ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জামালপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

প্রকাশিত: ১৬:৩৭, ২৬ জুলাই ২০২০

জামালপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ জামালপুরে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রসহ জেলার সকল নদী-নদীর পানি ফের বাড়ছে। যমুনা নদীর পানি রবিবার দুপুরে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপরদিকে বহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার এক সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে টানা বন্যায় জেলার সাত উপজেলার ৬৭৭টি গ্রামের প্রায় দশ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। জানা গেছে, জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ায় টানা তিন সপ্তাহের বন্যায় যমুনা তীরবর্তী দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী এই চারটি উপজেলাসহ জেলার সাত উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির ফের অবনতি হতে শুরু করেছে। এছাড়াও জেলার ব্রহ্মপুত্র ও অন্যান্য নদনদীর পানিও ফের বাড়ছে। ফলে জেলার মেলান্দহ, বকশীগঞ্জ ও জামালপুর সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। টানা তিন সপ্তাহেরও অধিক স্থায়ী এবারের বন্যায় পানিবন্দি পরিবারগুলো খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সঙ্কট। বন্যাদুর্গত এলাকায় গোখাদ্যেরও সঙ্কট দেখা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্যার্ত কৃষিজীবী পরিবারগুলো। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে আসলেও অনেকেই ত্রাণসামগ্রী না পাওয়া অভিযোগ করেছেন। যমুনানদীর দুর্গম চর এলাকাগুলোতে বন্যার পানিতে আটকা পড়া হাজার হাজার বন্যার্ত পরিবারগুলো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেঁচে আছে। যেসব এলাকায় নৌকায় সহজেই যাওয়া যায়, সেসব এলাকাতেই সরকারী-বেসরকারী ত্রাণ যাচ্ছে প্রতিদিন। ফলে বিপুল সংখ্যক বন্যার্ত মানুষ ত্রাণের আওতার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিরতরণকৃত ত্রাণের চাল কেউ কেউ একাধিকবার পাচ্ছেন, আবার অনেকেই মাত্র একবার পেয়েছেন। কিন্তু টানা তিন সপ্তাহের বন্যায় বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র, উঁচু রাস্তা ও সেতুতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোতে সবচে বেশি খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে রান্না করা সবজি খিচুরি ও রুটি বিতরণ শুরু করা হলেও কোথাও কোথাও দুয়েকদিন বিতরণ করার পর বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বন্যার পানি আরো বাড়লে বা বন্যা দীর্ঘায়িত হলে জেলার যমুনা নদী তীরবর্তী দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যাদুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দেওয়ায় ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। সারা জেলায় ৫৯টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে বলে জেলার স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে বলা হলেও বন্যাদুর্গত এলাকায় মেডিক্যাল টিমগুলোর কোন দেখাই মিলে না। বন্যাদুর্গত এলাকায় ১১ হাজার ৬২৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫ হাজার ৯০৭টি নলকূপ তলিয়ে গেছে। ৬ হাজার ২৯৫টি কাাঁচা-পাকা লেট্টিন তলিয়ে গেছে। ১৯৪ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ও ৬৬ কিলোমিটার পাকা রাস্তা পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে গেছে চারটি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৬৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আজ রবিবার সকালে জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার বানীকুঞ্জ এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে সাবিয়া নামের ছয় বছরের এক কন্যাশিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। জেলায় বন্যায় এ পর্যন্ত পানিতে ডুবে ও সাপের কামড়ে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বিকেলে জামালপুরের ইসলামপুরের গোয়ালেরচর ইউনিয়নের গোয়ালেরচর-সভারচর রাস্তায় খালের ওপর নির্মিত ছোট একটি সেতু গতকাল শনিবার দুপুরে বন্যার পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। এতে করে ওই এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ২০১৫ সালে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এলজিইডি ওই সেতুটি নির্মাণ করেছিল। এদিকে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জনকণ্ঠকে জানান, মাঝে বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও গত চারদিন ধরে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফের বেড়ে যাওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। জেলার সাতটি উপজেলায় ৫৯টি ইউনিয়নের ৬৭৭টি গ্রামের ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭০৭ জন মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত ৫১০ টন ত্রাণের চাল, নগদ ২৫ লাখ টাকা, শুকনো খাবার সাত হাজার প্যাকেট, দুই লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও ৬ লাখ টাকার গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। জেলার ত্রাণ ভান্ডারে আরো ২০০ টন চাল, নগদ সাড়ে ৫ লাখ টাকা ও দুই লাখ টাকার শিশুখাদ্য মজুদ রয়েছে।
×