ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রবে না কেউ গৃহহীন

প্রকাশিত: ২১:২৯, ২৬ জুলাই ২০২০

রবে না কেউ গৃহহীন

নদীভাঙন, ঝড়-বাদল-জলোচ্ছ্বাস এ দেশের মানুষের জীবনের নিত্যসঙ্গী। প্রকৃতির খেয়াল ও বিরূপ আচরণের সঙ্গে নদীসংলগ্ন ও উপকূলবাসীদের জীবন যেন ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। সহাবস্থান ও সংগ্রাম কাকে বলে সেটি বেশ ভালই জানে এসব লড়াকু পরিশ্রমী মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত কয়েক দশক ধরে দেশের মানুষ নতুন করে দুর্ভোগ ও বিপন্নতার শিকার হয়ে চলেছে। উন্নত দেশগুলোর অপরিণামদর্শী আচরণের জন্য প্রকৃতির যে চিরকালীন ক্ষতিসাধন হয়ে চলেছে, তার ভোগান্তির শিকার যে কয়টি দেশের মানুষ তার ভেতর বাংলাদেশ একেবারে শীর্ষে। বর্তমান জনকল্যাণকামী সরকারকে বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে মানুষ বাঁচাতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। তারই একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হচ্ছে এই প্রকল্প। বৃহস্পতিবার প্রকল্পটির উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আন্তরিক ও প্রেরণাসঞ্চারী বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এমন কিছু কথা বলেছেন, যা দেশবাসীর মনে গভীর ব্যঞ্জনা জাগাতে সক্ষম। এতে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় তৃণমূলসংলগ্ন রাজনৈতিক দলের আগামীর পরিকল্পনা ও অঙ্গীকারের প্রসঙ্গ যেমন উঠে এসেছে, তেমনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ একটি মানবিক দিকও পুনরায় দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট হয়েছে। বাংলার মানুষ হৃদয়ের গভীরে এই সত্যকে ধারণ করে আছে যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেশের জন্য, জাতির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা পিতার কাছ থেকে সেই শিক্ষাটিই পেয়েছেন। তাই তাঁর সকল ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দেশের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণ। যে কোন অবস্থা মোকাবেলা করা, প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করে চলা আর সৎপথে থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণ করাÑ এ আদর্শ তিনি পেয়েছেন জাতির পিতার কাছ থেকেই। তাঁরই আদর্শ শিরোধার্য করে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ব্রতটিই পালন করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কক্সবাজারকে উন্নত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আশ্রয়ণ কেন্দ্র উদ্বোধনের পর ১৯ জন উপকারভোগীর মাঝে বসতঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়। এ সময় খুরুশকুল প্রান্তে তিনজন উপকারভোগী আশ্রয়ণ প্রকল্পস্থলে ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করেন। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম ধাপে নির্মিত পাঁচতলা ২০টি ভবনসহ প্রকল্পের মোট ১৩৯টি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি পাঁচতলা ভবনে থাকছে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট। একটি থাকবে ১০তলা শেখ হাসিনা টাওয়ার। সব ভবন নির্মাণ হলে উদ্বাস্তু জীবনের অস্বাস্থ্যকর, নোংরা পরিবেশ ছেড়ে সাজানো পরিপাটি দালানে উঠবেন মোট প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবার। নামমাত্র ১০০১ টাকা মূল্যে এসব ফ্ল্যাট হস্তান্তর সম্পন্ন হলে এক বিরাট সুমহান পরিকল্পনাই চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়ন হবে। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত একটি দেশ। সেই স্বপ্ন পূরণে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। ইতোপূর্বে সরকার বস্তিবাসীদের জন্য আবাসনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এবার জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশাল আশ্রয়ণ প্রকল্প হলো। দেশের একটি মানুষও যেন গৃহহীন না থাকে এই সুন্দর সদিচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম যে ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তা বলাই বাহুল্য।
×