ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আর্থিক মন্দা আর সংক্রমণের ভয় রেলস্টেশন, নদী বন্দর, বাস টার্মিনাল ফাঁকা

তাড়া নেই ঘরে ফেরার ॥ করোনার ছোবলে এবারের ঈদে ভিন্নচিত্র

প্রকাশিত: ২২:০৩, ২৫ জুলাই ২০২০

তাড়া নেই ঘরে ফেরার ॥ করোনার ছোবলে এবারের ঈদে ভিন্নচিত্র

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। সপ্তাহ শেষে আগামী এক আগস্ট পালিত হবে ঈদ-উল-আজহা। বৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে এবার ঘরে ফেরার তাড়া নেই। সত্যি। অন্য সময় উৎসবের অন্তত ১৫ দিন আগে কমলাপুর রেল স্টেশনে অগ্রিম টিকেট নেয়ার জন্য রাত দিনের লাইন থাকত। এখন পুরো স্টেশন জনশূন্য। খাঁ খাঁ করছে। বাস টার্মিনালগুলোতেও ভিড় নেই। নেই আগাম টিকেট বিক্রি ও কেনার প্রতিযোগিতা। অনলাইনে কিছু কিছু বাস কোম্পানি টিকেট বিক্রি শুরু করলেই সাড়া মিলেনি। যাত্রী পরিবহনে প্রস্তুত নৌপথ। কিন্তু ঢাকা নদী বন্দরের সদরঘাটে এখন পর্যন্ত অগ্রিম টিকেট নিতে কেউ খোঁজ পর্যন্ত করেননি। লঞ্চ মালিকরা বলছেন, যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী তারা অগ্রিম ক্যাবিন বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তেমনি অভ্যন্তরীণ রুটে আকাশপথেও নেই টিকেটের চাহিদা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্থিক মন্দা আর করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখেই অনেকেই এবারের ঈদে বাড়ি যেতে চাচ্ছেন না। সেই সঙ্গে গণপরিবহনে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি একেবারেই ঢিলেঢালা। তাই যাত্রীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আস্থা নেই। বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার মধ্যে দেশে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। আয় কমেছে বহু মানুষের। তাছাড়া সরকার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বারবার করোনা রোধে ঘরে ফেরা নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আট মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি শুরু হয়ে চলে ৩০ মে পর্যন্ত। এই সময় পর্যন্ত গণপরিবহন লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি তুলে নেয়ার পাশাপাশি গণপরিবহন চালু হয়। এই সময়ে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে পরিবহন শ্রমিকদের অনেকেই পেশা বদল করেন। সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক সঙ্কটের ধাক্কা লাগে সারাদেশে। যা এখনও চলমান। বাস মালিক ও শ্রমিক নেতারা বলছেন, ঢাকা মহানগরীতে যাত্রী সঙ্কটের কারণে এখনও ৫০ ভাগের বেশি গণপরিবহন রাস্তায় নেই। শ্রমিকদের একটি অংশ জীবন রক্ষার প্রয়োজনে গ্রামে ফিরে গেছেন। আরেকটি অংশ পেশা বদলে নতুন জীবন যুদ্ধে নেমেছেন। যারা ফের পরিবহনে যুক্ত হয়েছেন তারা কঠিন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছেন। রাজধানীর প্রায় শতভাগ যানবাহন চলে চুক্তিতে। অর্থাৎ চালকসহ শ্রমিকদের মাসিক কোন বেতন নেই। ৬০ ভাগ বাড়তি ভাড়ায় গাড়ি চালালেও আসন পূর্ণ হয় না। সেইসঙ্গে যাত্রীদের সুরক্ষা সামগ্রী নিশ্চিত করার দায়িত্বও শ্রমিকদের। সব মিলিয়ে শ্রমিকরা জীবন ধারণে হিমশিম খাচ্ছেন। অভাবী শ্রমিকদের একটি বড় অংশ এবারের ঈদ ঢাকাতেই উদযাপন করবেন। একটি বেসরকারী সংস্থার জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে ৫০ হাজারের বেশি পরিবার অনটনে ঢাকা ছেড়েছেন। এখন প্রতি মহল্লাতেই অনেক বাড়িতে ঝুলছে মাসের পর মাস ‘টু লেট’। অথচ ভাড়ার খবর নেই। এমনও নজির আছে বাড়িওয়ালারা আগের চেয়ে ‘ছাড়’ দিয়েও ভাড়া পাচ্ছেন না। উপার্জনে ক্ষতিগ্রস্ত ৯৫ ভাগ মানুষ ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ঘোষিত ছুটির ফলে ৯৫ শতাংশ মানুষ উপার্জনের দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে উঠে এসেছে বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাকের