ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি

প্রকাশিত: ২১:২৯, ২৬ জুলাই ২০২০

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি

করোনা মহামারী সঙ্কট একেবারে কেটে না গেলেও আস্তে-ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বিশ্ব অর্থনীতি। এক্ষেত্রে প্রবল আশার আলো দেখাচ্ছে করোনা ভ্যাকসিন। বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনটি তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাজারে আসার অপেক্ষায়। পিছিয়ে নেই যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, চীন এবং রাশিয়াও। করোনা প্রতিষেধক ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পথে এগিয়ে গেছে তারাও। তদুপরি দেশে দেশে লকডাউন প্রত্যাহারের পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সর্বস্তরের জনজীবন। জীবিকার অনিবার্য তাগিদে মানুষ ফিরতে শুরু করেছে কাজকর্মে। করোনা দুর্যোগের দুঃসময়ে অনেকেই কর্মচ্যুত ও কর্মহীন হয়ে পড়লেও এখন আবার নতুন উদ্যমে খুঁজে বেড়াচ্ছেন কাজকর্ম। কলকারখানাও খুলতে শুরু করেছে। পুরোদমে না হলেও আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি শুরু হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। অতিক্রম করেছে প্রতি ব্যারেল ৩০ ডলার। দেশে দেশে আন্তঃবাণিজ্য এবং পর্যটনও শুরু হয়েছে। তবে সর্বত্রই সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে করোনাজনিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার, সর্বোপরি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর। বিশ্বের মানুষ এসবে অভ্যস্তও হয়ে উঠছে ক্রমশ। স্বীকার করতে হবে যে, লকডাউনে জীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়লেও তা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে জীবিকার সন্ধানে। এটি মানুষের একটি চিরন্তন স্পৃহা। মূলত এর জন্যই আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে বিশ্ব অর্থনীতি। কোন কোন দেশে কোথাও কোথাও করোনা সংক্রমণের গতি কিছু বাড়লেও সেসব স্থানে সীমিত করা হচ্ছে লকডাউন ও বিধিনিষেধ। তাও সাময়িকভাবে। ফলে জীবন-জীবিকার গতি থেমে থাকছে না। ইতোপূর্বে আইএমএফ করোনাজনিত লকডাউনে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণ করেছে ১২ ট্রিলিয়ন ডলার। ভয়াবহ বিশ্ব মন্দার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিশ্বের নানা দেশ। আর এর মূলে রয়েছে মানুষ। শিল্প কলকারখানা ব্যবসা-বাণিজ্য এর নিয়ামক মাত্র। কোভিড-১৯ জনিত মহামারীর কারণে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আগের প্রাক্কলনের চেয়ে কমে দাঁড়াতে পারে এক দশমিক ৬ শতাংশে। একটানা ৬৬ দিন লকডাউনে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। বিশ্ব অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের জুন সংখ্যায় তুলে ধরা হয় এই পূর্বাভাস। এতে বলা হয়েছে, এ বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ কম। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভয়াবহ মন্দা। তবে এর পাশাপাশি আশা ও আশ্বাসের বাণীও শুনিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ২০২১ সালেই বৈশ্বিক জিডিপি ঘুরে দাঁড়াবে। তখন জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশও। করোনাজনিত ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গড় জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা ঠিক রেখে এবার প্রণয়ন করা হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট। এটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে বিশ্বব্যাংকের আশঙ্কা অমূলক হলেও হতে পারে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। দেশে প্রবাসী আয় তথা রেমিটেন্স ও রিজার্ভের ক্ষেত্রে তীব্র আশার সঞ্চার হয়েছে। রিজার্ভ অতিক্রম করেছে ৩৬ বিলিয়ন ডলার। তৈরি পোশাকের ৮০ শতাংশ ক্রয়াদেশ ফিরেছে। নতুন কার্যাদেশও আসছে। বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় খাদ্যের মজুদও সন্তোষজনক। সরকার পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, পায়রা বন্দর ও বিদ্যুত কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর। এই ধারা অব্যাহত থাকলে মন্দাবস্থা মোকাবেলা করে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব হবে না।
×