ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাদারীপুরে মাদ্রাসা শিক্ষক পরিচয়ে প্রতারণা

প্রকাশিত: ২১:১৭, ২৬ জুলাই ২০২০

মাদারীপুরে মাদ্রাসা শিক্ষক পরিচয়ে প্রতারণা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ দানশীল এবং পরোপকারী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিল মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের বাসাবড়ি মোহাম্মদীয়া ইসলামী মাদ্রাসা ও এতিম খানার শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম মোঃ আবু সাঈদ ভুইয়া (৪৫) । গরু- ছাগল,ঘর-বাড়ি,মসজিদ ও সরকারী চাকরী এছাড়াও ব্যবসার পাটনারের কথা বলে এলাকাবাসীর সাথে নতুন কৌশল অবলম্বন করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে সে। আবু সাঈদ পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার খালেক ভুইয়ার ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৬ জুলাই বৃহস্পতিবার । এ ভুয়া শিক্ষক ১১ মাস আগে আব্দুল ওহাব আলী শেখের বাড়িতে তার স্ত্রী ও ৩ সন্তান নিয়ে থাকতেন বলে জানায় ভুক্তভোগীরা । প্রতারনার অভিযোগে রাজৈর থানায় মামলা দায়ের করেছে সাবরিনা মাহমুদ নামে ভুক্তভোগী এক নারী। ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা জানান, আবু সাঈদ উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের বাসাবড়ি মোহাম্মদীয়া ইসলামী মাদ্রাসা ও এতিম খানায় শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম পরিচয়ে আমাদের এলাকার মানুষের চোখে ধুলা দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে । তিনি আমাদের এখানে এসে মসজিদের ইমামতি করতেন এবং বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসার শিক্ষক পরিচয় দিয়ে চলতেন। কথনও কখনও রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করতেন। গত সোমবার তার থাকার ঘরে তালাবদ্ধ করে স্ত্রী ও ছেলেকে ডাক্তার দেখানের কথা বলে পালিয়ে যায় । আবু সাইদ ভুইয়া প্রথমে কৌশলে পালিয়ে যায়। এখানে থেকে তিনি অন্যের ফসলি জমি চাষ করতেন এবং মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য করোনা মহামারিতে দরিদ্রদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতেন । এটা ছিলো তার প্রতারণার একটা কৌশল । ঘর দিবেন ,মসজিদ উঠিয়ে দিবেন, জমি ও ব্যবসা করতে টাকা দেওয়ার কথা বলে তিনি গ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন। তার প্রতারণার হাত থেকে বাদ যায়নি বৃদ্ধ আজিরনও। আজিরন বেগম বলেন, আমার একটা ভাঙ্গা ঘর আছে। তা দেখে হুজুর আমাকে বলেন আনে ভাঙ্গা ঘরে থাকেন কেনো ? আমি আপনাকে একটা নতুন ঘর তৈরী করে দিব । সেই ঘরের দাম ৪ লক্ষ টাকা । কিন্তু তা আনতে খরচ হবে কাউকে বলবেন না। আমাকে ৬০ হাজার টাকা দেন। এ বলে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। ভুক্তভোগী আব্দুল ওহাব আলী শেখ বলেন, আমার দুটি ঘর ছিলো। একটি ঘর হুজুরকে থাকতে দিয়েছি । আমি ঢাকা থাকি। আমাকে ব্যবসায় প্রচুর টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ছেলে, স্ত্রীর ও আমার কাছ থেকে অগ্রিম ৩ লক্ষ টাকা নিয়েছে । মতিয়ার চোকদার বলেন, ইসলামি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মসজিদ করে দিবে বলে আমাদের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা নিয়েছে। মসজিদ নির্মাণের কাজও শুরু করেছিল। এটা ছিল তার লোক দেখানো কৌশল। তিনি আমাদের জানান, আরো ৩টি মসজিদ করে দিয়েছি । মহিষমারী গ্রামে আমার তৈরী করা একটা মসজিদের উদ্ধোধন হবে। এখন লেকের কাছে শুনি সে পালিয়েছে । তাকে ফোন দিলে সে বলে আমি ফরিদপুর আছি । তার পর থেকে ফোন বন্ধ। সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে নরারকান্দী গ্রামের এক পশু ডাক্তারের ছেলেকে চাকরির কথা বলে ৩ লক্ষ টাকা নিয়েছে। মেসার্স চৌধুরী রাইচ মিলের মালিক ও রাজৈর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রষুন চৌধরী জানায়, প্রথমে আমাদের কাছ থেকে দুই লক্ষ ১৫ হাজার টাকার চাল নেয়। পরে সে আমাকে দুইলক্ষ ২০ হাজার টাকা দেয়। সর্বশেষ দুই লক্ষ ১০ হাজার ৪০০ টাকার চাল নিয়ে সে পালিয়ে যায়। বাসাবাড়ী মোহাম্মদীয়া ইসলামী মাদ্রাসার সুপার হাফেজ আবু হালিম জানান, আবু সাঈদ আমাদের মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত কোন শিক্ষক না। আমাদের এখানে সকালে বিকালে এসে বসত এবং কিছু ছাত্র পড়াত। প্রতারনার বিষয়ে তিনি জানান, আমাকে স্বাক্ষী রেখে কেউ কোন টাকা পয়সা দেয়নি। ফলে বিষয়টি আমার জানা নেই। আমিও শুনেছি। রাজৈর থানার ওসি শেখ সাদী জানান , এ ব্যাপারে সাবরিনা মাহমুদ নামে একজন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে । রাজৈর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহানা নাসরিন জানান , বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
×