ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় হাজার গাছ কেটে ঠিকাদারি কাজে ব্যবহার

কক্সবাজারে ঝাউবাগান সাবাড়

প্রকাশিত: ১৯:৫৫, ২৭ জুলাই ২০২০

কক্সবাজারে ঝাউবাগান সাবাড়

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত লাভের জন্য ঝাউবীথি কেটে ধ্বংস করে স্থানীয় হাজারো জনতার ক্ষতি করা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মহেশখালীতে অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের জন্য ইতিপূর্বে সরকার উচিত মূল্য দিয়ে ঝাউগাছ কিনে নিয়েছে স্থানীয়দের কাছ থেকে। অধিগ্রহণকৃত জমিতে থাকা ঝাউগাছগুলো উপকারভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিয়েই কর্তন করা হয়েছে। তবে বর্তমানে অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের চলমান কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপ মাটি ভরাটের কাজের সুবিধার্থে ঝাউবাগান থেকে গাছ কাটতে স্থানীয়দের ইন্ধন দিচ্ছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, রাজনৈতিক কিছু পাতি নেতার পরামর্শে অশিক্ষিত কিছু শ্রমিক টাকার লোভে পড়ে প্রতি রাতেই মাতারবাড়ি ধলঘাটার সৃজিত ঝাউবাগান কেটে সাফ করে দিচ্ছে। এতে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক সৃজিত ঝাউবাগানটি অচিরেই হারিয়ে যাবে। ঝাউবাগান সৃজনের আগে জোয়ারের স্রোতে গ্রামে বহু লোকের ঘরবাড়ি, জমিজমা ও খেত-খামারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রতিবছর। তবে বিশ্বব্যাংক ও সরকার প্যারাবনে ঝাউবাগান সৃজন করায় লোনা জলের ক্ষতিসাধন থেকে রক্ষা পান স্থানীয়রা। ২০১৫ সাল থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে স্থানীয়দের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে ঝাউবাগানটি রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে। বর্তমানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চলচাতুরির কারণে স্থানীয়দের বিস্তর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, মহেশখালীসহ জেলার উপকূলীয় অঞ্চলগুলোকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় প্যারাবনের সৃজিত ঝাউবাগান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বেড়িবাঁধকেও ভাঙ্গনের আশঙ্কা থেকে রক্ষাকবচ হিসেবে বিরাট ভূমিকা রাখে সৃজিত এই ঝাউবাগান। বেড়িবাঁধের পাশাপাশি প্যারাবন তথা ঝাউবাগানের কারণে দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দারা ইতিপূর্বে বয়ে যাওয়া একাধিক ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে রক্ষা পেয়েছে। প্যারাবন ও ঝাউবীথি সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান থাকার কারণে মোটামুটি সাগরের সঙ্গে যুদ্ধ করেই কাটছে এখানকার মানুষের জীবন। সেই প্রাকৃতিক সম্পদ ঝাউবাগান ঠিকাদারের টাকার লোভে পড়ে কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। এতে সাগরের পূর্ণিমা অমবস্যার জোয়ারে বেশির ভাগ গ্রাম অথৈ পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করেছেন স্থানীয় মুরুব্বিরা। জানা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় ধলঘাটার পশ্চিমে হাসের চর স্থানে গত ২০১৪-১৫ সালে ঝাউবাগান সৃজন করে বিশ্বব্যাংক। স্থানীয়দের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণার্থে বন বিভাগের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সৃজিত ঝাউবাগান দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয় স্থানীয়দের। ওই ঝাউবাগানের কিছু অংশ সরকারীভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণকৃত জমিতে থাকা ঝাউগাছগুলো উপকারভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিয়েই কর্তন করা হয়েছে ইতিপূর্বে। অধিগ্রহণের বাইরে জমিতে (প্যারাবন) থাকা ঝাউবাগানের গাছগুলো ঠিকাদারের ইন্ধন ও টাকার লোভে কেটে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় কয়েক উপকারভোগী জানান, হাসের চরে সব মিলিয়ে ৫/৬ হাজারটি ঝাউগাছ কেটে ঠিকাদারের কাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন ওই হাঁসের চরটি মরুভূমির ন্যায় পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। চারদিকে কর্তনকৃত ঝাউবাগানের গোড়া দেখা যায়। প্রতিবেশী কয়েক মুরব্বি চোখের জ্বল ফেলে বলেন, বেশি টাকাওয়ালা মানুষের (ঠিকাদার) বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস আমাদের নেই। সেখানে সরকার দলীয় নেতাকর্মীও জড়িত আছে। প্রতিবাদ করলে বিপদ ঘটতে পারে। শুধু আফসোস করা ছাড়া কিছুই নেই। মূলত প্রভাবশালী একাধিক রাজনৈতিক পাতি নেতা (দালাল) ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে নগদ টাকার বিনিময়ে শ্রমিক লাগিয়ে এই গাছ কর্তন করে নিচ্ছে। ধলঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান, করোনাকালীন অফিসিয়াল ও ব্যক্তিগত কাজে এলাকায় না থাকার সময়ই হাঁসের চর থেকে ঝাউগাছগুলো কর্তন করা হয়েছে। বিষয়টি জানার পর ঝাউবাগান পাহারায় তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন। বর্তমানে গাছ কাটা রোধ করা হয়েছে। মূলত স্থানীয়রা কারা গাছ কর্তন করেছে, সেই বিষয়ে তথ্য না দেয়া এবং বন বিভাগ থেকে বাগান পাহারায় কোনলোক নিয়োজিত না থাকায় ঝাউবাগানটি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
×