ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনাপাড়ে নির্মিত এক নম্বর ক্রসবারে এক শ’ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে

করোনা ও বন্যার ছোবল ॥ তবুও থেমে নেই জীবন

প্রকাশিত: ০০:৪৭, ২৬ জুলাই ২০২০

করোনা ও বন্যার ছোবল ॥ তবুও থেমে নেই জীবন

স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ ॥ করোনা ও বন্যার ছোবল, তবুও থেমে নেই জীবন। বাঁধেরও ওপর আশ্রয় নিয়েও স্বামী সন্তানের জন্য চুলা জ্বালিয়ে রান্নায় ব্যস্ত তিন সন্তানের জননী সাদিকুন্নাহার বেগম। বসতবাড়ি ক্ষিদ্রাণীর চরে। বাড়িতে পানি উঠেছে। প্রায় এক মাস বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়ে একটি বেসরকারী সংস্থার দেয়া আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তাঁবুতে বসবাস করছে এই পরিবার। ক্ষিদ্রানীর চর সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকসাবাড়ি ইউনিয়নে। যমুনাপাড়ে নির্মিত এক নম্বর ক্রসবারে ক্ষিদ্রাণীর চরসহ আশপাশের প্রায় এক শ’ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবন যাপন করছে এই পরিবারগুলো। শুক্রবার বিকেলে যমুনার এক নম্বর ক্রসবারে দেখা মেলে সাদিকুন্নাহারের সঙ্গে। সে চুলায় ভাত চড়িয়ে বঁটি দা দিয়ে পেঁপে কাটছেন। ছোট শিশুটি পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। খিদের ছাপ চোখে মুখে। তার চুলাপাড়ে রান্নার আর কোন সামগ্রী চোখে পড়েনি। শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে সাদিকুন্নাহার জানালো সেই সকালে , আর সেই বিকেলে দু’বার রান্না হয়। স্বামী রাজু এ বর্ষায় যমুনায় জাল দিয়ে মাছ ধরা নিয়ে ব্যস্ত। সকালে বের হয়ে সন্ধ্যায় ফেরে, কখনও বা খালি হাতে। বাঁধে আশ্রিত পবিবারের কম বেশি সবার একই চিত্র। সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনা নদীর পানি দ্বিতীয় দফায় বেড়ে শনিবার দুপুরে বিপদসীমার প্রায় তিন ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চারদিকে অথৈ পানি, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ অভ্যন্তরের গ্রাম-জনপদ বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। বেশির ভাগ মানুষ বসতবাড়ি ছেড়ে নিকটস্থ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। খোলা আকাশের নিচে গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস -মুরগিসহ বন্যার্ত মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দীর্ঘ সময় পানিবন্দী থাকায় দুর্গম চরাঞ্চলের বন্যাকবলিত মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বন্যাদুর্গত এলাকার শিশুদের। চরাঞ্চলের চারণভূমিগুলো দীর্ঘদিন বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় গৃহপালিত পশুর খাদ্যসঙ্কট দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে বন্যাকবলিতদের। সামনে আর ক’দিন পরেই ঈদ, কিন্তু তাদের মাথায় এ নিয়ে কোন চিন্তা নেই। গবাদিপশুর খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জনপদের ঘাস, আবাদের ধানের খড়-গুঁড়া সবই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। নগদ অর্থ সঙ্কটে বাজার থেকে পশুখাদ্য কিনে আনা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। তাই মানুষের সঙ্গে গবাদিপশুগুলোও কষ্ট করছে। খোকসাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশিদুল হাসান রশিদ মোল্লা বন্যা ও করোনায় মানুষের কষ্ট বেড়েছে স্বীকার করে তিনি জানান, ক্রসবারের ভেতরে গিয়ে এখনও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে ত্রাণ দেয়া না হলেও শৈলাবাড়ি শিকদার মোড়ে গত সপ্তাহে চারশ’ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ দেয়া হয়েছে।
×