ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা আক্রান্ত হয়ে উগান্ডায় প্রথম মৃত্যু

প্রকাশিত: ২২:০৭, ২৫ জুলাই ২০২০

করোনা আক্রান্ত হয়ে উগান্ডায় প্রথম মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ করোনায় আক্রান্ত হয়ে উগান্ডায় প্রথম মৃত্যু হয়েছে। আর মার্কিন রোগতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক ডাঃ ফাউসি বলেছেন, করোনা কখনই নির্মূল হবে না। যুক্তরাষ্ট্রে পরপর তিনদিন এক হাজার এক শ’র বেশি মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪১ লাখের ওপরে। এশিয়ার দেশ ভারতে আবারও সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। একদিনে সেখানে প্রায় ৫০ হাজার আক্রান্ত হয়েছেন। এক গবেষণায় জানা গেছে, ভারতে ১৮ কোটি মানুষের দেহে এ্যান্টিবডি রয়েছে। করোনা সচেতনতা বাড়াতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল কাশ্মীরের এক সংবাদপত্র পত্রিকার সঙ্গে মাস্ক দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। ইসরাইলে দ্রুত গতিতে সংক্রমণ বাড়ছে। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকায় ৯৩ বছর বয়সী এক নারী করোনা জয় করেছেন। জাতিসংঘ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দরিদ্র মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে আর্থিক সহযোগিতার পরামর্শ দিয়েছে। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, এএফপি, রয়টার্স, এনডিটিভি, জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি ও ওয়ার্ল্ডোমিটার ডট ইনফোর। ওয়ার্ল্ডোমিটারের মতে, শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে এক কোটি ৫৭ লাখ ৯৮ হাজার ৫১৫ জন। মৃতের সংখ্যা ছয় লাখ ৩৯ হাজার ১৮৪ জনে দাঁড়িয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ৯৬ লাখ ২৭ হাজার ৩৯৩ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ৫৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬০৮ জন। যাদের মধ্যে ৬৬ হাজার ১৯৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একদিনে বিশ্বে দুই লাখ ৭৫ হাজার ৯৫১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ছয় হাজার ৩০২ জন। আগের দিন আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ৮০ হাজার ৩৫৫ জন। সেদিন মারা গেছেন সাত হাজার ১২১ জন। উগান্ডায় প্রথম মৃত্যু ॥ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে উগান্ডায়। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। মার্চ মাসে দেশটিতে প্রথম করোনার উপস্থিতি শনাক্ত হলেও এতদিন পর্যন্ত সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারও প্রাণহানি ঘটেনি। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজারের বেশি। এর মধ্যে সম্প্রতি একজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, উগান্ডায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৭৯। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে ৯৭১ জন। অর্থাৎ দেশটিতে আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশ ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। তারও অনেক পরে উগান্ডায় হানা দেয় করোনা। করোনা কখনই নির্মূল হবে না ॥ করোনা কখনই নির্মূল হবে না। এমনটাই বিশ্বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় এ্যালার্জি ও সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডাঃ এ্যান্থনি ফাউসি। তবে এক্ষেত্রে তিনটি পথ অবলম্বন করে যুক্তরাষ্ট্র করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। তার মতে, সঠিক স্বাস্থ্যবিধি, হার্ড ইমিউনিটি ও ভ্যাকসিনের মাধ্যমেই এই প্রাণঘাতী ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ফাউসি বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন না যে, কোভিড-১৯ একেবারেই নির্মূল হয়ে যাবে। তার মতে, সার্স-১ এর মতো কোভিড-১৯ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে না। ট্রাম্প প্রশাসনের খাম-খেয়ালির কারণে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হচ্ছে। এর আগে গত মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে যে, পৃথিবী থেকে নোভেল করোনাভাইরাস হয়ত কখনই নির্মূল হবে না। এই ভাইরাস কবে নির্মূল হবে সে বিষয়ে ধারণা প্রকাশ করার ব্যাপারেও সতর্ক করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরী বিভাগের পরিচালক ডাঃ মাইক রায়ান। তিনি বলেছেন, প্রতিষেধক পাওয়া গেলেও এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তার মতে, এই ভাইরাসটি জাতিগত রোগ হিসেবে আমাদের সঙ্গেই থাকতে পারে এবং হয়ত কখনই শতভাগ নির্মূল হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, এইচআইভি নির্মূল হয়নি। কিন্তু আমরা এই ভাইরাসের সঙ্গে সহাবস্থান অর্জন করতে পেরেছি। কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রেও হয়ত এমনটাই ঘটবে। যুক্তরাষ্ট্রে ফের হাজার মৃত্যু ॥ করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু কিছুদিন কম থাকলেও আবার বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে এক হাজার ১১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে টানা তিন দিন ধরে দেশটিতে দৈনিক মৃতের সংখ্যা এক হাজার এক শ’র বেশি। লকডাউন তুলে নেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোতে সংক্রমণ বেড়েছে। মঙ্গলবার দেশটিতে এক হাজার ১৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। আর বুধবার মারা গেছেন এক হাজার ১৩৫ জন। এ নিয়ে টানা তিন দিনে হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে। বৃহস্পতিবার টেক্সাসে ১৭৪ জন, ফ্লোরিডায় ১৭৩, ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৫২ ও আরিজোনা অঙ্গরাজ্যে ৮৯ জন মারা গেছেন। ফ্লোরিডায় এর আগে একদিনে এত মানুষ করোনায় মারা যায়নি। টেনেসি অঙ্গরাজ্যেও ৩৭ জন মারা গেছেন। আক্রান্তের সংখ্যায় একসময়ে বিপর্যস্ত নিউইয়র্ককে ছাড়িয়েছে ফ্লোরিডা। ভারতে ৫০ হাজার আক্রান্ত ॥ ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৪৯ হাজার ৩১০ জন। দৈনিক আক্রান্তের হিসাবে যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এ নিয়ে দেশটিতে কোভিড রোগীর সংখ্যা ১২ লাখ ৯২ হাজার ২০৯ জনের বেশি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, একদিনে ৭৪০ করোনা রোগী মারা গেছেন। সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত হয়েছে মহারাষ্ট্রে। প্রতিদিনই সেখানে নতুন করে আরও বহু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গেও পাল্লা দিয়ে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যজুড়ে নতুন করে দুই হাজার ৪৩৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু কলকাতাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ৭৯৫। সারাদিনে ৩৪ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কলকাতাতে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। অন্যদিকে ভারতের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের দেহে এরইমধ্যে করোনার বিরুদ্ধে এ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকতে পারে। পত্রিকার সঙ্গে মাস্ক ॥ ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। তবে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রকোপ বাড়লেও, সে অনুযায়ী মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানছে না দেশটির জনগণ। এ পরিস্থিতিতে করোনার সংক্রমণ রোধে জনগণের সচেতনতা বাড়াতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে ‘রোশনি’ নামের জম্মু-কাশ্মীরের একটি উর্দু সংবাদপত্র। শ্রীনগর থেকে প্রকাশিত পত্রিকাটি মঙ্গলবার পাঠকদের জন্য প্রতি কপির সঙ্গে বিনামূল্যে একটি করে সার্জিক্যাল মাস্ক উপহার দেয়। মাস্কের সঙ্গে পাঠকদের জন্য ছিল ছোট্ট একটি সতর্কবার্তা। পত্রিকাটির প্রথম পাতায় মাস্কটির পাশে লেখা ছিল, ‘মাস্ক কা ইস্তেমাল জরুরী হ্যায় (মাস্ক ব্যবহার জরুরি)’। ইসরাইলে বাড়ছে সংক্রমণ ॥ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে। সে তুলনায় ইসরাইলে সংক্রমণের হার কম থাকলেও কয়েকদিন ধরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সেখানে শুধু বৃহস্পতিবার শনাক্তের সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৩২ জন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬ হাজার ৭৪৮ জন। আর এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩৩ জনে। দেশটিতে প্রথম ভাইরাস শনাক্ত হয় ২১ ফেব্রুয়ারি। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ২৩ হাজার ৫৬০ জন। হাসপাতালে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ২৯৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ মাসের শুরুর দিক থেকে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউলি এডেলস্টেইন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, দেশে যদি দিনে গড়ে ২ হাজার শনাক্ত হয় তাহলে সরকার লকডাউন দিতে পারে। ৯৩ বছরের নারীর করোনা জয় ॥ দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে ক্যাথেরিন ডোরোথি নিউম্যান (৯৩) নামের এক নারী করোনা থেকে মুক্ত হয়েছেন। তিন সপ্তাহ হাসপাতালের আইসিইউতে করোনার সঙ্গে লড়াই করে করোনা মুক্ত হয়েছেন ক্যাথরিন। দক্ষিণ আফ্রিকায় এই প্রথম সবচেয়ে বয়স্ক কোন মানুষ করোনাকে জয় করলেন। ক্যাথরিন ডোরোথি নিউম্যান, জুন মাসের ৩০ তারিখ করোনা পজিটিভ নিয়ে কেপটাউনের স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কেপটাউনের সিটিআইসিসি গবেষণা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। ওখানে ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে ১৮ দিন আইসিইউতে থাকার পর সুস্থ হয়ে ফিরে যান হাসপাতালের সাধারণ বেডে। সবকিছু চেক-আপ করার পর ডাক্তার ক্যাথরিনকে হাসপাতাল ছাড়ার পরামর্শ দেন। বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। ক্যাথরিন সংশ্লিষ্ট সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আর্থিক সহযোগিতার পরামর্শ ॥ করোনার মহামারী ঠেকাতে বিশ্বের ১৩২ উন্নয়নশীল দেশের ২৭০ কোটি দরিদ্র জনগণকে সাময়িক মৌলিক উপার্জনের সমান আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরিদ্রদের মৌলিক উপার্জন নিশ্চিত করা গেলে তাদেরকে ঘরের বাইরে কাজে যেতে হবে না। ইউএনডিপির প্রতিবেদনে তিনটি পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দরিদ্রদের বর্তমান গড় আয়ের সমান অর্থ প্রদান, দেশের জীবনযাত্রা মাঝামাঝি অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যেকোন অঙ্কের অর্থ প্রদান বা দেশের যেকোন স্থানেই বসবাস করুন না কেন তাদের সমান অর্থ প্রদান করা। ইউএনডিপির এ্যাডমিনিস্ট্রেটর এ্যাচিম স্টেইনার বলেন, অভূতপূর্ব সময়ে বৈপ্লবিক কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক দ্যোগ নিতেই হয়। এমনই একটি উদ্যোগ হলো দরিদ্র মানুষের সাময়িক সময়ের জন্য উপার্জনের সমান অর্থ সরবরাহ করা। আর্থিক প্রণোদনা শুধু বড় বড় খাত বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষার জন্য হতে পারে না।
×