ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় রায়হানকে গ্রেফতারের নিন্দা

প্রকাশিত: ২৩:১১, ২৬ জুলাই ২০২০

মালয়েশিয়ায় রায়হানকে গ্রেফতারের নিন্দা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশী তরুণ রায়হান কবিরের গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছে দেশের অভিবাসন খাতের ২১টি সংগঠন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় প্রচারিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে রায়হান বক্তব্য দেয়ার অপরাধে শুক্রবার মালয়েশিয়ার পুলিশ তাকে আটক করেছে। এই আটকের নিন্দা জানিয়ে রায়হানের নিরাপত্তা নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও দ্রুত তার মুক্তি দাবি করেছে সংগঠনগুলো। রায়হানের অপরাধ ওই প্রতিবেদনে তিনি বলেছিলেন, ‘মালয়েশিয়ার অভিবাসী কর্মীদের ওপর চলা নিপীড়নমূলক আচরণ করা হয়’। বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন, ঢাকার পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। শনিবার ২১টি সংগঠনের একটি যৌথ বিবৃতি এই আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, রামরু, ওয়ারবি, ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ), ওকাপ, বিএনএসকে, আইআইডি, আসক, বমসা, বাসুগ, ইনাফি, কর্মজীবী নারী, বিএনপিএস, ডেভকম, ইমা, আওয়াজ ফাউন্ডেশন, রাইটস যশোর, বিলস, বাস্তব, ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশন। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য পাওয়ার জন্য দিনভর চেষ্টা করেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যদিও রায়হান বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় সরকারের সব নিয়ম মেনেই গেছেন। অভিবাসী আইনেও তাকে সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব নিজ দেশের। শুক্রবার গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই এই দুই মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এমনকি মন্ত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন রায়হান কবিরের জন্য দুইজন আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে। আইনজীবীরা আগামী সোমবার রায়হান কবিরের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়েছে। সঙ্গে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিনিধিও থাকবেন। হাইকমিশন সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। হাইকমিশন রায়হানের কি দোষ এ বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যেই মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আলোচনায় কোন ফল হয়নি বলে আইনী প্রক্রিয়ায় বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। রায়হান এখন মালয়েশিয়ার পুলিশ কাস্টডিতে আছেন। তাকে কারাগার বা কোথাও পাঠানো হয়নি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং আগামী ১৪ দিন তাকে পুলিশ কাস্টডিতে রাখবে। তবে রায়হানের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছে সেটা জানা যাবে আগামী সোমবার। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের প্রধান শরীফুল হাসানের পাঠানো যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ৩ জুলাই লকডআপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট-শীর্ষক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে আল-জাজিরা। এতে দেখানো হয়, মালয়েশিয়া সরকার মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (এমসিও)’র মাধ্যমে মহামারীর সময়ে অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়ার নিপীড়নের যে ছবি উঠে এসেছে সেটা নিন্দনীয় ও গভীর উদ্বেগের। আমরা ১১ জুলাই এক বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি এই ধরনের অভিযোগগুলো তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, এই ঘটনার পর সাংবাদিকদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করল মালয়েশিয়া। আল- জাজিরার প্রতিবেদনে সাক্ষাতকার দেয়ায় বাংলাদেশী তরুণ মোঃ রায়হান কবিরের (২৫) ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে সমন জারি ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রশাসন। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, গণমাধ্যমে সাক্ষাতকার দেয়া কোন অন্যায় নয়। আর রায়হান কোন অপরাধও করেননি। অথচ এমনভাবে মালয়েশিয়া বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাকে খুঁজছে যেন সে বড় অপরাধী। এর মধ্যেই শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করে মালয়েশিয়ার পুলিশ। আমরা রায়হানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। রায়হানের বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে। তার পরিবার ও স্থানীয়রা বলছেন, রায়হান ছোটবেলা থেকেই যে কোন অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতেন। রায়হান প্রবাসীদের কণ্ঠস্বর। আমরা এই প্রতিবাদী তরুণের মুক্তি চাই। মালয়েশিয়ার সব মানবাধিকার সংস্থা আইনজীবী, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের আমরা এ বিষয়ে সরব হওয়ার অনুরোধ করছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনকে তৎপর হয়ে রায়হান কবিরের নিরাপত্তা ও আইনী সহায়তা দেয়াসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করছি। ২১ সংগঠনের যৌথ বিবৃতি ॥ মালয়েশিয়ার অভিবাসী কর্মীদের ওপর চলা নিপীড়নমূলক আচরণ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রচারিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে কথা বলার অপরাধে বাংলাদেশী তরুণ রায়হান কবিরের গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের অভিবাসন খাতের ২১টি সংগঠন। রায়হানের নিরাপত্তা নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত তার মুক্তি দাবি করেছে সংগঠনগুলো। এ বিষয়টি মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন, ঢাকার পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ রায়হান কবিরকে দেশে ফেরত পাঠাতে পারে ॥ আল-জাজিরায় প্রতিবেদনটি প্রচার হওয়ার পর অভিবাসন বিভাগের প্রধান খায়রুল দাজায়মি দাউদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, মালয়েশিয়ার ভাবমূর্তি ক্ষুণœœকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা বা পারমিট বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে অভিবাসীদের কঠোরভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। রায়হান কবিরকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। তবে অপরাধের বিষয়টি ভাল করে পরীক্ষা করা হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে না মালয়েশিয়ার আইনে বিচার করা হবে। এদিকে, কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রচারিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে লকডাউনে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত অভিবাসীদের প্রতি দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈষম্যমূলক ও বর্ণবাদী আচরণ নিয়ে সাক্ষাতকার দেয়ায় গ্রেফতার বাংলাদেশী রায়হান কবিরকে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা জানিয়েছে দেশটির সরকার। -খবর ওয়েবসাইটের। নিউইয়র্ক টাইমসের অনলাইন প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে বলা হচ্ছে, মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক খাইরুল দাযাইমি দাউদ শনিবার একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘এই বাংলাদেশী নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানো ছাড়াও চিরতরে মালয়েশিয়া প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।’ শুক্রবার বিকেলে রাজধানী কুয়ালালামপুরের জালান পাহাংয়ের একটি কনডোমিনিয়াম থেকে পুলিশ ও ইমিগ্রেশনের বিভাগের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে রায়হান কবিরকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক খায়রুল দাজায়মি দাউদ। মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক চলতি লকডাউনে বৈষম্যমূলক ও বর্ণবাদী আচরণ নিয়ে ‘লকডআপ ইন মালয়েশিয়াস লকডাউন’ শিরোনামে গত ৩ জুলাই ২৫ মিনিটের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আল-জাজিরা টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। সেখানে সাক্ষাতকার দেন রায়হান কবির। তব প্রতিবেদনটি প্রচারিত হওয়ার পর মালয়েশিয়া সরকারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আল-জাজিরার এমন প্রতিবেদনকে ‘ভিত্তিহীন ও মিথ্যাচার’ বলে অভিহিত করে। এরপর রায়হান কবিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে রায়হানি কবিরের (২৫) ওয়ার্ক পারমিটও (ভিসা) বাতিল করা হয়। রায়হানের খোঁজ দিতে জনসাধারণের সহায়তা চেয়ে একটি নোটিসও জারি করে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। তার বিরুদ্ধে এর আগে বাংলাদেশী অপহরণের অভিযোগে মামলা হয়েছে এবং একাধিকবার মালয়েশিয়ায় জেলও খাটেন তিনি। রায়হান এক সময় মালয়েশিয়া ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
×