তা সঠিক নয়। দুই লঞ্চের ইঞ্জিনে কোন ত্রুটি ছিল না। দুই লঞ্চের সারেং, মাস্টার ও তাদের সহযোগীদের অদক্ষতার কারণে দূর্ঘটনাটি ঘটে। সারেংরা দক্ষতার পরিচয় দিলে দূর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব ছিল। সারেংরা যদি লঞ্চের ইঞ্জিনের গতি কমিয়ে বা বন্ধ করে দিয়ে নৌযান ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতেন, তাহলেই দূর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব ছিল। কিন্তু তারা সে কাজটি করেননি। ফলে সরাসরি ময়ূর-২ লঞ্চটি মর্নিং বার্ড লঞ্চটিকে সরাসরি ধাক্কা দেয়। এতে ছোট লঞ্চটি ডুবে হতাহতের ঘটনাটি ঘটে।
×