এক জরিপে। জরিপে অংশ নেয়া ৫১ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তাদের কোন আয় নেই। এছাড়া, দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল ও স্বল্প আয়ের মানুষের ৬২ শতাংশ উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছেন। আর্থিক কর্মকাণ্ডের দিক থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন ২৮ শতাংশ মানুষ। শুধু তাই নয়, মার্চ মাসে সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার আগের সময়ের তুলনায় মে মাসে খানাভিত্তিক গড় আয় কমেছে ৭৬ শতাংশ। জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে ব্র্যাক বলছে, সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর নিম্ন আয়ের দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল মানুষ ধীরে ধীরে জীবিকা নির্বাহের পথে ফিরে আসছেন। কিন্তু এসব পরিবারের অনেকের জন্য অন্তত আগামী তিন মাসের জন্য ধারাবাহিক খাদ্য বা আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন হবে। জরিপে উঠে এসেছে, সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার আগে গড় মাসিক আয় ছিল ২৪ হাজার ৫৬৫ টাকা। মে মাসে ৭৬ শতাংশ কমে তা ৭ হাজার ৯৬ টাকায় নেমে আসে। শহর এলাকায় আয় কমার হার (৭৯ শতাংশ) পল্লী অঞ্চলের (৭৫ শতাংশ) তুলনায় কিছুটা বেশি। পাঁচ জেলার উত্তরদাতারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বলে জরিপে বেরিয়ে এসেছে। দেশে এখন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। করোনাভাইরাসে আরও ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে; এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮০১ জনে। একদিনে আরও ২ হাজার ৮৫৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ১৬ হাজার ১১০ জন হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বৃহস্পতিবার দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য তুলে ধরেন। করোনা উর্ধগতির মধ্যেও ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও সর্বোচ্চ সচেতনতা প্রদর্শন না করলে ঈদযাত্রা অন্তিমযাত্রায় রূপ নিতে পারে বলে যাত্রীদের সতর্ক করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি ও বন্যার মধ্যে জনস্বার্থে সরকার গণপরিবহন চালু রেখেছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদযাত্রা যে কোন মূল্যে নির্বিঘ্ন করতে হবে। কোনভাবেই যেন মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত না হয়। যানজটের জন্য বৃষ্টির দোহাই দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, সরকার নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে জনস্বার্থে গণচলাচল অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই সড়ক-মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা, সুরক্ষা এবং তাৎক্ষণিক মেরামতে অতীতের মতো সড়ক ও জনপথ বিভাগকে অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। জনগণের ঈদযাত্রা করতে হবে নির্বিঘ্ন। এ সব সমস্যা সমাধানে আসন্ন ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বেশ কিছু নির্দেশনাও দেন মন্ত্রী। ঈদের আগের সাতদিন এবং পরের সাতদিন ফ্লাইওভার এবং আন্ডারপাসসহ চলমান কাজ বন্ধ রাখতে হবে। ভুলতা, নবীনগর, চন্দ্রা, গাজীপুরের মতো রাজধানী থেকে বের হওয়ার পথগুলোতে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয়, সেদিকে আগে থেকেই খেয়াল রেখে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। চাকরি হারাবে দেড় কোটি মানুষ ॥ অন্যান্য দেশের মতো অর্থনীতিতেও বড় আঘাত আসতে শুরু হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও রফতানিমুখী এই দুই ধরনের অর্থনীতিতেই স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। এই স্থবিরতার প্রভাব অচিরেই গিয়ে পড়বে চাকরির বাজারে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস কারণে আগামী তিন মাসের মধ্যে বিশ্বে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ তাদের পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে যাচ্ছেন। যার মধ্যে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ বসবাস করেন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে। ধারণা করা হচ্ছে, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক কর্মজীবী মানুষ কর্মচ্যুত হবেন। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিসেবে, করোনার কারণে বাংলাদেশে চাকরি হারানোর তালিকায় যুক্ত হতে পারেন অন্তত দেড় কোটি মানুষ। এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত দেড় কোটি মানুষ কর্মচ্যুত হচ্ছেন বা হতে যাচ্ছেন। এটা বাংলাদেশের জন্য খুবই খারাপ খবর। এই দেড় কোটি মানুষ চাকরি হারালেও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে অন্তত ৫ কোটি মানুষ (প্রতি পরিবারে গড়ে ৪ জন করে সদস্য)। দেড় কোটির মধ্যে অধিকাংশই ইতোমধ্যে বেকার হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, গার্মেন্টস, ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স ও সরকার এই চারটি খাত ছাড়া বাকি সবই ইনফরমাল (অনানুষ্ঠানিক)। করোনায় ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) কর্মজীবী ছাড়া আর সবাই এখন বেকার। বেকারের এই সংখ্যা দেড় থেকে দুই কোটি। তিনি বলেন, গত ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশে যে অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়েছে, এর ফলে যারা হোটেল- রেস্তরাঁ, নির্মাণ খাতের মতো অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, সেসব খাতে শ্রমিকরা দীর্ঘদিন বেকার বসে রয়েছেন। আমেরিকাতে ১৭ মিলিয়ন মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। একই সময়ে বাংলাদেশেও ১২ থেকে ১৩ মিলিয়ন মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এদিকে বাংলাদেশ গার্মেন্টস এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন (বিজিআইডব্লিউএফ), বাংলাদেশ মুক্ত গার্মেন্ট শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশন (বিআইজিইউএফ) এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (বিসিডব্লিউএস) বলছে, এই কয়েক দিনে প্রায় ১০ হাজার পোশাক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। সংগঠন তিনটির পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের এই মহামারীর সময়ে মালিকরা ঢাকা, আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পোশাক কারখানা প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই বা কর্মচ্যুত করেছে। প্রতিদিনই কোনও না কোনও কারখানার শ্রমিক ছাঁটাই বা কর্মচ্যুতির শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, করোনার কারণে ব্যবসা বাণিজ্যের ওপর যত প্রভাব পড়বে, শ্রম বাজারের ওপরও এর ততটাই প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে ৩ কোটি ৪০ লাখ গরিব মানুষ আছে। তাদের মধ্যে পৌনে দুই কোটি মানুষ হতদরিদ্র। এর মধ্যেই বিশ্বব্যাংক একটি পূর্বাভাসে বলেছে বাংলাদেশে এই বছর প্রবৃদ্ধির হার ২ থেকে ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ হতে পারে। স্বাস্থ্য ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের মধ্যে এখন বেশ ভয় কাজ করছে। কারণ এটা তো অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে সেইসঙ্গে মৃত্যুও। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা। সব মিলিয়ে মানুষের বাড়ি ফেরার খুব একটা তাড়া নেই। