ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পবিত্র হজের আর ৪ দিন বাকি

প্রকাশিত: ২২:০৪, ২৫ জুলাই ২০২০

পবিত্র হজের আর ৪ দিন বাকি

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র জিলহজ মাসের আজ তৃতীয় দিবস। সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত হবে করোনা দুর্যোগকালীন অনাড়ম্বর হজ ও কোরবানি অনুষ্ঠান। অভাবিতপূর্ণ এক পরিস্থিতিতে বিশ্ব মানুষের দৈনন্দিন জীবনকাল অতিবাহিত হচ্ছে। ছোঁয়াচে ও সংক্রমণ ব্যাধি করোনা আতঙ্কে সবাই তটস্থ। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে কোন পরিচিতজনের মৃত্যু সংবাদ। কেউ কেউ আইসোলেশানে আবার কেউ কেউ লকডাউনে আবদ্ধ। কোরবানির জন্য পশু ক্রয় করা দরকার আবার জবাইয়ের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ ও সহযোগিতার। কোন দিক দিয়েই আগের মতো অনুকূল পরিবেশ নেই। তাই অনেকেরই প্রশ্ন করোনা মহামারীকালীন কোরবানি পর্ব নিয়ে শরীয়তের ফায়সালা কি? আমরা কয়েকজন আলিম আমাদের ঐতিহ্য, মাজহাবি দিক নির্দেশনা ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য কিতাবাদি অবলম্বনে নিম্ন লিখিত পরামর্শ ব্যক্ত করি। মহামারী করোনাকালীন সময় জুমা, হজ, ঈদের নামাজ ও কোরবানি দানের মাসালাগুলোর সমাধান ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির। আজ এখানে আমরা শুধু পবিত্র ঈদ-উল-আজহায় কোরবানি দানের বিষয়টি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় উপনীত হব। ১. মানুষের জানমাল নিরাপত্তা বিধানে সরকার কিংবা সরকারী ফতোয়া বিভাগ কোরবানি দানের কারণে পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় নিরুৎসাহিত করলে সে ক্ষেত্রে কোরবানি দান থেকে বিরত থাকা যায়। ছোঁয়াচে থেকে বাঁচতে লকডাউন মেনে চলার জন্য বেশ কিছু হাদিসে তাগিদ রয়েছে। যেমন- বুখারী শরীফের ৫৩১০, ৫৩১১, ৫৩১২, ৫৩১৬ নং হাদিস। পবিত্র বুখারী শরীফের ৫৩১০ নম্বর হাদিসে উল্লেখ, হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রা.) হযরত সা’দ (রা.) এর নিকট বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (স.) বলেছেন, ইজা সামিতুম বিত্তাউন বিআরদিন ফালা তাদখুলু- হা...।’ যখন তোমরা শুনবে যে, কোন স্থানে প্লেগ মহামারী রোগ দেখা দিয়েছে, সেখানে যাবে না, আর কোন স্থানে প্লেগ রোগ দেখা দেয়ার সময় তোমরা সেখানে থাকলে সেখান থেকে চলে যাবে না।’ যদি সাধারণ মানুষের চলাচলে কর্তৃপক্ষের এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ থাকে তখন সাচ্ছন্দ্যে কোরবানি দান দুরূহ ব্যাপার। তাই বলে এ ওয়াজিব আমল একেবারে রহিত হবে না। পরিবারে যিনি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ কিংবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মালিক কিংবা সমপরিমাণ নগদ অর্থের অধিকারী কেবল তার ওপর শরিয়ত মতে কোরবানী দান ওয়াজিব। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে তিনি কিভাবে এ ওয়াজিব কাজ সম্পাদন করবেন নিচের আলোচনায় তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। আর যাদের নামে সুন্নাত বা অতিরিক্ত সাওয়াবের নিয়তে কোরবানি দানের প্রথা আমাদের পরিবার ও সমাজে রয়েছে তা থেকে এ বছর বিরত থাকলেও কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কোন পরিবারে কোরবানি ওয়াজিব হয়েছে ২ জনের; ওই পরিবারের মাতা-পিতা, সন্তানসন্ততির নামসহ কোরবানি দেয়া হয়। ২. সামর্থবানদের জন্য এ ওয়াজিব কোরবানি সচেতনতার সঙ্গে বাস্তব মাসালা মাসাইল মেনে সম্পাদন করলে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব। (ক) প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ না হয়ে ছাগল দিয়ে কোরবানি করা। আগেই বলেছি, আমরা প্রায় সময় পরিবারের ওয়াজিব কোরবানির সঙ্গে নফল কোরবানিগুলোও একত্র করে পরিধি বড় করে ফেলি। এ বছর নফল কোরবানি থেকে বিরত থাকতে পারি। (খ.) গরু, মহিষ, উট হলে সাতজনে বা সাত পরিবারে শরিক হওয়া। এর দ্বারা কোরবানির পশু সামাল দিতে সহজ হয়। (গ.) আমাদের জানা থাকা উচিত কোরবানি দানের সুযোগ কিন্তু তিনদিন থাকে। জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ। আমরা প্রথম দিন সবাই একত্রে কোরবানি না দিয়ে কেউ কেউ দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় দিনে কোরবানিতে অংশ নিতে পারি। এর দ্বারা বর্জ্য ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে সহজ হয়। (ফতোয়া আলমগীরী ৫/ ২৯৬)। (ঘ.) যারা কোরবানি ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও নির্দিষ্ট ৩ দিনে কোরবানি দেবেন না বা দুর্যোগপূর্ণ কারণে কোরবানি দিতে পারছেন না, তারা পরবর্তী কোন একদিন কোরবানি পশু কিনে গরিবদের মধ্যে গোশত বণ্টন করে দেবেন। তবে এ সাদাকার গোশত কোরবানিদাতা মোটেই খেতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে পশুর মূল্যও সাদাকা করতে পারেন। যাতে গরিব শ্রেণী উপকৃত হয়। (হিদায়া ৪/৪৩০, ফাতাওয়া ও মাসাইল ই ফাউন্ডেশান)। উল্লেখ্য, কোন কোন মহল থেকে কোরবানি না দিয়ে ওই টাকা দুর্গতদের মাঝে বণ্টনের কথা ভাবা হয়। তবে তা শরিয়ত সম্মত নয়। এ পর্বে আল্লাহর নামে রক্ত প্রবাহই বড় কথা। অর্থকড়ি নয়, দুর্গতদের মাঝে মজাদার আহার্য গোশত পৌঁছানোই উদ্দেশ্য। আল্লাহ আমাদের ইসলামি শরিয়তের কল্যাণকর পথ থেকে আর বিচ্যুত না হয়ে যথাযথ আমলের তৌফিক দান করুন।
×