ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত খাত সংস্কার শুরু

পুরনো বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ হচ্ছে

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ২৫ জুলাই ২০২০

পুরনো বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ বিদ্যুত খাত সংস্কারের বড় উদ্যোগ বাস্তবায়ন শুরু করেছে সরকার। দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়নে পুরাতন কেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) গত সপ্তাহে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) বরিশাল, বাঘাবাড়ি এবং হরিপুরের কয়েকটি বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। পুরাতন কেন্দ্রের জন্য উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির অভিযোগ ছিল পিডিবির বিরুদ্ধে। তবে উৎপাদন ঠিক রাখতে এসব কেন্দ্র বন্ধ করা যাচ্ছিল না। সরকারের এই উদ্যোগকে বিদ্যুত খাত সংস্কারের বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বিইআরসি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আদেশে পিডিবির ১৯৪ মেগাওয়াট পুরাতন কেন্দ্র বন্ধের আদেশ দেয়। গত ৩০ জুনের মধ্যে এসব কেন্দ্র বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এছাড়া বিদ্যুত কেন্দ্রের আয়ুষ্কালের হিসাব-নিকাশ করে কোন কেন্দ্র কখন অবসরে যাবে তার একটি তালিকাও জমা দিতে আদেশ দেয়া হয়। সূত্রগুলো বলছে দেশে বরাবর উৎপাদন ক্ষমতা কম থাকাতে অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পরও বিদ্যুত কেন্দ্র চালানো হতো। জোড়াতালি দিয়ে বিদ্যুত কেন্দ্র চালাতে গিয়ে উৎপাদন খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত না। বিইআরসির আদেশ অনুযায়ী পিডিবি কি ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাইলে পিডিবি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, বরিশাল-৪০ মেগাওয়াট, বাঘাবাড়ি ২৮ মেগাওয়াটের তিনটি ইউনিট এবং হরিপুরের ৬৪ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। তবে ঘোড়াশাল থেকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বিদ্যুত সরবরাহ নেয়। সেখানের কেন্দ্রটি আপাতত বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাহলে ভোল্টেজ লেভেলে সমস্যা হবে। সেখানে পিজিসিবি একটি সাবস্টেশন নির্মাণ করছে। ওই সাবস্টেশন চালু হওয়ার পর কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়া হবে। আর সিলেটের একটি কেন্দ্র পুরাতন হলেও উৎপাদন খরচ কম হওয়াতে আপাতত বন্ধ করা হচ্ছে না। বিইআরসির আদেশে সিলেট ২০ মেগাওয়াট, ঘোড়াশাল ১ ও ২ নম্বর ইউনিট ১১০ মেগাওয়াট এবং হরিপুর ১ ও ২ নম্বর ইউনিট ৬৪ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে বলা হয়। সব কেন্দ্রই ৮০’র দশকে বা তারও আগে নির্মিত। এখান কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্র যত বেশি পুরাতন হয় ততই এর জ্বালানি খরচ বাড়ে। অর্থাৎ নতুন কেন্দ্রের চেয়ে দক্ষতা কমতে শুরু করে। এছাড়া কেন্দ্রের সংস্কার ব্যয়ও বেড়ে যায়। যাতে করে কেন্দ্রটির গড় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তিনি মনে করেন নির্ধারিত সময়ের পর আর কোন কেন্দ্র চালানো উচিত নয়। বিদ্যুত খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে অনেক দিন থেকেই পুরাতন কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। রেন্টাল এবং আইপিপি বিদ্যুত কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর একটি একটি করে বন্ধ করে দেয়া গেলেও। সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রের বেলায় সেই নিয়ম বাস্তবায়ন করা কঠিন হচ্ছিল। এখন উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়াতে এটি করা সহজ বলে মনে করা হচ্ছে। পিডিবি সূত্র বলছে ঘোড়াশাল ১ ও ২ নম্বর ইউনিটটি দেশের সব থেকে পুরাতন বিদ্যুত কেন্দ্র। দুটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ১১০ মেগাওয়াট হলেও এখন যা ৮৫ মেগাওয়াটে নেমে এসেছে। কেন্দ্রটি এখন ৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করছে। হরিপুর গ্যাস টারবাইনের একটি ইউনিট আগেই বন্ধ করা হয়েছে। আর একটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৩২ মেগাওয়াট হলেও এখন যা নেমে এসেছে ২০ মেগাওয়াটে। কেন্দ্রটি অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকে। তবে সিলেটের ২০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা এখন ১৯ মেগাওয়াট। কেন্দ্রটি ১৯৮৬ সালে নির্মাণ করা হয়। সব মিলিয়ে দেশে ২০ হাজার ৬১৮ মেগাওয়াট গ্রিড সংযুক্ত বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। আর বাইরে আরও তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে শিল্প মালিকরা। কিন্তু গ্রিড সংযুক্ত বিদ্যুতের চাহিদা ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে ওঠা নামা করে। অর্থাৎ এখন পিডিবির হাতেই অলস কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ৪০ ভাগ। এই পরিস্থিতিতে সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে ব্যয় সংকোচন সম্ভব। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, কোন রেন্টাল কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের চুক্তি আর নবায়ন করবে না সরকার। তবে ঢাকার কাছে কোন কোন কেন্দ্রকে নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পেমেন্ট ভিত্তিতে রাখা হতে পারে। এই কেন্দ্রগুলো থেকে কেবল বিদ্যুত কেনা হলেই টাকা দেয়া হবে। এখনের মতো আর ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পাবে না। বেসরকারী খাতের কেন্দ্রগুলোকে অবসরে পাঠানোর জন্য ইতোমধ্যে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ওই তালিকা ধরে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে কেন্দ্রগুলোতে অবসরে পাঠানো হবে।
×