ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেপ্টেম্বরে মোহামেডানের নির্বাচন

প্রকাশিত: ২১:১১, ২৫ জুলাই ২০২০

সেপ্টেম্বরে মোহামেডানের নির্বাচন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্লাবটির বয়স ৮৪। দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। ক্লাবটির নিকনেম ‘ব্ল্যাক এ্যান্ড হোয়াইট’। এই দীর্ঘ সময়ে ক্লাবটি জিতেছে ৪০টির মতো শিরোপা। ফুটবলপ্রেমীরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কোন্ ক্লাবের কথা বলছি। হ্যাঁ, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। আগের মতো জৌলুস আর নেই ক্লাবটির। ভগ্নপ্রায়, ক্ষয়িষ্ণুু শক্তি তারা। সর্বশেষ লীগ জিতেছে ১৮ বছর আগে। আর সর্বশেষ শিরোপা জিতেছে ছয় বছর আগে (স্বাধীনতা কাপ)। এমনিতেই দুরবস্থা, তার ওপর গত বছর বহুল আলোচিত ‘ক্যাসিনো-কাণ্ড’তে ক্লাবের বারোটা বেজে যায়। মান-মর্যাদাও প্রায় ধুলোয় মিশে যায়। সেই অবস্থা থেকে কোনমতে ঘুরে দাঁড়ায় ক্লাবটি মাঝারি শক্তির দলগঠন করে যার নেপথ্যে ছিলেন ক্লাবের সাবেক তারকা ফুটবলাররা। তবে করোনা মহামারীর জন্য দেশের ফুটবলের মতো স্থবির হয়ে পড়ে মোহামেডানের ফুটবলও। খেলার পাশাপাশি স্থগিত হয়ে পড়ে ক্লাবের নির্বাচনও। গত এপ্রিলে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবের। অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। মোহামেডানের নির্বাহী কমিটির পরিচালক মনজুর আলম মঞ্জু জানান, ‘আসছে সেপ্টেম্বরেই নির্বাচনের নতুন সিডিউল ঘোষণা হতে পারে।’ নির্বাচনের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া মোহামেডান কর্তৃপক্ষ চায় দ্রুত সম্পন্ন হোক কার্যক্রম। কারণ ক্লাব পরিচালনার জন্য নির্বাচিত কমিটি জরুরী হয়ে পড়েছে। যদিও বাতিল হওয়া মৌসুমে তারুণ্যনির্ভর দল গড়েও ফুটবলে মোহামেডান মন্দ খেলছিল না। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এ ক্লাবকে চেনারূপে ফিরিয়ে আনতে যার যার দায়িত্ব বুঝে নেয়া দরকার। ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব স্থাপিত হয় ১৯৩৬ সালে ঢাকার হাজারীবাগে। এটি কলকাতা মোহামেডানের ঢাকাস্থ শাখা হিসেবে ঢাকার মুসলিম সমাজে ক্রীড়া জাগরণ সৃষ্টি করে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে ঢাকার ক্রীড়াঙ্গনে এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। এই ক্রান্তিকালে কলকাতা মোহামেডানের বিখ্যাত ফুটবলার মোহাম্মাদ শাহজাহান ঢাকায় চলে আসেন। তিনি ঢাকা মোহামেডানের দায়িত্ব নেন। তিনি ঢাকা মোহামেডানকে সুসংগঠিত ও পুনর্গঠিত করেন। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ঢাকার ফুটবলে একক প্রাধান্য ছিল ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের। ১৯৫৬ সালে ওয়ান্ডারার্সের কিছু তারকা ফুটবলার ও ক্লাব কর্মকর্তা ঢাকা মোহামেডানে যোগ দেন। এরপর ঢাকা মোহামেডান ধীরে ধীরে ঢাকার ফুটবলে প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। ১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা লীগে রানার্সআপ হয়। ১৯৫৭ সালে প্রথমবারের মতো লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়। একই বছর তারা স্বাধীনতা দিবস ফুটবল টুর্নামেন্ট ও চ্যাম্পিয়ন হয়। পরবর্তীতে মোহামেডান ক্রিকেট, হকি, ভলিবল, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, জিমন্যাস্টিক্স ইত্যাদি খেলাতেও অসংখ্য শিরোপা জয় করে। তবে ২০০২ সালের পর থেকেই সাংগঠনিক অদক্ষতা ও দুর্বলতার কারণে মোহামেডান ফুটবল দলের শক্তি হ্রাস পেতে থাকে। ২০১৯ সালের লীগে একটি অগৌরব এবং লজ্জার রেকর্ড গড়ে তারা। সেটি হচ্ছে নিজেদের লীগ ইতিহাসে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ৯টি ম্যাচে হারার অগৌরবের রেকর্ড। সর্বশেষ ২০০২ সালে লীগ জেতে মোহামেডান। যদিও আশ্চর্যের ব্যাপার- ১৮ বছর ধরে লীগ না জিতেও আজও তারা পরিসংখ্যানের বিচারে ঢাকা লীগের সর্বাধিক ১৯ বারের চ্যাম্পিয়ন। গত একযুগ ধরে ঈর্ষণীয় সাফল্যের মুখ দেখা আবাহনী এতবার লীগ জিতেও তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে এখনও টপকাতে পারেনি। তাদের লীগ শিরোপা সংখ্যা ১৭। অর্থাৎ মোহামেডানের চেয়ে এখনও দুটি কম।
×