ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রাণ সহায়তা তদারকি করতে ৬টি কমিটি গঠন

প্রকাশিত: ১৯:৩৪, ২৫ জুলাই ২০২০

ত্রাণ সহায়তা তদারকি করতে ৬টি কমিটি গঠন

অনলাইন রিপোর্টার ॥ মৌসুমের তৃতীয় দফা বন্যায় দুর্গত দেশের ১৬ জেলায় দু’দিন আরও পানি বাড়বে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, সুমদ্রে জোয়ারের কারণে দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যার পানি কমতে দেরি হতে পারে। আর জোয়ারে সমস্যা না হলে অগাস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেশের সব জায়গা থেকে বন্যার পানি নেমে যেতে পারে। সারা দেশের ত্রাণ সহায়তা তদারকি করতে ৬টি কমিটি গঠনও করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। আজ শনিবার সচিবালয়ে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বন্যার পূর্বাভাস তুলে ধরে ডা. এনাম বলেন, আগামী দুই দিনে মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরিয়তপুর, ঢাকা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল এবং নওগাঁ জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে, তারপর পানি কমতে শুরু করবে। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ছে, এটা কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি বাড়তে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীর পানি কমছে। ঢাকা জেলার আশপাশের নদীর পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়তে পারে। এক মাস হয়ে গেল বন্যা। ২৬ জুন থেকে বন্যা শুরু হয়। ১১ জুলাই থেকে দ্বিতীয় দফায় পানি বাড়ে এবং ২১ জুলাই থেকে তৃতীয় দফায় পানি বাড়ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে জানিয়ে এনামুর বলেন, অন্যান্য জেলায় ২৭ জুলাই পর্যন্ত পানি বাড়ার পর আস্তে আস্তে কমতে শুরু করবে। বন্যায় ত্রাণ সহায়তা তদারকি করতে ছয়টি কমিটি করা হয়েছে। তারা উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ত্রাণ কার্যক্রমের দেখভাল করবে। আগামী ২১ দিন কমিটিগুলো এ দায়িত্ব পালন করবে। এরা মাঠ পর্যায়ের যে কোনো সমস্যা সমাধান করবেন এবং যে কোনো চাহিদা পূরণে আমাদের জানাবেন, আমরা সে অনুযায়ী বরাদ্দ দেব। বন্যার্তদের জন্য গত ২৮ জুন থেকে ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত তিন কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা, ৫২ হাজার ১০ টন চাল, এক লাখ ২১ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট, গো-খাদ্য কিনতে এক কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্য কিনতে আরও ৭০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। কয়েক জায়গায় ঘরবাড়ি নদীতে ভেঙে গেছে, সেগুলো নির্মাণের জন্য ৩০০ বান্ডেল টিন এবং ৯০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। দেশের ৩১টি জেলা বন্যা কবলিত জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, ১৪৭টি উপজেলায় আট লাখ ৬৫ হাজার ৮০০টি পরিবারের ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭ জন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এসব অঞ্চলে এক হাজার ৫১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে ৮৮ হাজার ৬২ জন আশ্রয় নিয়েছেন। আমি বন্যাকবলিত দেশবাসীকে জানাতে চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের পাশে সব সময় আছেন। তিনি সব সময় আমাদের কার্যক্রম তদারকি করছেন, আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন, আমরা তার নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ত্রাণের কোথাও কোনো সঙ্কট নেই। আমাদের কাছে যেমন পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে, তেমনি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড লেভেলেও পর্যাপ্ত মজুদ আছে। ৩৩৩ নম্বরের সঙ্গে সব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ট্যাগ করে দেয়া হয়েছে। কোথাও যদি কেউ খাদ্যে কষ্ট পায় ৩৩৩ নম্বরে যোগাযোগ করলে সেখানে ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৩৩৩ হেল্পলাইনের সঙ্গে সকল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। কোথাও কেউ খাবারের কষ্টে থাকলে ৩৩৩ নম্বরে যোগাযোগ করলে সেখানে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের আওতায় ‘৩৩৩ কল সেন্টার’ জাতীয় তথ্য ও সেবা দিতে কাজ করছে, যার সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড। করোনাভাইরাসের এ সংকটের সময়ে দেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হেল্পলাইনে পরিণত হয়েছে কল সেন্টার ‘৩৩৩’। যেকোনো সময়ে ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন দিয়ে মানুষ করোনা ভাইরাস সম্পর্কে তথ্য, চিকিৎসকের পরামর্শ, খাদ্যসহ বিভিন্ন সহায়তা পাচ্ছে। সরকারের এ ইতিবাচক উদ্যোগটি সাধারণ জনগণের মধ্যে বহুল প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধার দু’টি উপজেলা বামনডাঙ্গা ও ফুলছড়ি উপজেলার বন্যাকবলিত মানুষকে সহায়তা দেয়ার জন্য তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ধন্যবাদ ও স্বাগত জানাই। তবে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ উপজেলাগুলোতে অনেকেই ক্ষুধার্ত আছেন, ঘরবাড়ি হারা, আশ্রয়হীন। এ কথাটা সঠিক নয়। কারণ খবরটি জানার পরে আমরা কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলি। তারা বলেছেন, খাদ্য সহায়তা, ত্রাণ সহায়তা সব জায়গায় পাচ্ছে। একেবারে ত্রাণহীন বা খাদ্য সংকটে আছে, এমন কোনো মানুষ এ জেলায় নেই। আমরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলছে। আমরা আপনাদের সহযোগিতাকে স্বাগত জানাই, তবে আমাদের সরকারও যথেষ্ট সামর্থ নিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম করে যাচ্ছে।
×