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো, সংক্রমণ ঠেকাতে করোনা প্রতিরোধে সরকারীভাবে গঠিত জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে ঈদযাত্রায় গণপরিবহন চলার অনুমতির বিষয়ে সরকারকে বুঝে শোনে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কারণ ছোঁয়াছে ভাইরাস সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটে গণপরিবহন থেকেই। বাস্তবে এ নিয়ে কোন রকম হ্রাস টানার চিন্তা হয়নি। তবে ঈদ উপলক্ষে রেলপথে ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ থাকছে। রেলপথ মন্ত্রী মোঃ নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, এবার ঈদ উপলক্ষে রেলওয়ের আলাদা কোন আয়োজন নেই। ঈদকে সামনে রেখে যাত্রীর চাপ বাড়লেও রেলওয়ে কোন বাড়তি যাত্রী পরিবহন করবে না। বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেভাবে চলছে ঈদেও একইভাবে ট্রেন চলবে। মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমানে যে কয়টি ট্রেন চলছে ঈদের মধ্যেও সে ক’টি ট্রেন চলবে। বিশেষ ট্রেন বাড়ানো হবে না। সরকার ঈদ উপলক্ষে মানুষের গ্রামের বাড়ি যাওয়াকে নিরুৎসাহিত করছে। কাজেই আমরা ট্রেন বাড়াব না। রেলপথ মন্ত্রী করোনা সঙ্কট থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য যে যেখানে আছে সেখানে থাকার আহ্বান জানান। তাই এ বছর ট্রেনের অগ্রিম টিকেটও ছাড়া হচ্ছে না। অনলাইনে নিয়মিত টিকেট কেনা যাবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, এখনও করোনার ঝুঁকি কমেনি। এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে গণপরিবহনে চলাচল করা মোটেও নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা থাকলেও আমরা তা শতভাগ পালন হতে দেখিনি। ঈদের সময় এই বিষয়টি যাত্রী চাপের কারণে আরও ঢিলেঢালা হতে পারে। ফলে সংক্রমণ বাড়তে পারে। এরসঙ্গে পশুর হাটও করোনা সংক্রমণ বাড়াতে পারে। তিনি বলেন, কিছু মানুষ করোনার বিষয়ে অনেক সচেতন একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। করোনার বিষয়টি মাথায় রেখে এবার হয়ত অনেকে বাড়ি যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাই চারপাশে এখনও ঈদের সাজ তৈরি হয়নি। দেখা যাচ্ছে না ঘরে ফেরার তারা। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঈদে বাড়ি না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে অপর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেলিন চৌধুরী বলেন, আর্থিক সঙ্কট, স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে হয়ত এবারও অনেকে ঈদ স্ব স্ব স্থানে উদযাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এটা সত্যিই দেশের জন্য ইতিবাচক দিক। তিনি বলেন, যাদের নিতান্তই বাড়ি ফেরার তাগিদ আছে তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়িতে চলাচল করতে হবে। তবে এবার সব পথেই যাত্রী চাপ কম থাকবে। নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, অন্যান্য বছর শুধুমাত্র নৌপথেই ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি ফিরেন। এছাড়া আকাশ-সড়ক ও রেলপথ তো আছেই। সার্বিক সঙ্কট বিবেচনায় মনে হয় মানুষের বাড়ি ফেরার তাড়া খুবই কম। হয়ত ঈদের দুই থেকে তিনদিন আগে কিছুটা চাপ বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারে প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা ভাল নেই। এরসঙ্গে মালিকরাও ভাল আছে বলা যাবে না। গণপরিবহন চলাচল করলেও যাত্রী সঙ্কট চরমে। ঢাকাসহ আন্তঃজেলা কোন রুটেই ঘরে ফেরা মানুষের চাপ তৈরি হয়নি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে পরিবহন সেক্টর প্রস্তুত বলে জানান তিনি। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, টার্মিনালে যাত্রী নেই। বেশিরভাগ বাস তিন ভাগের একভাগ যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করছে। এখনও ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের চাপ তৈরি না হলেও আগামী সপ্তাহে কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। তাছাড়া আর্থিক সঙ্কটের কারণে শ্রমিকদের একটি বড় অংশ এবার ঢাকাতেই ঈদ করবেন।
×