ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আর্থিক সঙ্কটে বাঘারপাড়ার মানিকদাহ শাঁখাপল্লীর বাসিন্দারা

প্রকাশিত: ০০:৪০, ২৬ জুলাই ২০২০

আর্থিক সঙ্কটে বাঘারপাড়ার মানিকদাহ শাঁখাপল্লীর বাসিন্দারা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শঙ্খ বা শাঁখা ব্যবহার করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের সধবা নারীর হাতে হয় শাঁখার ব্যবহার। ভারত ও শ্রীলঙ্কা থেকে শঙ্খ আমদানি করে পুরুষ শিল্পীরা। সেই শঙ্খ মেশিনে কাটেন। তৈরি হয় বিভিন্ন ডিজাইনের শাঁখা। পরে নারী-পুরুষ শিল্পীরা মিলে নিপুণ হাতে এগুলোর ওপর কারুকাজ করেন। কিন্তু বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে শঙ্খ দুষ্প্রাপ্য হলেও নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এ কুটির শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন বাঘারপাড়া উপজেলার মানিকদাহ গ্রামের শাঁখা শিল্পীরা। এখানকার ২০টি পরিবারের নারী-পুরুষ মিলিতভাবে জীবিকার উৎস হিসেবে সুনিপুণভাবে শাঁখা তৈরি করে নিজেদের দক্ষতার দৃষ্টান্তও রেখেছেন। মানিকদাহ শাঁখা শিল্পীদের তৈরি করা শাঁখার চাহিদা এবং মান যথেষ্ট ভাল। বিভিন্ন জেলাতেও বাঘারপাড়ার শাঁখা শিল্পীদের সুনাম রয়েছে। শুধু অলঙ্কার হিসেবেই নয়, হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীদের বিয়েতে শাঁখার স্থান সর্বাগ্রে। হিন্দু নারীর বিয়ের সময় শাঁখারি বা ঠাকুরকন্যার হাতে শাঁখা পরিয়ে দেন। স্বামীর মৃত্যুর পর লাশ শ্মশানে দাহের পূর্ব মুহূর্তে হাতে পরা এ শাঁখা ভেঙ্গে ফেলে দেয়া হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শঙ্খের সুমধুর সুরের মাধ্যমে পূজা-পার্বণের কার্যক্রম শুরু করেন। পল্লীর নববধূ ও কিশোরী মুখের দাগ দূরীকরণেও শাঁখার গুঁড়ো ব্যবহার করে থাকেন। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রভাবে তৈরি শাঁখা বিক্রি না হওয়ায় আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন ধলগ্রামের মানিকদাহ শাঁখাপল্লীর কারিগররা। কাজ বন্ধ থাকায় বিভিন্ন এনজিওর ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন। অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা। সরেজমিনে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নে সবুজ বৃক্ষরাজির সুশীতল ছায়াঘেরা মানিকদাহ বাঁওড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এ শাঁখাপল্লী। পৈত্রিক ব্যবসা হিসেবে অনেকেই শাঁখাশিল্পের সঙ্গে জড়িত। শাঁখা তৈরি ও বিক্রির মাধ্যমে সারাবছর সংসার চলে ব্যবসায়ী ও কারিগরদের। শাঁখা ব্যবসায়ী পাপস ধর জানান, ব্যবসায় অত্যন্ত মন্দা। করোনাভাইরাসের প্রভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। অনেক মূল্যে তৈরি শাঁখা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পল্লীর সবাই আর্থিক সঙ্কটে ভুগছেন। শাঁখারি লক্ষণ ধর, হরিচাঁদ ধর ও দিলীপ দত্ত জানান, শাঁখা তৈরি ও শাঁখার ওপর খচিত বিভিন্ন কারুকার্য করেন তারা। স্বচ্ছন্দেই সংসার চলত। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় পাঁচ মাস ধরে তেমন কাজ না থাকায় তারা আর্থিক কষ্টে ভুগছেন। সরকারীভাবেও তেমন সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি। তাদের দাবি, শাঁখাশিল্পীদের বাঁচাতে আশু সাহায্যের প্রয়োজন। ধলগ্রামের ইউপি চেয়ারম্যান সুভাষ দেবনাথ জানান, করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারীভাবে উপজেলা প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে শাঁখাশিল্পে সংশ্লিষ্টদের আর্থিক ও খাদ্য সহযোগিতা করা হয়েছে। শাঁখাশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।
×