ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের ॥ ঈদ সেবায় থাকবে এক হাজার ২২০ বাস

বিআরটিসিকে অনিয়মের ধারা থেকে বের করে আনতে হবে

প্রকাশিত: ২২:৫১, ২৬ জুলাই ২০২০

বিআরটিসিকে অনিয়মের ধারা থেকে বের করে আনতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন-বিআরটিসিকে অনিয়মের ধারা থেকে বেরিয়ে আনতে কর্মকর্তাদের তাগাদা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শনিবার বিআরটিসির ঈদ সেবা উপলক্ষে গৃহীত পদক্ষেপ ও দিকনির্দেশনা প্রসঙ্গে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় নিজের সরকারী বাসভবন থেকে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চালকদের সতর্ক হয়ে গাড়ি চালানোর আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি ঈদ পূর্ববর্তী ও পরবর্তীতে সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালনায় পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকদের অনুরোধ জানাচ্ছি। এর পাশাপাশি ফিরতি যাত্রায় কোন শৈথিল্য না দেখিয়ে কড়া নজরদারির জন্য জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়া নিয়ে সতর্ক করে সড়কমন্ত্রী কাদের বলেন, ঈদের আগে ও পরে কর্মস্থলে ফিরে আসার সময় অধিকসংখ্যক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, ঘটে মূল্যবান প্রাণহানি। তাই এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। বৈঠকে জানানো হয়, কোরবানির ঈদে এক হাজার ২২০ বাস যাত্রীদের সেবায় যুক্ত থাকবে। প্রতিবছরের মতো এবারও বিআরটিসি গণপরিবহন চলাচল অব্যাহত রাখবে। ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮১৫টি এবং ঢাকার বাইরের ডিপোসমূহ থেকে ৪০৫টি বাস চলাচল করবে। নিয়মিত সেবার পাশাপাশি জরুরী প্রয়োজনে আরও ৫০টি বাস স্ট্যান্ডবাই থাকবে। অনিয়ম রোধে সরকারের কঠোর অবস্থান জানিয়ে হুঁশিয়ার করে বিআরটিসির কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আপনারা ভাববেন না যে, আমি কোন খবর রাখি না। অনিয়মের বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের যে অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি তা আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, সতর্ক করে দিতে চাই। কেউ জবাবদিহির উর্ধে নয়। চেয়ারম্যান বদল হলেও বিআরটিসির পরিবর্তন হয় না মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, চেয়ারম্যান আসে-যায়, পরিবর্তন হয় সরকারের নিয়মে। কিন্তু বিআরটিসির জনবল ব্যবস্থাপনা, সেবার পরিধি বাড়ার সঙ্গে সমন্বয় করে জনবল বাড়ানো তথা অর্গানোগ্রাম হালনাগাদকরণের কোন উদ্যোগ দেখতে পায়নি। সবাই রুটিন দায়িত্ব পালন করে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী কোন পরিকল্পনা নিতে দেখি না। চেয়ারম্যানসহ উর্ধতন যারা আছেন প্রয়োজনে সচিব সাহেবসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করুন। করোনাভাইরাস সঙ্কটে বিআরটিসির আয় কমার তথ্য জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিআরটিসি যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সেবায় নিয়োজিত। গাড়ির চাকা সচল থাকলে সংস্থাটির আয় হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে পুঞ্জীভূত লোকসান বা দায়-দেনা কমিয়ে আনার ধারায় ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের সময় গাড়ি বন্ধ থাকায় আয়ের ক্ষেত্রে আবারও ছন্দ পতন ঘটে। বিআরটিসির আগের সুনাম পুনরুদ্ধারে জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমি বার বার বলি, বিআরটিসিকে অনিয়মের ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। লাভের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। আর এ কাজটি অন্য কেউ করে দেবে না। এটি বিআরটিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম নিয়ে করতে হবে। এ সংস্থার প্রতি গণমানুষের যে আস্থা তা ধরে রাখতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বলে বছরের পর বছর সরকার টাকা দেবে তা নয়। নিজেদের আর্থিক মেরুদ- শক্ত করতে হবে। বাড়াতে হবে সক্ষমতা। লোকসান কমানোর যে ধারায় বিআরটিসি ফিরে এসেছে তা ধরে রাখতে হবে। বিআরটিসির ‘অনিয়ম-দুর্নীতি’ নিয়ে এর আগেও বিভিন্ন সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কার্মকর্তাদের অনিয়মের ‘সিন্ডিকেট ভাঙ্গার’ নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, বছরে অর্ধ সহস্রাধিক বাস এবং অর্ধ সহস্রাধিক ট্রাক যোগ করার পরেও কেন লোকসান থাকে? প্রধানমন্ত্রী বিআরটিসিকে সমৃদ্ধ করেছেন। আপনারা অনিয়মের সিন্ডিকেট বন্ধ করে দিন। আর লঘু অপরাধে শ্রমিকদের গুরুদ- দেবেন না। অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে শাস্তি দিন। নিম্ন বেতনভুক্তদের শাস্তি দিয়ে বড় অপরাধ আড়ালের কৌশল নেবেন না। বিআরটিসির বেশির ভাগ অনিয়মে কর্মকর্তাদের দায়ী করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিআরটিসির সমস্যা শ্রমিক-কর্মচারী নয়, ডিপোকেন্দ্রিক; যে অনিয়ম শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সদর দফতরেও কিছু সমস্যা আছে, সেটা আমার জানা আছে। বিআরটিসির পরিবহন মেরামত, ক্রয়, ভূমি ইজারা প্রদান, ইজারা আদায়, দৈনিক ট্রিপ ব্যবস্থাপনা, পণ্য সেবা থেকে আদায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাস ভাড়া প্রদান, বাস লিজ প্রদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়মের ভূতের আছর আছে বলে আমার কাছে অভিযোগ আছে।
×